আমার ভাতিজা আর বিড়ালের ভাইবোন - ১
আমার ভাতিজা আর বিড়ালের ভাইবোন - ২
আমার ভাতিজা আর বিড়ালের ভাইবোন - ৩
৪.
আজ শুক্রবার। অর্থাৎ ভাবী এসে গিয়েছে। তিনদিন মাত্র হল ভাবী এসেছে। অথচ তার সাথে আমার খুব ভাব হয়ে গিয়েছে। বিড়ালের সাথেও।
ভাবী এর মধ্যেই সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন। আশ্চর্য গুণ ভাবীর। সত্যি ভাইয়ার পছন্দের তুলনা হয় না।
এখন আমি টিভি দেখছি। ভাবী রান্নাঘরে।
আমি অবশ্য ভাবীকে সাহায্য করি। তবে কার্টুনের সময় না। কার্টুন শেষ হলেই রান্নাঘরে যাব। ভাবীর সাথে আমি খুব গল্প করি। মনেই হয় না যে সে আমার ভাবী।
মনে হয় আমার বান্ধবী। এদিকে বিড়ালগুলিও তাদের নাম শিখে গেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ভাইয়া বিয়ের আগেই নাম শিখিয়ে ফেলেছে। কার্টুন এখন শেষ। আমি রান্নাঘরে ভাবীর কাছে গেলাম।
ওহ্! কি অবস্থা! ভাবীকে বিড়ালগুলো রান্নাই করতে দিচ্ছে না। আমি বললাম,
-"ভাবী, ওদেরকে ধমক-ধামক দিতে পারো না? এত নরম হলে কি চলে?"
--"আমি ধমক দিতে পারব না, তুই এদেরকে নিয়ে যা তো। "
-"এ্যাই, সাইমন! ব্র্যানটন! মিল্টন! নিউটন! চার বিল্লী মেরে সাথ আও, জলদি। "
বিড়ালগুলো মিঁউ মিঁউ করতে করতে চলে এল। আমি ফ্রিজ থেকে অর্ধেক পিস কেক বের করে খেতে দিলাম।
এমন সময় দরজায় কে যেন দড়াম দড়াম শব্দ করতে লাগল। আমি তাড়াতাড়ি খুলে দিলাম। ভাইয়া বাজার নিয়ে এসেছে। ঘরে ঢুকে বাজারের ব্যাগ মেঝেতে ফেলেই হাঁপ ছাড়ল। আমি আর ভাবী বাজার গুছাতে আরম্ভ করলাম।
বিড়ালগুলো আবার পায়ের কাছে এসে মিঁউ মিঁউ করতে লাগল। বুঝলাম অর্ধেক কেকে পেট ভরেনি। বাকী অর্ধেক ফ্রিজ থেকে বের করে বাগানে খেতে দিলাম। ওটাও যদি শেষ করে আরও চায় তাহলে ব্রেকফাস্ট হিসেবে আর কিছু দিব না। ভাবী এক সময় বলল,
-"দ্যাখ্ তো বিড়ালগুলো কী করছে?"
--"দাঁড়াও দেখে আসছি।
"
বাগানে গিয়ে দেখি তারা নেই। আমার ঘরে ঢুকে দেখি সাইমন আমার বিছানার একপাশে চুপচাপ শুয়ে গা চাটছে আর বাকী তিনজন মারামারি করছে। আমি ভাবীর কাছে বললাম,
-"নাসের ভুলুরা কুস্তি লড়ছে। "
--"ভালো, কার বিছানায়?"
-"আমার। "
--"তোর বিছানাই ওদের পছন্দ।
কেন বল্ তো?"
-"জানি না বাপু, আমি তো আর বিড়াল নিয়ে গবেষণা করি না। "
ভাইয়া হঠাৎ কোত্থেকে বলে উঠল,
--"গবেষণা করিস না? তুই তো সারাদিনই ওদের নিয়ে পড়ে থাকিস। "
-"হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তো করিই, আর বাড়ীর সব কাজ কম্ম তুমি করে দাও, তাই তো?"
