আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অটোগ্রাফ

এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই... পরিচালকের বাজিমাত নায়ক আজ অসহায়। পরিচালক থেকে প্রযোজক থেকে কেচ্ছাদার টিভি চ্যানেল থেকে বিপণনের চক্রব্যূহে তিনি শুধুই বন্দি এক চরিত্র। পুজোর পর্দায় এ ভাবেই অটোগ্রাফ দিলেন প্রসেনজিৎ। লিখছেন গৌতম চক্রবর্তী অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘অনুরণন’। অতনু ঘোষের ‘অংশুমানের ছবি’।

অভীক মুখোপাধ্যায়ের ‘একটি তারার খোঁজে’। বা গৌরব পাণ্ডের ‘শুকনো লঙ্কা’। গত চার-পাঁচ বছর ধরে টালিগঞ্জে অনেক পরিচালকই তাঁদের প্রথম ছবিতে আমাদের চমকে দিয়েছেন। তবে, এই সব ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’র ভিড়ে সিনেমাটিক সম্ভাবনায় সব চেয়ে উজ্জ্বল শ্রীজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘অটোগ্রাফ’। চিত্রনাট্যের প্যাঁচ-পয়জার, সম্পাদনা, গান, সিনেমা-ভাবনা সবেতেই অন্য প্রথমদের ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি! কী ভাবে? একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

‘অটোগ্রাফ’ ছবির গপ্পোটা ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গিয়েছেন। তরুণ পরিচালক শুভ (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) টালিগঞ্জের এক নম্বর নায়ক অরুণ চ্যাটার্জিকে (উত্তমকুমারের মতো অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় নন প্রসেনজিৎ) নিয়ে ‘আজকের নায়ক’ নামে একটা ছবি করছে। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির রিমেক! অরুণ ছবির অফারটা গ্রহণ করতেই শুভ সটান বাড়িতে। বান্ধবী শ্রীনন্দিতার (নন্দনা সেন) সঙ্গে সেখানে লিভ-ইন করে সে। এবং বান্ধবীর কোলে মাথা রেখে নিজের স্বপ্নের কথা বলে সে, “আই উইল গো টু দ্য টপ!” তখনই আমরা চমকে উঠি।

এই সংলাপ ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমকুমার বলেছিলেন। তা হলে? এ কি ইচ্ছাকৃত বিপর্যাস? শুধু নায়ক অরুণ চ্যাটার্জি নন, পরিচালক শুভও এই ছবিতে হয়ে উঠবে ‘আজকের নায়ক’? এই নিরুচ্চার বিপর্যাস যে কত! মনের মতো নায়িকা খুঁজে না পেয়ে শুভ বান্ধবী শ্রীনকে তার ছবির নায়িকা সাজার কথা বলে। শ্রীন প্রথমে নারাজ, তার পর বলে, “জানিস, ছোটবেলায় ওঁকে কত ফ্যান-লেটার পাঠিয়েছি। ” আর তখনই সত্যজিতের ছবির শর্মিলা ঠাকুরের কথা মনে পড়ে। ট্রেনের কামরায় নায়কের অটোগ্রাফ চাইতে এসেও তিনি সটান বলে দেন, “আমার জন্য নয়।

” সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’-এর কাছে অনুপ্রাণিত বলেই তো মালাচন্দন দিয়ে তাঁকে টুকলিফাই না করে চিত্রনাট্য এ ভাবে নীরব, বুদ্ধিমন্ত বিপর্যাস ঘটাতে পারে! আর সেখানেই প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শ্রীজিৎ অন্যদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন! শুধুই বুদ্ধিমন্ত সত্যজিৎ-প্রয়োগ? ছবিতে শুভ প্রথম বার চিত্রনাট্য শোনাতে অরুণ চ্যাটার্জির বাড়ি যাচ্ছে। একটা হলুদ ট্যাক্সিতে উঠে বসে সে, ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ে গাড়ি। এক ভিখিরি বালক ভিক্ষা চায়। শুভ পয়সা বের করে দেয়। ছবির শেষ দিকে আবার সেই এক সিকোয়েন্স! তত দিনে অরুণের সঙ্গে শুভর ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু শুভ এখন অনেক পরিণত, ছবি তৈরি থেকে মার্কেটিং ষ্ট্র্যাটেজি সবই তার হাতের মুঠোয়। ভিখিরি বালক ফের এগিয়ে আসে। পোড়-খাওয়া শুভ তার দিকে না তাকিয়ে জানলার কাচ তুলে দেয়। ব্যাকগ্রাউণ্ডে চেনা লোকসঙ্গীতের সুর, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’। কোনও সংলাপ ছাড়াই, চিত্রনাট্য যে ভাবে নিরুচ্চারে বুঝিয়ে দিল, দু’টো আসলে আলাদা শুভ...হ্যাট্‌স অফ! ক্যানভাসের সাদা জায়গাটুকু রংয়ের ভিড়েও যিনি যথাযথ ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তিনিই তো প্রকৃত শিল্পী! আদ্দ, নতুন পরিচালককে এই সিনেমাটিক আবহ সৃষ্টিতে যিনি সাহায্য করে গিয়েছেন, তিনি সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র।

হাল আমলের বাংলা ছবিতে হিট গান অনেক আছে। কিন্তু গান, ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক যদি সিনেমার সঙ্গে হুইস্কি আর সোডার মতো ওতপ্রোত মিশে যায়, সেখানেই আসল সাফল্য। দেবজ্যোতি প্রথমেই ‘যদি কেড়ে নিতে বল কবিতায় ঠাসা খাতা’ গানটা থেকে যে ভাবে মন কেড়ে নিলেন! কিংবা কার্পেটে শ্রীনের মুখের কাছে এগিয়ে আসছে শুভর মুখ। ব্যাকগ্রাউণ্ডে গান, ‘উঠছে জেগে সকালগুলো’। তার পরেই মোৎসার্টের সিম্ফনির ঢঙে যুগ্ম আহ্বান ‘আয় চলে আয়’! চমৎকার সুরেলা ধুয়ো।

তবে সেরা গান বোধহয় ‘চল, রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন/আর কবিতায় শুয়ে কাপলেট’! বহু দিন বাদে সলিল চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। এই সব গানের লিরিক লিখেছেন শ্রীজাত। আর এক উজ্জ্বল প্রাপ্তি! বিমল ঘোষ (মৌমাছি)-এর পরে প্রায় দুই যুগ কবিরা বাংলা সিনেমা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলেন। সিনেমার গান তাঁরা লেখেননি। শ্রীজাত প্রথম আঘাতেই নীরবতা যে ভাবে ভেঙে দিলেন, প্রশংসা করতেই হচ্ছে! দেবজ্যোতির সঙ্গে আরও একটি কৃতিত্বের উল্লেখ করতেই হবে।

গৌতম বসুর ডিজাইনিং। এক দিকে সাউথ সিটির টাওয়ারে নায়কের বাস, কলকাতা শহর তার পায়ের নীচে। অন্য দিকে শুভ আর শ্রীনের ফ্ল্যাটে লো-হাইটের সব আসবাব, দেওয়ালে ‘চারুলতা’ এবং ‘দেবী’র বাঁধানো ছবি। প্রেসিডেন্সি কলেজের পোর্টিকো, প্রমোদের ক্যান্টিন থেকে চিড়িয়াখানার ঝিল সব কিছুই যে কী অসাধারণ ভঙ্গিতে সিনেমার মেজাজের সঙ্গে খাপ খেয়ে গিয়েছে! অভিনয়? এ ছবির সেরা অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। জুতোর সুখতলা ক্ষয়ানো মৃদুভাষী নতুন পরিচালক, সেখান থেকে ক্রমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা... যে সহকারীকে (অরিন্দল বাগচী) একদিন তিনি ‘আমাকে স্যার বলবেন না, অস্বস্তি লাগে’ বলেছিলেন, আচমকা তাঁকেই ‘একটাও কাজ পারে না, অপদার্থ’ বলে ধমকে ওঠা! শুভই যে নায়ক, সেটা বোঝাতে পরিচালক তার মুখেই চূড়ায় পৌঁছানোর সংলাপ দেন।

