মিসেস জলি আমিনের আজ কী যেন হয়েছে। স্বামীকে ভারতের উদ্দেশ্যে বিদায় করে নিজের বেডরুমে প্রবেশ করার পর থেকে সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেলো। তিনি পুরোদমে হারিয়ে গেলেন সেই ঘোরলাগা জগতে।
এই জগতে প্রবেশ করার পর উনার বিবেক অচল হয়ে যায়। বুদ্ধি লোপ পায়।
মানসিকতায় বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে। তখন আর তিনি স্বাভাবিক মানুষ থাকেন না। অন্য মানুষ হয়ে যান। সম্পূর্ণ অন্য মানুষ।
আমিন সাহেব সরকারি কাজে আজ একটু দেশের বাইরে গেছেন।
বাইরে বলতে ভারতে। সাত সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সফরকারী দলের অন্যতম সদস্য তিনি। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের যাওয়ার কথা ছিলো। হঠাৎ করে উনার শরীর খারাপ করায় তিনি যাচ্ছেন না। উনার পরিবর্তে পররাষ্ট্র সচিব দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিশেষ স্বার্থ বিবেচনায় আমিন সাহেবকেও দলভুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করে এসেছেন। যাবার আগে আমিন সাহেব যখন বলেছেন,-
‘জলি, আজ দুপুরে একটু ভারত যেতে হচ্ছে আমাকে। ’
মিসেস জলি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘হঠাৎ ভারত?’
আমিন বললেন, সরকারি কাজ। ’
জলি বললেন, ‘ফিরবে কবে?’
‘আগামী পরশু, সন্ধ্যায়।
’
মিসেস জলি স্বামীর ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন। গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।
আমিন সাহেব বাড়ি থেকে বেরুনোর পরপরই পরিকল্পনাটা ফাইনাল করে ফেলেছেন জলি।
দুপুর না গড়াতেই শরীরে এক ধরণের জ্বালাপোড়া শুরু হলো তাঁর। বাথরুমে ঢুকে দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিলেন।
বেরিয়ে এসে এক মগ কফি খেলেন। মনটা স্থির হলো না। আস্তে আস্তে গিয়ে ঢু মারলেন রুহানের রুমে। রুহান বসে বসে পবিত্র পড়ছিলো। মিসেস জলিকে দেখে উঠে দাঁড়ালো সে।
‘মেম, হঠাৎ আপনি? কিছু বলবেন?’
কথা বললেন না জলি। তাকিয়ে রইলেন রুহানের দিকে।
রুহান বললো, ‘মেম, আপনাকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আপনার শরীর খারাপ না তো? ইজ এভরিথিং ওকে?’
মিসেস জলি বললেন, ‘রুহান তুমি একটু আমার রুমে আসো তো। ’
‘কেন মেম?’
‘কাজ আছে।
’
‘কী কাজ?’
‘আহ! আসোই না। এলেই তো দেখতে পাবে। ’
‘মেম, একটু পরে আসি। ’
‘কেন? একটু পরে কেন? এখন আসলে অসুবিধা কী?’
‘না, কোনো অসুবিধা নেই। ’
‘তাহলে চলে আসো।
’
‘মেম একটা কথা বলি?’
‘বলো। ’
‘বিশেষ কোনো কারণে আজ কি আপনার মন খারাপ?’
‘হতে পারে। ’
‘কারণটা কি আমাকে বলা যাবে?’
‘হ্যাঁ। ’
‘বলে ফেলুন। ’
মিসেস জলি বললেন, ‘হ্যাঁ, বলবো।
আজ আমি তোমাকে সব বলবো। বলতে যে আমাকে হবেই। বুকের মধ্যে জগদ্বল পাথর আর কতদিন বয়ে বেড়াবো। আজ আমি বোঝাটি নামিয়ে ফেলতে চাই। আজ আমি মনটি হালকা করে ফেলতে চাই।
অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই আমি। ’
রুহান বললো, ‘তাহলে বলে ফেলুন। দেখি আপনার জন্য আমি কিছু করতে পারি কি না। আপনার কষ্ট লাঘবে আমি যদি সামান্যতমও কাজে লাগতে পারি, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। সারা জীবন আপনি আমাকে দিয়েই গেলেন শুধু।
বিনিময়ে তো এখনো আপনার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। ’
মিসেস জলি বললেন, ‘তুমি আমা মমতার কথা স্বীকার করো?’
রুহান বললো, ‘কেন করবো না?’
‘তুমি আমাকে খুশি করতে চাও?’
রুহান আমতা আমতা করে বললো, ‘হ্যাঁ। ’
‘আমার প্রতি তোমার কৃতজ্ঞতা আছে?’
‘হ্যাঁ। ’
‘আমার জন্য সত্যিই কিছু করতে চাও তুমি। ’
‘অবশ্যই।
’
‘ঠিক আছে। আমি রুমে যাচ্ছি। তুমি আমার রুমে চলে আসো। বসে আলাপ করা যাবে। ’
‘মেম, এখানে আলাপ করলে হয় না?’
‘হয়।
হবে না কেন। তবে আমার রুমে যেতে কি তোমার সমস্যা আছে?’
‘না, সমস্যা নেই। ’
‘তাহলে এসো আমার সাথে। ’
মিসেস জলি রুহানের হাত ধরে হাটা শুরু করলেন তাঁর বেডরুমের দিকে। কিছু না বুঝেই রুহান অনুসরণ করছে তাকে।
কেমন জানি ভয় ভয় করছে রুহানের। মেম আজ এমন আচরণ করছেন কেন?
এমন নয় যে, মিসেস জলির বেডরুমে এর আগে আসেনি সে। তবে আজ কেন জানি ভীষণ ভয় করছে তার। মনে হচ্ছে আজ মিসেস জলির মানসিকতা একটু ভিন্ন। সে লক্ষ্য করেছে উনার চোখ দুটো লাল।
কথাবার্তাও অন্য টাইপের। সমস্যা কী?
আগামী কাল শেষ পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।