আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোকটা কি করছে?!

ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ... আমি তখন এম পি এইচ করছি; ব্র্যাকের সাভার টার্ক এ থাকতে হয়। প্রাই বিদেশ থেকে অতিথিরা আসেন- কেউ ক্লাস নিতে, কেউ পরিদর্শনে আবার কেউ ক্লাস করতে। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলো হেইলি। হেইলি ম্যাকএকার্ন। গ্লোবাল হেলথ এ এম পি এইচ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে ইন্টার্ন করতে।

ফুটফুটে, স্লিম, চটপটে মেয়েটা এসেই একা একা ক্যাম্পাস ঘুরতে বেরিয়ে পড়ল। আমরাও দেখি কি দেখিনা ভাব করে আসে পাশেই বিচরণ করতে লাগলাম; কেউ সাহস করে এগিয়ে কথা বললনা। আমি এমনিতেও পাত্তা পাবনা; তাই ওই রাস্তায় হাঁটার দুরাশাও করলামনা। লাঞ্চ টাইম শেষে তাড়াতাড়ি ক্লাসে ফিরে এসে দেখি হেইলি। অবলিলায় ক্লাস থেকে আমাদের একটা চেয়ার টেনে বের করে রোদে বসে চেয়ারে দোল খাচ্ছে; হাতে একটা বই।

আড় চোখে দেখে নিলাম আগাথা ক্রিস্টির 'ব্ল্যাক কফি'। আমার প্রিয় একটা বই, তাই অগ্র পশ্চাত না ভেবেই অনেকটা স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে কথা বলা শুরু করলাম। হেইলি পছন্দ করে বই পড়তে, আর পছন্দ করে ঘুরতে। মাত্র চারদিন হল ঢাকায় এসেছে, এখনো কারো সাথেই পরিচয় হয়নি; কোন জায়গা দেখাও হয়নি; তাই খুব দু:খ তার মনে। বললাম, উইক ডে তো সাভারেই থাকি, উইক এন্ডে ঢাকায় ফিরলে ওকে কিছু জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতে পারি।

সেও বেনী দোলানো কিশোরীর মত সানন্দে রাজি হয়ে গেল। উইক এন্ডে আমরা রিকশা নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরি; সব কিছুতেই ওর কৌতূহল। গভীর রাতে একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে চায়ের দোকানদারের সাথে গল্প জুড়ে দেয়া, রিক্সাঅলার রিকশা টানতে কষ্ট কেমন হয়, তাকে এক মিনিট একটু চালাতে দিবে কিনা- এসব অনুষঙ্গ নিয়েই কাটতে লাগল হেইলির ঢাকা ভ্রমণ। সঙ্গে সাক্ষি গোপাল হিসেবে আমি। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন কার্জন হল ক্রস করে নাজিমুদ্দিন রোড ধরে পুরান ঢাকার দিকে চলেছি।

বড় বড় চোখ মেলে হেইলি যা পাচ্ছে তাই খুঁটিয়ে দেখছে। আর যথারীতি আমাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে সে আমাকে টেনে ধরে জিজ্ঞেস করা শুরু করল 'What..what that man is doing over there?' আমি ওর প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে দোকানে থরে থরে সাজানো বাকরখানির ইতিহাস বানিয়ে বানিয়ে বলতে শুরু করি। ওর স্বাদ গন্ধ এসব নিয়ে অতিরঞ্জিত বর্ণনা দিয়ে হেইলির মন এবং মুখ ঘোরাতে চেষ্টা করি। কিন্তু হেইলি নাছোড়বান্দা।

এঁকে বেঁকে, রিকশার হুড ধরে শরীরের অর্ধেক রিকশার বাইরে এলিয়ে, হুড়ের পেছনের ফাঁকা অংশ দিয়ে গলা বাড়িয়ে দিয়ে সম্ভাব্য, অসম্ভাব্য নানা অঙ্গ ভঙ্গিমায় সে আবিষ্কার করার চেষ্টা করে লোকটা ওভাবে উবু হয়ে কি করছে। বুঝতে তার বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলনা। সামনেই একইরকম আরেকজনকে দেখা গেল ড্রেনের সামনে উবু হয়ে লুঙ্গি তুলে বসে আছে। সামনে দিয়ে অঝোর জলধারা বিপুল বিক্রমে ঝাঁঝালো গন্ধ উদগিরণ করতে করতে মিশে যাচ্ছে সেই ড্রেনের কালো জলে। অপ্রত্যাশিত দ্রততায় উত্তর পেয়ে যাওয়া হেইলি বেচারি বিহ্বলতায় গোলাপী হয়ে গেল।

আর আমি হয়ে গেলাম বেগুনী । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।