দেশের সাধারণ মানুষ আজ চরম আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত, সংঙ্কিত। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা অস্থির। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। গুম-খুন-লাশ-পুলিশ-ছাত্রলীগ এসবের ভয়ে নিরীহ মানুষ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। গৃহে অবস্থান করেও মনে শান্তি নেই।
এই বুঝি পুলিশ এলো! পুলিশ দেখলে আজ সাধারণ মানুষের পিলে চমকে উঠে! শুধু সাধারণ মানুষের কথা বলছি কেন, বিরোধী দলের রুই-কাতলারাও আজ পুলিশের ভয়ে দৌড়ের উপর আছে। পুলিশকে চাহিদা মতো ‘মাল’ না দিতে পারলে ‘পেইন্ডিং মামলায়’ জড়িয়ে নিরীহ গোবেচারাকেও জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে দেশ। এ অবস্থায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠলেও পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য নাকি মাশাল্লাহ দিন দিন তরক্কি লাভ করছে! একেই বলে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ!
কে রাজকার, কে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা কে রাজাকারের সন্তান, কে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তা তো আর কারো কপালে লেখা থাকে না। আর এ কারণেই আজ সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে আর ভাগ্য খুলেছে পুলিশের।
এমনকি শাহবাগীদেরও ভাগ্য খুলেছে। চাঁদা না দিলেই তুই রাজাকার! কোটি টাকার বাণিজ্যে শাহবাগের বড় হুজুররা একেকজন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ! সাধের সোনার বাংলাদেশে কার কপাল যে কখন খুলে আর কার কপাল যে কখন পুড়ে তা বুঝা মুশকিল। শাহবাগীদের বড় হুজুর রাজাকারের নাতি হয়েও আজ শাহবাগে বসে বাংলার উজিরে আ’লার মতো দেশবাসীর প্রতি ফরমান জারী করে! বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ভয় দেখায়! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাক্ষাৎ রাজাকার হয়েও আজ স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার সৈনিকদের চোখ রাঙ্গায়! বুঝেন ঠেলা!
একটু বুদ্ধিমান রাজাকারেরামুক্তিযোদ্ধার পুত্রের সাথে নিজ কন্যা বিবাহ দিয়ে কিংবা মুক্তিযোদ্ধার কন্যাকে পুত্র বধু করে ‘সেইফ মুডে’ চলে গেছে! অর্থাৎ তাদের আর ভয় নেই। আবার অনেকে মুজিবকোর্ট গায়ে জড়িয়ে আল্লাবিল্লা করে দিন পার করে দিচ্ছে। এদিকে অনেক রাজাকার পুঁজি ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাকে নিজ ব্যবসার পার্টনার বানিয়ে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে! কী তেলেসমাতি কারবার! কিন্তু যারা এই কাজটি করতে পারে নি তারা আছে মহাবিপদে।
সেই সাথে দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পড়েছে ভয়ঙ্কর গ্যাঁড়াকলে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও (যদি মাথায় টুপি আর মুখে দাড়ি থাকে)! এই গ্যাঁড়াকল থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় কি?