শ্রীনকে নিয়ে নায়ক অরুণ চ্যাটার্জি ডিনারে গিয়েছেন। রাত তিনটেয় শ্রীন ফেরার পরে শুভর ‘পুরুষালি ঈর্ষা’ ফুটে বেরিয়ে আসে। কিন্তু তার পরেই, আজকের মেট্রোসেক্সুয়াল নায়ক সে, ম্যানেজ করে দেয়। গোটাটাই নাকি ইয়ার্কি! শুভ আর শ্রীনই যে ছবির মুখ্য বৃত্ত, সেটি বোঝাতে আর এক ‘কাপ্‌ল’কে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা শুভ আর শ্রীনের কলেজ-বন্ধু।

তবে লিভ-ইন না করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। বিবাহিত বন্ধু-বন্ধুনি ভাবে, শুভ শ্রীনকে কী ভাবে অরুণের সঙ্গে একলা ছেড়ে দেয়! লিভ-ইন করে বলেই কি ওদের সম্পর্কে এত ফাঁক? নায়ক, পরিচালক, সিনেমা, গ্ল্যামার-দুনিয়া সব কিছুর পাশাপাশি এই ছবি যেন আজকের ভঙ্গুর সম্পর্ককেও দু’-একটি আঁচড়ে দেখাতে চায়। আর তিনি? ‘আজকের নায়ক’ প্রসেনজিৎ? এই ছবি রিলিজের পর অনেক দীর্ঘশ্বাস শোনা যাচ্ছে, ‘দূর! উত্তমকুমার যা করে গিয়েছিলেন, প্রসেনজিৎ তার ধারেকাছে আসতে পারেননি!’ এই দীর্ঘশ্বাসে নস্টালজিয়া-কাতর আবেগ আছে, কিন্তু যুক্তির ছিটেফোঁটাও নেই। ‘নায়ক’ ছবিতে সত্যজিৎ মহীরূহপ্রতিম এক নায়ককে ধরেছিলেন। নাম-যশ-গ্ল্যামারের শীর্ষে পৌঁছেও সে নিঃসঙ্গ।

কিন্তু ‘অটোগ্রাফ’ তো শুধু নায়কের কাহিনি নয়। এখানে পরিচালক শুভই নায়ক! সত্যজিতের ছবিতে এ ভাবে পরিচালক আসেননি। আসেনি নায়কের ভঙ্গুরতার কথাও! এ ছবিতে অরুণকে প্রথম দেখা যায় টিভির সামনে। মনোজ সরকার (বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী) হিট প্রযোজক, অরুণকে নিয়ে পরপর তিনটি ছবি করেছেন তিনি। কিন্তু টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, “নায়ক নয়, ছবি চলে ঠিকঠাক পরিচালনার জন্য।

” রাগে জ্বলতে জ্বলতে অরুণ উঠতি পরিচালক শুভর স্ক্রিপ্ট শোনে, তার ছবি নিজেই প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই যে পরিচালক থেকে প্রযোজক সবাই ‘নায়ক’, দরকারে অন্যের মুখে ঝামা ঘষতে নায়ককেও প্রযোজক হতে হয়...নায়কের এই দুর্বল ভঙ্গুরতারগল্প সত্যজিতের ১৯৬৬ সালের ছবিতে ছিল না। থাকার কথাও ছিল না। কারণ, ষাটের দশকে ‘নায়ক’ ছিল একচ্ছত্র সম্রাট। ট্রেনের কামরায় উত্তমকুমার সেই নিঃসঙ্গতার গল্পই শুনিয়েছিলেন শর্মিলাকে।

