প্রেম নয় কবির অন্বিষ্ট হলো বিরহ । / কিন্তু বিরহ দুর্লভ বড়, প্রেমের ওপারে থাকে সে । / তাই কবিকেও প্রেমে পড়তে হয়,/ অবশ্য তা প্রেমের জন্য নয়-/ একদিন বিরহকে কাছে পাবে বলে । ...নির্মলেন্দু গুণ ।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন গল্প-কবিতা পড়েই মূলত বই পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে ।
আমাদের এলাকার বিভিন্ন মেলায় রাস্তায় বিছিয়ে বই বিক্রি করা হতো । আমি সেখান থেকেই ‘বোরকা পড়া সেই মেয়েটি’ টাইপের বই কিনে পড়তে লাগলাম । কিন্তু বই পড়ে তৃপ্তি পাই না । মনে হয় এর চেয়ে আমিই ভালো লিখতে পারি । একদিন আমার এক সহপাঠি বন্ধু আমার এসব বই পড়ার কথা শুনে আমাকে একটি বইয়ের নাম বললো, সেটি পড়লে নাকি আমার অনেক ভালো লাগবে ।
পরে তার কাছ থেকে শুনে আমাদের স্কুল পাঠাগার থেকে বইটি নিয়ে পড়তে শুরু করলাম । বইটি ছিল হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’ । সেই থেকে আমার হুমায়ূণ আহমেদ পড়া শুরু এবং বই পড়ার প্রতি নেশাও সেই থেকেই । তারপর একে একে হিমু, মিসির আলি, শুভ্রদের সাথে পরিচয় । গ্রামে থাকার সময় আমার একটি স্বপ্ন ছিল যদি কোনোদিন ঢাকা আসি তাহলে বড় লেখক, তারকাদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করবো ।
ঢাকা আসার পর বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বহু লেখক, তারকার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু কেন জানি কারো কাছে হাত পেতে অটোগ্রাফ নেয়ার সেই ইচ্ছেটা মরে গেছে । তবে এই জীবনে একজনেরই অটোগ্রাফ নিয়েছি, তাও আবার র্যাব পুলিশের তাড়া খেয়ে ক্লান্তিকর দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে । তিনি আমার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ । ২০০৮ সালের বইমেলাতে সেদিন তিনি দীর্ঘ লাইন দেখে কারো দিকে না তাকিয়ে একমনে অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছিলেন । আমি যখন সামনে গিয়ে তার লেখা ‘মানবী’ বইটিতে অটোগ্রাফের জন্য বাড়িয়ে দিলাম, তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন ।
বললাম, ‘শাহিন’ । তিনি তখন আমার দিকে তাকিয়ে আবার নাম জানতে চাইলে দ্বিতীয়বার নাম বলার পর আমি কী করি কোথায় থাকি জানতে চাইলেন । আমার ছেলেবেলার স্বপ্নের নায়ক, প্রিয় লেখক হুমায়ূণ আহমেদ আমার নাম ঠিকানা জানতে চাচ্ছেন! কিযে এক আনন্দানুভূতি হয়েছিল তখন বলে বোঝাতে পারবো না । অনেক পরে বুঝেছি তাঁর ছোট ভাইয়ের ডাকনাম শাহিন হওয়াতেই হয়তো সেদিন তিনি ভীড়ের মধ্যেও আমাকে একটু বেশি সময় নিয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন । তাঁর দেয়া সেই অটোগ্রাফটি আজ আমার কাছে এক অমূল্য সম্পদ, এতে হাত বুলিয়ে যেন আমি প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পাই ।
সেই বহুব্রীহি থেকে আজ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের যেখানে যে বই পেয়েছি সেটিই এক বসায় পড়ে শেষ করেছি । সর্বশেষ ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ‘বৃষ্টি বিলাস’ বইটি পড়া অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর খবর পেয়ে মনে হচ্ছিল আমার পরিবারের অতি আপনজন কেউ মারা গেছেন । তিনি আমাদের আপনজনই ছিলেন । আমার জীবনের অনেক দুঃখের মুহুর্তগুলো আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন । তাঁর বই পরেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে ।
হুমায়ূন আহমেদের খোঁজ না পেলে হয়তো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে সুনীল, আনিসুল হক আমার অজানাই থেকে যেত ।
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, ‘তোমার মৃত্যু নেই, তুমি বেঁচে থাকবে অনন্তকাল হাজারও ভক্ত-পাঠকের হৃদয়ে । তোমাকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা । শুভ জন্মদিন । ’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।