আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসপাতালে ৭২ ঘন্টা.....

যে ব্যথা দেয়,তারও তো ব্যথা থাকতে পারে-মাটির ময়না ভেবেছিলাম প্রথম লেখাটি মজার কোনোকিছু নিয়ে লিখব,কিন্তু এটা এমনই একটি ঘটনা যা অপ্রীতিকর হলেও না লিখে পারছি না। ঘটনাটা এমন,কলেজ ছুটিতে ঢাকা থেকে বাসায় এসেছি। প্রচন্ড পেটেব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করালাম। রিপোর্টে "অ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প" ধরা পড়ল ।

ডাক্তার ক্লিনিকে ভর্তি হবার পরামর্শ দিলেন। শহরের তথাকথিত সবচেয়ে নামকরা হসপিটালে ভর্তি হলাম। ওখানে তিনদিন ছিলাম। সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থাসম্পন্ন রুমটাই নেয়া হয়েছিল!তারপরও দেখা গেল, বেসিনের পাইপ খোলা,বাথরুম অস্বাস্থ্যকর। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিআকর্ষণ করা হলেও অবস্হার খুববেশি উন্নতি দেখা গেল না।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়,আসল কথাতো এখনও বলাই হয়নি। আমি যে হসপিটালে গিয়েছিলাম সেখানে সেবার মান তো একটু বেশিই ভালো!তাই সেবাদানের ক্ষেত্রেও । ডাক্তার নার্সদেরকে যেটা করতে বলে তার উল্টোটা করতেই যেন তাদের আগ্রহ বেশি। আসলে এজন্যই বোধহয় বলা হয়, 'অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী' । ডাক্তার স্যালাইনের মাত্রা ঠিক করে দিয়ে যাবার পরে কিছুক্ষণ পরে তারা আমার রক্তচাপ দেখতে এসে,তাদের জ্ঞান-গরিমা প্রকাশের জন্যই হয়ত মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়ে যেত।

ফলাফল, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মাথাব্যাথা,বমিভাব ইত্যাদি শুরু হয়ে যেত । (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,আমি নিজে মেডিকেল ছাত্রী। )আমি তাদেরকে ভালোভাবে বললেও তারা তা কানে তুলত না। পরে ডাক্তার আসলে সমস্যাগুলো তাকে বললে বিশিষ্ট নার্সরা তা অস্বীকার করত। একদিন রাত ২:৩০ এর দিকে নতুন স্যালাইন দেবার জন্য নার্স আসল,তার কানে তখন মোবাইল ফোন ছিল।

সে খুব আয়েশ করে কথা বলছিল,এমনকি স্যালাইন ঠিক করার সময়ও। ফলশ্রুতিতে,সিরিন্জ সরে গেলো,স্যালাইন পাস হচ্ছিল না। সেটা ঠিক করার জন্য অপর পাশের ব্যাক্তিকে বলে সে ফোন রাখল। রাখার পরপরই আবার ফোন আসল। কোনরকমে ঠিক করে সে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল।

এতো গেল আমার দুর্ভোগের কথা,আমি যেদিন বাসায় আসলাম,সেদিনের ঘটনা। পরদিন বিকাল। আমার পাশের রুমে চিৎকারের কারণ হিসাবে জানলাম,ঘন্টাখানেক আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এক রোগীকে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর দেখি নার্সদের দৌড়াদৌড়ি। আমার রুমে এসে জিজ্ঞাসা করে অক্সিজেন আছে কিনা।

উত্তরে না বলায় অন্য রুমে যায়। তারপর কি হয়েছিল জানি না। ৩০ মিনিট পর লোকটি মারা গিয়েছিল । আরেকটি বিষয়,তা হল-হসপিটালটির নিজস্ব ফার্মেসী থাকলেও তা রাত ১০ টায় বন্ধ হয়ে যায় আর সকাল ৯ টায় খোলে। এতে করে আমি হয়তো খুববেশী ভোগান্তির স্বীকার হইনি,কিন্তু জরুরি অবস্হার রোগিদের কি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা যাইহোক হসপিটালে ভর্তির আগে হসপিটালটি সম্পর্কে আমার নিজেরও যথেষ্ট ভালো ধারণা ছিল।

আর এখন!আমি নিজেই যে অভিজ্ঞতার শিকার,অসচেতন দুস্থ রোগীদের কথা চিন্তা করলেই শিউরে উঠি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।