সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
ধর্ম যদি কোন রাষ্ট্রচালনার মাধ্যম হয়, তাহলে সে রাষ্ট্রকে আধুনিক গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দেয়া যেতে পারে না। আধুনিক গনতন্ত্র পুরোপুরি রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা ভাবে দেখে। দেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের, চিন্তার নাগরিককে তাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সহায়তা করা, তাদের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগকে শক্তশালী করা সে রাষ্ট্রের এক উল্লেখযোগ্য দ্বায়িত্ব। এ দ্বায়িত্ব পালন করার পথে এক একটি অতি জরুরী শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রর নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন । 'ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, রাষ্ট্রচালনারও পদ্ধতি' যেসব মৌলবাদী মুসলিমরা এই দাবী করে থাকেন, তারা এ দাবী গনতান্ত্রিক নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করেই করেন।
এতে যে ভিন্নধর্মীয় একই দেশের নাগরিকের মানবিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকারকে পায়ে দলা হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভুতির প্রাবল্যে তারা সে কথাটি মনেই রাখেন না।
সুক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে দেখা যাবে, এই সব মৌলবাদীরা ধর্মে নৈতিক ও আত্মিক প্রসারের চেয়ে সম্প্রসারণবাদকেই বেশী জরুরী হিসেবে দেখেন। আর তাদের এই সম্প্রসারণবাদী চিন্তাকে কাজে পরিনত করা জন্যে তারা যে কোন পথ নিতে দ্বিধা বোধ করেন না। যে মানবতার প্রতিষ্ঠার জন্যে তাদের এই ধর্ম, তারা তা ভুলে গিয়ে নিজেরাই জিহাদের ভড়ঙএ জল্লাদ হয়ে যান। স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার পরের জামাতে ইসলামী, বিভিন্ন চরমপস্থী ধর্মীয় দল, 'বাংলা ভাই' এই উন্মাদনার প্রত্যক্ষ প্রমান রেখে গেছে বা এখনও রাখছে।
এসব দেখার পরও কিছু কিছু লোকের বোধোদয় হয়না। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গনতান্ত্রিক ছায়ায় বাস করে, সেখানকার সবরকম প্রাপ্ত সুবিধা ভোগ করে সে গনতান্ত্রিক অধিকারকেই ধ্বংসের সপ্ন উন্মাদ। এদের মুখে হাসি, চেহারায় মোলায়েম ভাব থাকলেও চোখের দৃষ্টিতে এরা এক একটি ধূর্ত, বিষাক্ত সাপ। যে জামাতে ইসলামী আমাদের মুক্তিযুদ্বের প্রতিপক্ষ, যে জামাতে ইসলামী রাজাকার, আলবদরের স্রষ্টা, যাদের হাতে ধর্ষিত আমাদের দেশের অগুনতি মা-বোন, সে জামাতে ইসলামের বিরূদ্ধে কোন সমালোচনায় তারা সাপের মতো হিসহিসিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
কোরানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বা ইসলামী শাসনতন্ত্রের কোন উল্লেখ নেই।
মহানবী নিজেও এমন কোন নির্দেশ দিয়ে যাননি। তাঁর মৃত্যুর আগে প্রশাসনিক প্রশ্নে তার কোন উত্তরাধীকারীর নামএ বলে যাননি। অথচ ধর্মের নাম কিছু কিছু ভন্ড নিজেদের স্বার্থোদ্ধার ও রাজনৈতিক প্রভাব অর্জনের লোভে বিভিন্ন অপব্যখ্যায় এসব ধারণা তৈরী করে সাধারন মানুষের মানবিক অধিকারকে বিঘ্নিত করার ষড়যন্ত্রে মত্ত । এদের সাথে জর্জ বুশের তথাকথিত ধর্মযুদ্ধের ধর্মীয় পার্থক্য থাকলেও নীতিগত কোন পার্থক্য নেই। এদেরকে প্রতিহত করা ধার্মিক, অধার্মিক, শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কর্তব্য।
প্রতিটি মানুষের মানবিক অধিকার তখনই স্বীকৃত হতে পারে, যখন ধর্মের অনুশাসনে রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের অনুশাসনে ধর্মের স্থান হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।