ভাইয়া চুপ করে গেল। কারণ নিউটন কোন ফাঁকে যেন কুস্তি ছেড়ে ভাইয়ার বিছানায় উঠেছে এবং ইয়া ছেড়ে দিয়েছে।
ভাইয়া কিছুক্ষণ দেখে চিৎকার করে উঠল,
-"রীপা! তুই তোর বিড়ালগুলোকে বাথরুম সারবার ট্রেনিং দিস নি? আমি তো নাম শেখালাম, এখন তুই অন্যসব ট্রেনিং দিবি না?"
--"আমি তো দিয়েছিই, সবাই ঐ ট্রেনিং মত কাজ করে, কিন্তু নিউটনই মাঝে মাঝে এরকম করে।
অবশ্য নিউটন প্রতিবারই তোমার বিছানায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। এতে আমার কিছু করার নেই। কী বল ভাবী?"
ভাবী একটু হেসে উঠে গিয়ে বিছানার চাদর নিয়ে ধোয়ার জন্য রাখল আর তোষকটা রোদে দিল।
ভাইয়া বলল,
--"ওফ্! একটু রেস্ট নিব তারও জো নেই। এখন আমি শুই কোথায়?"
-"আমার বিছানায় শোও।
ওখানে তো বিড়ালরা ইয়ে টিয়ে করে না। " আমি বললাম।
--"তোর বিছানায় তো সারাক্ষণই বিড়ালরা থাকে। বলা যায় না, যদি ইয়ে করে। "
-"ভাইয়া, সব বিছানা তো একরকম না।
আমার বিছানাটা বিড়ালের কাছেও বিছানা। আর তোমার বিছানাটা বিড়ালের কাছে ল্যাট্রিন। "
ভাইয়া রাগে গজ গজ করতে করতে আমার বিছানা থেকে মিল্টন, ব্র্যানটন আর সাইমনকে নামিয়ে দিয়ে নিজে শুয়ে পড়ল। আমি আর ভাবী হি হি করে হাসলাম।
৫.
ভাবী বাসায় এসেছে প্রায় চার মাস হয়ে গিয়েছে।
এর মধ্যে বিড়ালগুলোও অনেক বড় হয়েছে। ঐ হুলোটা আর আসেনি। তাই সাইমনেরও বাচ্চা হয়নি। এখন আবার একটা মুশকিল হয়েছে। ব্র্যানটন, মিল্টন আর নিউটন - এদের তিনজনের কে ছেলে কে মেয়ে কিছু জানি না।
ভাবীকে জিজ্ঞেস করতে বলল ব্র্যানটন আর মিল্টন ছেলে, নিউটন মেয়ে। আমি তাই বিশ্বাস করে নিলাম। আমারও তাই মনে হয়। আমি ভাবীকে বললাম,
-"তাহলে পাড়ায় দুটো হুলো বিড়াল হল। "
--"হ্যাঁ, হল তো।
কিন্তু তুমি তিনজনের নামই ছেলেদের রেখেছ। "
-"অসুবিধা কী? সাইমনও তো ছেলেদের নাম। নিউটনকে না হয় মিস নিউটন বলব। "
--"হ্যাঁ, তা বলা যায়। আর--"
ভাবী কথা শেষ না করেই হঠাৎ বাথরুমের দিকে দৌড় দিল।
কী হল কে জানে। আমিও গেলাম। দেখি ভাবী বমি করছে। আমার খুব খুশি লাগছে। আমি তাহলে ফুফু হয়ে যাচ্ছি।
কী মজা!
হঠাৎ আমার ঘরের জানালায় কিসের শব্দ হল। আমি দৌড়ে গেলাম। ঘরের মধ্যে তিন ভাই-বোন কুস্তাকুস্তি করছে। সাইমন নেই। জানালায় গিয়ে দেখি সেই হুলোটা।
তাকে দেখেই সাইমন দৌড়ে যেতে গেছে, তাই জানালায় বাড়ি খেয়ে শব্দ হয়েছে। ভালোই হল, আমার ভাতিজা হবে আর নিউটন, ব্র্যানটন আর মিল্টনের আরও ভাইবোন হবে।
সমাপ্ত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।