চার যুগ পরে, আজ নিঃসঙ্গতার থেকেও প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে শুক্রবারের টেনশন! “আমি জানি, শুক্রবার যে হাতগুলি বক্স অফিসের দিকে এগিয়ে আসে, বিজয়া দশমী থেকে ছটপুজো অবধি যারা আমাকে এসএমএস পাঠায়..” শুভকে বলতে থাকেন অরুণ! তাই ‘নায়ক’ ছবির সঙ্গে এ ছবির তুলনা টানা ভুল। শুভ-শ্রীনদের আধুনিক জীবনে অরুণ চ্যাটার্জি শুধু প্রান্তবাসী এক ‘ক্যারেক্টার রোল’! আর সেখানেই প্রসেনজিতের মুন্সিয়ানা। ইন্দ্রনীল-নন্দনাদের খেলার জন্য গোটা মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এবং ইন্দ্রনীল সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে প্রায় ধোনির মতো দাপিয়ে খেলে গিয়েছেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ? তাঁর জন্য তো পড়ে রয়েছে শুধু কিছু মুহূর্ত।

আর সেখানেই গাওস্করের মতো দু’-চারটি কব্জির মোচড়ে চিনিয়ে দিতে হবে নিজের জাত! সেই মুহূর্তগুলি যে কী অসাধারণ! ‘মনে রেখে দেব’ কথাটা কিছুতেই বলে উঠতে পারছেন না নন্দনা। পরিচালক শুভর বারংবার বকুনি সত্ত্বেও না! প্রসেনজিৎ চেয়ারটা সামনে টেনে নেন, “ধরো, আমি তোমার প্রেমে পড়েছি...” এই ভাবে বুঝিয়ে দিতেই দীপ্তি খেলে যায় নন্দনার চোখে। এ বার সঠিক অভিব্যক্তিতে সে সে উচ্চারণ করে, ‘মনে রেখে দেব। ’ ছবির আর এক জায়গায় নন্দনার বাড়িতে এসেছেন নায়ক। মদ খেয়েছেন, পা টলছে।

নন্দনার প্রতি দুর্বল তিনি, কিন্তু সে কি স্বীকার করা যায়? “শেষ তো এক দিন হতেই হবে” বলে টলতে টলতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান তিনি। রাতের কলকাতা, ব্যাকগ্রাউণ্ডে ক্ষীণ স্বরে বাজে ‘বঁধু, মিছে রাগ করো না। ’ প্রসেনজিতের আর একটি কভার-ড্রাইভ অনবদ্য! ছবির শেষে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সঙ্গে তাঁর তর্ক। ইন্দ্রনীলের ছবি তিনি রিলিজ করতে দেবেন না। নায়ক তখন প্রায় খলনায়ক! তিনিই ইণ্ডাষ্ট্রি, চুরচুর করে ভেঙে দেবেন এই তরুণের স্বপ্ন।

উঠতি পরিচালক বলে ওঠেন, “আর যে দু’শোটা আনতাবড়ি ছবি করেছেন?” প্রসেনজিৎ চেয়ার ছেড়ে নিজের বিশাল পোস্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ‘‘হ্যাঁ, আমি চুল বিক্রি করেছি, চামড়ার রং বিক্রি করেছি। কিন্তু ‘সোল’ বিক্রি করিনি। ” সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একদা লিখেছিলেন, ‘কৃত্তিবাসের কবিদের মধ্যে তফাত ছিল। কিন্তু এক জায়গায় সকলে এক।

সকলের কবিতার মধ্যে স্বীকারোক্তির স্বর শোনা গিয়েছিল। ’ প্রসেনজিতের অভিনয়েও কি আজ সেই স্বীকারোক্তির স্বর? উত্তমকুমারের ‘নায়ক’ মনে থাকবে নায়কের কারণে। আর অটোগ্রাফ? মনে থাকবে অন্য কারণে। নায়ক কী ভাবে পরের প্রজন্মকে জায়গা ছেড়ে নিঃশব্দে ক্যারেক্টার রোলে চলে যেতে পারেন! দুই পুরুষের মাঝে এ ছবির অন্যতম দুর্বল জায়গা, নন্দনা দেব সেন! চোখ বড় বড় করলে আর কাঁদলেই তো অভিনয় হয় না। প্লেনের দৃশ্যগুলিও বেশ দুর্বল।

