প্রবাসী
কোথা থেকে ধর্ম এলো, কি এর ইতিহাস? ধর্মীয় বিশ্বাস কেন? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুজতে চেস্টা করেছি প্রধানত বিজ্ঞানের দৃস্টিকোন থেকে।
ধর্মের উতপত্তি সম্পর্কে বিশ্বাসীদের এবং বিজ্ঞানের দৃস্টিকোন থেকে দুই ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকেঃ-
১)বিশ্বাস নির্ভর তত্বঃ-সর্ব শক্তিমান ,সর্বভুতে বিরাজমান্, সৃস্টিকর্তা ইশ্বরের বানী হল ধর্ম। কিভাবে ইশ্বর জীব জগত সৃস্টি করলেন কিভাবে তার বানী মানুষের কাছে পাঠালেন তার বর্ননা আছে ধর্মগ্রন্থে। তবে ধর্ম অনুযায়ী তা ভিন্ন ভিন্ন। যেমন হিন্দুরা বিশ্বাস করে ভগবান অবতার হিসেবে পৃথীবিতে এসে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন, মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন আল্লাহর বানী ফেরেস্তা জিব্রাইল নিয়ে আসেন হযরত মোহাম্মদের(সাঃ) এর কাছে এবং তা তিনি প্রচার করেন।
২) বিজ্ঞানের বা ইশ্বর অবিশ্বাসীদের তত্বঃ-নৃতত্ববিদ(Athropologist), অভিব্যাক্তিবাদী জীববিজ্ঞানী(evolutionary biologists), প্রত্নতত্ববিদ(archeologists) মানুষের বিবর্তনের যা বিবরন দেন তা হলঃ-
২৫ লক্ষ বছর আগে আদিম মানুষ Homo habilis, Homo ergaster. দের আভির্ভাব। এই সময়কাল আদিম প্রস্তর যুগ এবং পাথরের তৈরী যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়।
১৮লক্ষ বছর আগে আফ্রিকাতে Homo erectus, ইউরোপে Homo heidelbergensis , Homo georgicus, এবং আগুনের ব্যবহার।
১২ লক্ষ বছর আগে Homo antecessor।
৬লক্ষ বছর আগে ইটালীতে আগ্নেয়গিরির ভস্মে Homo heidelbergensis এর পায়ের ছাপ পাওয়া যায়।
Homo heidelbergensis থেকে Homo neanderthalensis এবং ,Homo sapiens এর উদ্ভব। এটী হল মধ্য প্রস্তর যুগ।
২ লক্ষ বছর আগে ইথিওপিয়াতে আদিম Homo sapiens. এর জীবাশ্ম। এই Homo sapiens.রাই হচ্ছে আধুনিক মানুষ।
আদিম মানুষের মধ্যে ধর্মবোধ, কবে এসেছিল তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
তবে ৩ থেকে ৫ লক্ষ বছ্র আগে মধ্য প্রস্তরযুগে ধর্মীয় আচার আচরনের সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়।
বিবর্তনের একটা উল্যেখযোগ্য দিক হল মানুষের(Homo sapiens.) মস্তিস্কের ব্যাপক পরিবর্তন। মস্তিস্কের যে অংশ চিন্তাভাবনা , বিচার বিবেচনা ইত্যাদির কাজ করে থাকে তা হল “Neocortex”. শিম্পাঞ্জীর মস্তিস্কে যেখানে ৫০% ভাগ হল Neocortex”. মানুষের মস্তিস্কে তা হল ৮০% ভাগ।
আদিম যুগে ধর্মের উৎপত্তিতে যে জিনিসগুলোর প্রয়োজন ছিল তা হল ১) ভাষার উদ্ভব, ২) যন্ত্রপাতির ব্যবহার,৩)যাযাবর শিকারী জীবন থেকে সমাজবদ্ধ বসবাস। সামাজিক জীবনযাপনের সাথে উদ্ভব ঘটলো নিয়মনীতি।
ধর্মের উৎপত্তির কারনঃ- মানুষের মনবৃত্তির বিকাশের সাথে সাথে জন্ম হয়েছে ধর্মের। বুদ্ধি এবং উপলব্ধি করার ক্ষমতার সাথে সাথে দুটো পরিবর্তন এসেছে। মানুষ ভাল করে প্রকৃতিকে বুঝতে শিখেছে এবং দুর্যোগকে মোকাবিলা করে বেচে থাকতে শিখেছে। অপর দিকে মানুষ বুজেছে জীবন ক্ষনস্থায়ী, সবাইকে মরতে হবে। এই অনির্বার্য মৃত্যু উপলবধি জন্ম দিয়েছে ভয়ের।
মৃত্যুকে কি জয় করা যায়? বা মৃত্যুর পর কি হবে?
