আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো কিন্তু এভাবে যে বৃষ্টি নেমে যাবে ভাবেনি নিনা। ভার্সিটি থেকে কাক ভেজা হয়ে সবে বাসায় ফিরলো সে।
অকারনেই বৃষ্টির উপর মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। ব্যাগে আজ ছাতা ছিলোনা আর আজই বৃষ্টি টা আসতে হলো। বাইরে থেকে এরকম কাক ভেজা হয়ে ফিরতে নিনার একদমই ভাল লাগেনা।
নিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সবার খুব আদরের।
তবে সবার এই আদরকে কখনো সে ব্যবহার করেনি আর দশটা ছেলেমেয়ে হলে যা করতো। কখনো প্রয়োজন ছাড়া অতি আবদার করেনি সে। বন্ধুসুলভ আচরনের জন্যে আত্নীয়-স্বজন এবং বন্ধু মহলে বেশ নাম রয়েছে নিনার।
ঘরে ঢুকে ভেজা কাপড় বদলে এককাপ লেবু চা হাতে নিয়ে জানালার পাশে বসে বসলো নিনা। এখনো বৃষ্টি পুরো পুরি কমেনি।
সিজন কেমন বদলে গেছে। এসময় সে কখনো এরকম টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়তে দেখেনি। হুটহাট ঝড়তুফান এসে ঝটপট সব ফকফকা হয়ে যাবে তা না টিপ টিপ করে পড়ছেই...!! এই টিপ টিপ বৃষ্টি নিনার একদমই পছন্দ না। তবে এই মুহুর্তে কেন জানি খুব একটা খারাপ লাগছেনা, লেবু চা টার মতই। খুব পছন্দ না হলেও খারাপ না।
**************************
আচ্ছা বন্ধুরা বলে এরকম পরিবেশে নাকি মানুষ রোমান্টিক নয়তো উদাশ হয়ে যায়....সে কোনটা হয়েছে এই মুহুর্তে পশ্চিম দিকে মুখ করা হাফ রেলিংয়ের বারান্দায় দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ভাবছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতেপড়ুয়া আবির। সে এবার অনার্স শেষ বর্ষে। কিছুদিন পরেই ফাইনাল পরীক্ষা। লবিং করতে পারেনা বলে রেজাল্ট শিটে ফার্স্ট পজিশনটা তার নেই তবে সবাই জানে ফার্স্ট হওয়ার যোগ্যতা সেই রাখে। আবির নিজেও তা জানে।
আচ্ছা সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েটা....কি যেনো নাম...? নি...না...রাইট নিনা। রোজ একই বাসে আসা যাওয়া, একই স্টপেজ থেকে। কিন্তু কেন যেনো কারো সাথে কারো কোন কথা হয়েনি কখনো। হঠাৎ দু' একবার চোখাচোখি। ব্যাস ওই পর্যন্তই....! বাস থেকে নামলে বেশ কিছুটা পথ দুজনের একই থাকে তার পরে আলাদা হয়ে যায়।
নিনা বাস থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে হেটে যায়। আবির খুব অবাক হয়েছিলো। মেয়েদের কাছে সাধারনত ছাতা থাকে নিনার কাছে ছিলো না। হয়ত ছিলো...বের করেনি ভিজতে চেয়েছে বলে।
********************************
ফাঁকা রাস্তায় প্রথমে খারাপ না লাগলেও নিনা একটু পরেই বুঝতে পারে আবির তার পেছন পেছন আসছে।
খুব অস্বস্তি লাগছে তার এভাবে যেতে কিন্তু কিছু করার নেই। কোমড় ছাড়িয়ে যাওয়া চুলগুলো খুলে দ্রুত বাসার দিকে হাটা দেয় সে।
পেছনে তাকালে দেখতে পেতো আবিরের বিস্ময় ভরা চাহনি। এ যেনো জীবনান্দের বনলতা সেন কেও হার মানিয়ে ফেলেছে!! মেয়েটিকে মনে মনে এতদিন ভাল লাগলেও আজ মনে হচ্ছে ভালবেসে ফেলেছে। ভালবাসা কাকে বলে জানেনা আবির।
কিন্তু বার বার মনে হচ্ছে একেই চায় সে সারাজীবন হাত ধরে হাটার জন্যে।
******************************
আচ্ছা আবির ছেলেটা কেমন। আর দশটা ছেলের সাথে তুলনা করলে সবার চাইতে সে উপরেই থাকবে। সে কি তবে ছেলেটার....না না...ধ্যাত এসব কেন ভাবছে! সে না প্রেম-ভালবাসায় জড়াবে না....!!
*********~~~~~~~~***********~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~******~~~~~~~~~~~~~************
ভাইয়া আপনার দাওয়াত, আসবেন কিন্তু
~~ দাওয়াত? কিসের?
আমার বিয়ের। সামনের মাসের ৪ তারিখ।
আসবেন কিন্তু।
~~ ওহ! আচ্ছা। একটা কথা....
জ্বী, বলেন
~~ দাওয়াত তো মানুষ করে আপন বা কাছের.....
হাহ হাহ হা.....বুঝেছি কি বলবেন। দুটো বছর আপনি আমি একই বাসে যাতায়াত করেছি, একই এলাকায় থাকি। মনে করুন দুজনে বাসমেট ছিলাম।
সেই সুবাদেই....
~~ ক্লাসমেট, ব্যাচমেট, রুমমেট, বেডমেট শুনেছি কিন্তু....
বাসমেট শোনেননি তো? তাতেকি এবার তো শুনলেন। আসবেন কিন্তু। আজ আসি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আবিরের বুকের ভেতর কোথায় যেনো চিনচিনে একটা ব্যথার অনুভুতি হচ্ছে। মানুষ কত কিই না ভাবে।
কিন্তু ভাবনার মতো তো আর জীবনটা হয়না। এই যেমন ভেবেছিলো কলেজের চাকরীটা হয়ে গেলেই একটু গুছিয়ে নিনাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। চাকরীটাও হলো কিন্তু......নিজের অজান্তেই একটি দীর্ঘ শ্বাঃস বের হয়ে যায়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মুখে হাসি থাকলেও ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো নিনার, আবিরকে কার্ডটা দেওয়ার সময়। অনেক পরে বুঝেছে ছেলেটাকে সে ভালবাসে।
এবং আবিরও তাকে......কিন্তু ছেলেটা বলতে পারলো না। নাহ ওর কী দোষ। স্ট্যাবলিশ না হয়ে তো আর বিয়ে করতে পারবে না। ওর ফ্যামিলি থেকে আর একটু দেরী করে বিয়েটা দিলেই হয়তো.........মনের ভেতর একটা চাপা ক্ষোভ, অভিমান জমে আছে। আর তার জন্যেই সে আবিরকে দাওয়াতটা দিয়েছে।
দিগন্তে মিশে যাওয়া একঝাঁক পাখির দিকে তাকিয়ে আছে নিনা। এই মুহুর্তে দৃষ্টি চলে গেছে তারও ওপারে..............
থিম: মাহবুব ভাই । ধন্যবাদ দিতে হবে কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।