স্বপ্নদৃশ্যটি আরও এডিট করা যেত। দিলীপ রায় এবং রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের বিশেষ কিছু করার ছিল না। নায়কের সহকারী হিসাবে পীযূষ অবশ্য মানিয়ে গিয়েছেন। তবু এ ছবির অন্যতম আকর্ষণ নন্দনার শ্রীন চরিত্রটি। প্রেমিক ইন্দ্রনীল তার কাছ থেকে প্রসেনজিতের স্বীকারোক্তির ক্যাসেটটি হাতিয়ে নেয়।

ছবি রিলিজের আগে টিভি চ্যানেলে সেটি চলতে থাকে। শ্রীন রাগে, লজ্জায় লিভ-ইন পার্টনারকে ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে এসে প্রথমেই তার ভালবাসার নায়ককে ফোন করে, “অরুণদা!” অরুণ ফোন কেটে দেন। তাঁর চোখ তখন টিভির পর্দায়। শ্রীন এই ভাবে বেইমানি করল? পরের দিন তর্কের সময় ইন্দ্রনীল জানায়, শ্রীনের এতে হাত ছিল না।

নায়ক আশ্বস্ত হন। অরুণের গাড়ি ছোটে ধাবার দিকে। ধাবার ছেলেটি এসে জানায়, “দিদিমণি পয়সা দিয়ে গিয়েছেন। ” “কোন দিদিমণি?” জিজ্ঞাসা করে অরুণ। “আপনার সঙ্গে যিনি এসেছিলেন সে দিন।

” অরুণ থামে না। তার পরের প্রশ্ন, “সঙ্গে আর কেউ ছিল?” ছেলেটি উত্তর দেয়, “না, একাই এসেছিলেন। ” আশ্বস্ত অরুণের গাড়ি এ বার ছুটে বেরিয়ে যায় হায়াত রিজেন্সির দিকে। অন্য পৃথিবীতে। আর সেখানেই শ্রীনের ট্র্যাজেডি।

লিভ-ইন পার্টনার ইন্দ্রনীল তার গোপন ক্যাসেটটি নিজের ছবির প্রচারে ব্যবহার করে। যাকে ভালবাসল, সেই অরুণ তার ফোন নামিয়ে রাখে। পরে দিদিমণি একা এসেছিলেন শুনে, নায়ক নিশ্চিন্ত! যাক, তাঁর প্রেমের অমর্যাদা ঘটায়নি শ্রীন। দুই পুরুষের মাঝে এ ভাবে নিস্পেষিত শ্রীন কোথায় যেতে পারে, বহু দূরের দার্জিলিং ছাড়া? ইন্দ্রনীল বোঝায়, “প্লিজ, এ বার আমাদের জীবন শুরু। ” নন্দনা মানে না।

ট্রলিব্যাগ নিয়ে সে চলে যায় এক নিঃসঙ্গ প্ল্যাটফর্মে। ‘অটোগ্রাফ’ ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের সব চেয়ে বড় প্রভাব বোধহয় এই মুহূর্তগুলিতে। আমরা তো ‘মহানগর’-এর মাধবীকে দেখেছি, দেখেছি ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অলকানন্দাকে কিংবা ‘আগন্তুক’-এর মমতাশঙ্করকে। সত্যজিৎ তো বারংবার একটা কথাই বলতে চেয়েছেন। পুরুষ যত সহজে কম্প্রোমাইজ করে, মেয়েরা নয়! এখানেই জিতে গেলেন শ্রীজিৎ! ছবিটা ‘শ্রীসত্যজিৎ রায়’ এবং ‘শ্রীউত্তমকুমার’কে উৎসর্গ করার জন্য নয়।

কে না জানে, ওই দুই প্রতিভা বরাবরই শ্রীবর্জিত ছিলেন! [আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত] গানের লিংক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।