আদিম মানুষ যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুজেছেঃ-
কে নিয়ন্ত্রন করছে প্রকৃতি এবং এর পরিবর্তনঃ- কেন দিন রাত্রি হয়? চাঁদ বা সুর্য্য কেনই বা ওঠে বা অস্ত যায়? আকাশের গ্রহ নক্ষত্র বা ঋতুর পরিবর্তন কেন হয়।
পরিবেশঃ-বন্যা, খরা, ঝড়, ভুমিকম্প, অগ্নুৎপাত, ইত্যাদি।
জন্ম মৃত্যুঃ- মানুষ, পশু পাখি, গাছপালা, ফসল, শস্য ইত্যাদি।
কি ধরনের নৈতিক ব্যবহার করলে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাচতে পারে?
সর্বোপরিঃ- মৃত্যু কি? মরার পর কি ঘটবে?
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর মানুষ খুজতে থেকেছে বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের শুরু থেকেই। কারন এবং ফলের সম্পর্ক(causality , cause and effect)দিয়ে মানুষ অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা খুজে পেয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞান অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। কিন্তু অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা খুজে পায় নি। এই সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির কাছে আদিম মানুষ ছিল অসহায়। ধর্মের উদ্ভব এবং ধর্মচিন্তার মধ্যে ব্যাখ্যা এবং নিজেদের নিরপত্তা খুজতে চেয়েছে মানুষ। ধর্ম দিয়ে পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে।
এ ভাবেই আবির্ভাব হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্ম গুরু, ধর্মীয় আচার আচরন ইত্যাদি। পুজো বা প্রার্থনা শুরু হয়েছে দেব দেবী দের সন্তুস্ট করতে যাতে ফসল ফলাদি ঠিক মত হয়, গবাদি পশুগুলো ঠিকমত থাকে, রোগ শোক না দেখা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দেয়। সর্বোপরি জীবন নিরাপদ হয়।
কারন এবং ফলের সরাসরি সম্পর্ক, ও বাস্তব সাক্ষ্য প্রমানের চেয়ে ধর্মের উপর বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ধর্ম, যাকে বলা যায় “Circular Argument”বিভিন্ন প্রবর্তক ব্যখ্যা দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। এক এক গোত্র বা উপজাতির সামাজিক আচার আচরন, নৈতিক ব্যবহার গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ভাবে।
অনুমানের উপর নির্ভর করার ফলে জন্ম নিয়েছে বহু সংখ্যক ধর্ম। অথচ কারন এবং ফলের যোগসুত্র কিন্তু স্থান কাল বা পাত্র ভেদে ভিন্ন হয় না। উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে বৈজ্ঞানিক পরিক্ষার ফল সারা পৃথিবীতে একই , কিন্তু ধর্ম বিশ্বাস স্থান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন।
যেহেতু ধর্মের অনুসরনকারীরা ধর্মকে ইশ্বরের প্রেরিত মনে করে থাকেন তা অপরিবর্তনীয়। প্রত্যেক ধর্মের লোকই তাদের বিশ্বাসকেই সত্যি বলে মনে করেন ফলে এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সমন্বয় সাধন সম্ভব নয়।
আবার ধর্মীয় গ্রন্থ সমুহে অনেক ক্ষেত্রে সুস্পস্ট ধারনা না দেওয়ায় বিভিন্ন জনে ব্যখ্যা করেছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ফলে একই ধর্মের মধ্যে জন্ম নিয়েছে উপধর্ম, যেমন শিয়া সুন্নী ইত্যাদি। যেহেতু সব ধর্মই শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে, স্বাভাবিক ভাবেই তা অপর ধর্মবিদ্বেষী হতে শিখিয়েছে। ফলে হিসেবে একই ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে বা অপর ধর্মের সাথে সঙ্ঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সেই সৃস্টি থেকে অদ্যাবধি।
