আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মের সত্যতা

একজন সুখী মানুষ

উইলিয়াম জেমস্‌ প্রয়োজনবাদীর বিশিষ্ট্য প্রবক্তা, তার ধর্ম মতের সাথে ক্যাথলিক ধর্মমতের নেতা পোপ প্রয়োজনবাদী ধর্মমতকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করেছেন। একথা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, জেমস্‌ ধর্মকে স্রেফ একটি মনস্তাত্ত্বিক ও মানবিক ব্যাপার এবং ঈশ্বরকে একটি সসীম সত্তা বলে হাজির করেছেন। তাঁর মতে, ঈশ্বরবিশ্বাসের বাস্তব পরিণতি সুখকর ও ফলপ্রসূ হলেই সেই বিশ্বাস সত্য, অন্যথায় নয়। প্রাচীন ধর্মসমর্থকদের কাছে একথা উদ্ভট বলে মনে হওয়ারই কথা। কারণ, তাদের মতে নিছক জাগতিক সুখের আশায় মানুষ ধর্মে বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নানারকম দুঃখ-নির্যাতনের মুখেও মানুষ ধর্ম পরিহার করেনি।

আসলে মানুষ ধর্মকর্ম করে এজন্য নয় যে, তাতে সে সুখী হবে, বরং এজন্য যে সে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে এবং সন্তুষ্টিবিধান করতে চায়। অর্থৎ সুখ শান্তি পাওয়া যায় বলেই মানুষ ধার্মিক হয়নি, বরং ধর্মে বিশ্বাস করে বলেই ধার্মিক ব্যক্তি নিজেকে সুখী বলে মনে করে। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসই ধর্মের ভিত্তি; আর ঈশ্বরের সন্তুষ্টিবিধানই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের লক্ষ। প্রয়োজনবাদী আদর্শের তাগিদে জেমস্‌ গতানুগতিক এই ধর্মবিশ্বাসের বিরোধীতা করেছেন এবং ঈশ্বরকে প্রয়োজনসিদ্ধির সহায়ক একটি নিছক সসীম সত্তা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বস্তুর যেমন একটি স্থায়ী গুণ বা ধর্ম আছে, ঠিক তেমনি বস্তুসম্পর্কিত অবধারণেরো সেরকম একটি ধর্ম রয়েছে।

কার্যকারিতা বা তৃপ্তিজঙ্কতা বড়জোড় সত্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে পারে, কিন্তু মিথ্যাকে সত্য বা অবাস্তবকে বাস্তব করতে পারে না। ঈশ্বর বিশ্বাস টাও এমনি যে এটার তৃপ্তিজনকতা আছে এই জন্যই যে এটা অনেক মানুষই বিশ্বাস করে। কিন্তু এর বাস্তবতা যে নেই এইটাই সত্য। তাই ঈশ্বর যে নেই এটা শুধু মনের বাসনা দিয়েই এর যথার্থতা দেওয়া যায় না। সাধারণ পাথরবাটির প্রত্যক্ষণ থেকে হঠাৎ একজন সোনার পাথরবাটির, কিংবা কাঁঠাল ও আমত্ত্বের পৃথক ধরণা থেকে অত্যন্তিক কল্পনাবশে কাঁঠালের আমসত্ত্বের ধারণা করে বসতে পারেন; আর ঐ ব্যক্তির কাছে এসব ধারনা যথেষ্ট তৃপ্তিদায়কও হতে পারে, কিন্তু এই মনস্তাত্ত্বিক আবেদন বা তৃপ্তিজনকতা কি ধরনাগুলোকে বাস্তব সত্যের রুপ দিতে পারবে? কখনো না।

আর তাই যদি হয়, তাহলে জেমস যে তৃপ্তিওদায়কতাকে সত্যের মাপকাঠি বলেছেন, তা-ও যথার্থ নয়, হতে পারে না। প্রাচিন গ্রীসের বাগাড়ম্বর প্রিয় সোফিস্টদের ন্যায় জেমস্‌ও সত্যতার স্থায়ী ধর্ম অস্বীকার করেছেন এবং একে ব্যক্তিমনের নিছক ভাবাবেগের রায় বলে ধরে নিয়েছেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.