আমি বাসা থেকে তিন চাকার গাড়ি (যাকে আমরা সিএনজি বলি) দিয়ে অফিসে যাতায়াত করি। প্রায়শঃ দেখি রাজপথে দাড়িয়ে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে দেশ থেকে দূর্নীতি তাড়ানোর (?) মহড়া দেয়। টাকা দিলে আবার গাড়ী ছেড়ে দেয়! সরকারের খেয়ে পড়ে সুযোগ বুঝে হালকা-পাতলা চাঁদাবাজি আর কি! আবার মাঝে মাঝে দেখি কোনো কোনো সিএনজি না আটকিয়ে আদবের সাথে তাজিম করে ছেড়ে দেয়। একদিন আমার সিএনজিও এমন ছাড়া পেলো।
সিএনজির ড্রাইভারকে বললাম ভাই তোমাকে না আটকানোর হাকিকত কি? বীরের মতো বুক ফুলিয়ে গাল ভর্তি হাসি দিয়ে সিএনজির সামনের গ্লাসের বাম পাশে আটকানো একটি স্টিকার দেখিয়ে বললো, এই স্টিকারটি হলো আমার সুরক্ষা তাবিজ।
এ যেনো ইন্ডিয়ার সেই বিখ্যাত সুরক্ষা তাবিজ! যে তাবিজ বদ নজর থেকে মানুষকে রক্ষা করে (যার এ্যাড আমরা ইন্ডিয়ান চ্যানেলে দেখি)। তদ্রুপ এই স্টিকারটিও পুলিশের বদ নজর থেকে তার গাড়িকে রক্ষা করেছে! জানতে চাইলাম কোন হুজুর এ তাবিজ দিয়েছে। সে বললো, সরকার দলীয় বাস স্ট্যান্ড কেন্দ্রিক চাঁদাবাজ হুজুরগ্র“প। উপযুক্ত হাদিয়া দিয়ে এ স্টিকারটি তাকে নিতে হয়েছে।
এ স্টিকার নবায়ন যোগ্য। ফি বছর হাদিয়া দিয়ে এ স্টিকার নিতে হবে। মজার ব্যাপার হলো সরকার বদলানোর সাথে সাথে বাস স্ট্যান্ডের হুজুরগ্র“পও পাল্টে যায়! হাদিয়ার হিস্যা নাকি থানা পর্যন্ত যায়। একারণেই পুলিশ এ স্টিকারকে এতো তাজিম করে! স্টিকারধারী ড্রাইভারকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করে!
এ ঘটনার পর আমার মাথায় একটি আইডিয়া হাজির। তাহলে তো আমরা সাধারণ পাবলিক যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি তারা উপযুক্ত হাদিয়া দিয়ে সরকারী দলের যথাযথ বিভাগ থেকে ‘পাবলিক সেফটি কার্ড’ নিতে পারি অথবা সরকারী দল নিজ উদ্যোগে ইস্যু করতে পারে।
একটি কার্ড যদি ৫০০০ টাকা হাদিয়ার বিনিময়ে ইস্যু করা হয় তাহলে এই ষোল কোটি মানুষের দেশে সঙ্গত কারণে অন্তত ১০ কোটি মানুষের সেফটি কার্ডের প্রয়োজন হবে। এতে সরকারী দলের আয় হবে প্রায় ৫০০০ হাজার কোটি টাকা! মহাজোট সরকারের নজির বিহীন আর্থিক উন্নয়নের পরও আজস্র না লায়েক বনি আদম ৫০০০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কার্ড কেনার সামর্থ হয় তো রাখে না তথাপি তারা নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে কয়েকদিন না খেয়ে হলেও এ কার্ড ক্রয় করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এ সেফটি কার্ডের সম্মুখ ভাগে মহামহিম হানিফ, মায়া, কামরুল, টুকু এবং মখা আলমগীরের মতো বাঘা বাঘা নেতাদের চেহারার জলচাপ থাকতে পারে। এতে কার্ডের ফজিলত বা শান বৃদ্ধি পাবে এবং এ্যাকশান বা ক্রিয়া ভালো হবে। বিপদের সময় এই কার্ড পুলিশকে দেখালে পুলিশ সেলূট দিয়ে ছেড়ে দিবে! লগি বৈঠাধারী হিংস্র হায়েনাদেরকে দেখালে বাপ বাপ বলে পালাবে! সরকারী দল কার্ড ইস্যুর হাদিয়া আপদকালীন ফান্ডের মতো ‘মুছিবত ফান্ড’ নামক ফান্ডে জমা রাখতে পারে।
যাতে পরবর্তীতে তাদের মুছিবতের দিনে এ হাদিয়া কাজে লাগাতে পারে!
সুতরাং সরকারী দলের কাছে আমরা নিরীহ পাবলিক জোর দাবি জানাচ্ছি, উপযুক্ত হাদিয়ার বিনিময়ে অতিসত্বর ‘পাবলিক সেফটি কার্ড’ প্রবর্তন করুন। এ মহৎ কাজটি করে আমাদের বিপন্ন জীবনকে রক্ষা করুন। জাতি আপনাদেরকে ইহ জনমে তো সমীহ করে চলবেই শেষ বিচার দিনেও প্রণাম করবে এবং আপনাদেরকে যথাযথ বিনিময় দেওয়ার জন্য বিচার দিনের অধিপতি রহমানুর রাহিমের শাহী দরবারে ফরিয়াদ জানাবে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।