প্রথমতঃ ধর্ম থেকেছে জন্ম এবং শক্তিকে ঘিরে, যেমন শস্য দায়ীনি হিসেবে পৃথিবীকে পুজো করা হয়েছে এবং শক্তি হিসেবে সূর্য্যকে উপাসনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ ধর্ম থেকেছে মৌখিক আকারে।
অতঃপর ৫০০০ বছর আগে যখন লেখার প্রচলন হয়েছে তখন তা লিপিবদ্ধ হয়েছে। লেখার উদ্ভব ঘটার ফলে ধর্মকে সংরক্ষন করা সম্ভব হয়েছে এবং তা পরিবর্তনের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
কোন কোন ধর্ম একেশ্বরবাদী(Monotheistic religion) । অন্য ধর্মে প্রধান এক ইশ্বর থাকলেও বহু রুপের কথা বলা হয়েছে(Henotheistic religion । ধর্ম পৃথক এবং ইশ্বর কর্তৃক প্রেরিত দাবী করা হলেও বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে লক্ষনীয় মিল ও রয়েছে।
ইহুদি এবং খৃস্টান ধর্মের প্রবর্তক মু্সা এবং যীষূকে ইসলাম ধর্মে নবী হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে। ইহুদী এবং খৃস্টান এই দুই একেশ্বরবাদী(monotheistic religion) কে বলা হয়েছে “ people of the book” বা গ্রন্থ সম্বৃদ্ধ ধর্ম।
সর্বশক্তিমান ইশ্বর জগৎ বিশ্ব গাছ পালা জীবজন্তু ,মানুষের সৃস্টিকর্তা পালন কর্তা। মানুষ হল সৃস্টিকর্তার শ্রেস্ট সৃস্টি। কিন্তু ইশ্বর কখনই তার শ্রেষ্ট সৃষ্টিকে দেখা দেন নি।
শুধু মাত্র প্রার্থনা বা দৈব ঘটনার মাঝে ইশ্বরকে কেউ কেউ দেখতে, শুনতে বা উপলব্ধি করতে পেরেছে। গায়েবী আওয়াজ শোনা মানসিক রোগ “ সিজোফ্রেনিয়ার”(Scizophernia) একটা লক্ষন। অথচ ধর্ম প্রবর্তক যখন প্রেরিত বানী শোনার দাবী করছেন তাকে আমরা কোন পাগলামীর লক্ষন বলি না।
প্রথমতঃ ধর্ম থেকেছে মৌখিক আকারে। আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে যখন লেখার প্রচলন হয়েছে তখন থেকে তা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
লেখার উদ্ভব ঘটার ফলে ধর্মকে সংরক্ষন করা সম্ভব হয়েছে এবং তা পরিবর্তনের সম্ভাবনাও কমে গেছে।
অনেকের মতে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে ভয় থেকে। মৃত্যু ভয়, স্বাস্থ্য হানির ভয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, ধন সম্পদের ভয়, দুর্ঘটনার ভয়, পরকালের ভয় ইত্যাদি।
বস্তুত সত্যকে জানার চেয়ে ধর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালে এবং পরকালের নিরাপত্তা চেয়েছে। দুশ্চিন্তা , দুর্ভাবনা এবং দুর্বলতাকে পুজি করে গড়ে উঠেছে ধর্ম।
ফলে তা অনেক সময় হয়েছে মানসিক ব্যাধির ন্যায়, মাত্রাতিরিক্ত, অসুহিস্নু এবং ক্ষতিকর” অধিকাংশ সময় দেখা যায় ধার্মিক শাসকেরা নিষ্ঠুর প্রকৃতির একনায়ক।
কি এবং কেন তা জানার চেস্টা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ধর্মের উচিত জ্ঞানার্জনকে উৎসাহিত করা। সর্বশেষ এবং সবার উপরে – এই ধারনা প্রকৃতপক্ষে অন্ধবিশ্বাস। অন্ধবিশ্বাস আশীর্বাদ নয় অভিশাপ।
অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা হীনতাকে সংগী করেই মানুষকে বেচে থাকতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।