শুচি সৈয়দ
শুচি সৈয়দ
যানজট, জনজট, জলজটের আর লোডশেডিংয়ের শহরে অতিষ্ঠ আমরা অধুনা চিন্তাজটে আক্রান্ত। চিস্তাজটকে অবশ্য অধুনা অভিধা দেয়া যথার্থ হবে কিনা সেটা ভাবনার বিষয়। সেটি বোধকরি পুরনো অনেক কিংবা বলা যায় এই-- যে-জটসমূহে আক্রান্ত আমরা সে সবের জননীও সেই। একসময় এ ঢাকা শহরে কেউ যদি জ্যামে পড়ে ১৫ মিনিট সময় খোয়াতেন, তবে সেটা তার দিনতিনেক গল্পের খোরাক হতো আর আজ? আমার এক অগ্রজ প্রতিম মুকুল ভাই, গত শতকের আশির দশকে তাকে দেখেছি প্রতিদিন সারা ঢাকা শহর চষে বেড়িয়েছেন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। অফিসের কাজে তিনি একাই যাত্রাবাড়ফ-টু-টঙ্গী-নয়াবাজার-টু-কমলাপুর চষে দিনে ২০-২২টি সিডিউল রক্ষা করতেন আর এখন তিনি মতিঝিল কলোনি থেকে আরামবাগের একটি-দুটি সিডিউল রক্ষা করতেই হিমশিম খান।
না বয়স বাড়লেও তিনি বুড়িয়ে যাননি কিংবা কমে যায়নি তার কাজের স্পৃহা বা প্রয়োজনীয়তাও। কিন্তু তিনি পেরে ওঠেন না, যানজট খেয়ে ফেলে তার সব সিডিউলÑ এ এক আজব সমস্যা। প্রতিনিয়ত মানুষ মানুষের কাছে কথার খেলাপ করতে বাধ্য হচ্ছেÑ এমন নিরুপায়তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়াও দুরূহ। কে আমরা দুষব কাকে? ‘কেষ্টা বেটাই চোর’Ñ এমত ফর্মুলায় অভিযোগের বোঝা অবশ্যই ক্ষমতাসীনদের কাঁধে-গর্দানে-মাথায় চাপিয়ে মুণ্ডুপাত করা প্রয়োজনÑ কিন্তু কথা হচ্ছে মুণ্ডুপাতের মাথা আদৌ ক্ষমতাসীনদের স্ক›েধ ‘বর্তমান’ কিনা। ‘বর্তমান’ নিশ্চয়ইÑ আসনে যখন যেই আছে মুণ্ডু তো থাকতেই হবে।
না হলে কি করে চলে। গরম পড়ছে প্রচণ্ড। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জীবন। বিদ্যুৎ নেই, ফলে পানি নেই, সর্বোপরি নেই চুলায় গ্যাসের প্রবাহÑ তারপরও ঢাকা শহরে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ছয়-সাত শ’ নতুন বাসিন্দা, এককথায় এমন নরক গুলজার করা রাজধানী পৃথিবীর আর কোনও দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ঈশ্বর গুপ্ত নামক এক বাঙালি কবি ‘দিনে মশা রেতে মাছি/এই নিয়ে কোলকেতায় আছি’Ñ বলে যতই বিদ্রƒপ করুন না কেন কলকাতার নগর কর্তৃপক্ষকে সে পরিস্থিতির কিন্তু কোনও অপনোদন ঘটেনি বরং উন্নতি ঘটেছে শনৈঃ শনৈঃ, যুক্ত হয়েছে আরও অনেক বিষয়ের।
তা সত্ত্বেও বাঙালির সহ্য ক্ষমতা বলে কথা। সেই সহন ক্ষমতার বাঁধ যখন ভেঙে যায় তখন সালাহউদ্দিনকে দৌড়াতে হয়, কানসাটে কুর্নিশ করতে হয় জনতাকে।
যে ঢাকা শহরে একদা জ্যামে পড়লে তিনদিনের গল্প হতো, সেটি যে, জ্যামে পড়েছিলাম! সেই ঢাকা শহরেই এখনকার গল্প হচ্ছে-- আজ জ্যামে পড়িনি-- এবং আশ্চর্য এটাই যে, এই বাক্য আজ আর কেউ বিশ্বাসই করবে না, কারণ বিশ্বাস করার মত যে চিন্তা সে চিন্তা লোপ পেয়েছে। সাধারণ এক বাস চালকও তাই বলতে বাধ্য হয় শুনি, ‘জ্যাম কোথায় গোটা শহরটাই তো বাসট্যান্ড। ’ তাহলে সার্বিকভাবে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে কি? চূড়ান্ত অচলাবস্থা।
এ অচলাবস্থার জন্য আমরা ক্ষমতাসীনদের তো অবশ্যই দায়ী করিÑ পাশাপাশি দায়ী করি একে অপরকেও। দায়ী করে দায়িত্ব পালনের প্রথা আমাদের চেয়ে ভালো আর কেউ পারবে না। নেই শুধু সামান্যতম নিজস্ব ‘দায়’ পালনের সদিচ্ছা। আর সেটার অভাবই যে বিন্দু বিন্দু জমে সিন্ধু হয়ে সুনামির মতো পাল্টা ধেয়ে আসছে আমাদের কাঁধে, সেটা আমরা স্বীকার করি না, উপলব্ধি করি না।
গতকাল আমি আমার মেয়েটিকে রূঢ় ভাষায় শাসন করলাম।
বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে বাসার দারোয়ান সকালে এবং দুপুরে দু’বেলা পানি ছাড়ছেÑ ট্যাপে পানি না থাকায় আমার কন্যা ট্যাপ খুলে রেখে দিয়েছে। এখন পানি নেই কিন্তু যখন পানি আসবে তখন পানি গড়িয়ে যে নষ্ট হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেইÑ এ আমার অনেক পুরনো অভিজ্ঞতা। এখন এই সার্বিক সংকটের সময়ে পানির অপচয়ের ব্যবস্থা যে আÍঘাতী তাতে আমার কোনও সংশয় না থাকলেও নবীন প্রজš§ উদাসীনÑ আমরা যারা চাপকলের হাতল চেপে পানি পেয়েছি, তারাও আগে পাতকুয়ার পানিতে খাওয়া-দাওয়া-গোসলসহ সংসারের সব প্রয়োজন মেটাতে দেখেছি, তাদের কাছে ট্যাপ ঘোরালে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া প্রাচুর্য আর ঐশ্বর্য সেটা আমার কন্যার কল্পনার ক্ষমতাতেও হয়তো নেইÑ সে তো তার নানার বাড়িতে গেলেও ভূতের ভয়ে ভীত হয় না কিন্তু আমরা হয়েছি। আমরা যারা কেরোসিনের কুপি আর হ্যারিকেনের আলোয় বেড়ে উঠেছি, তাদের কাছে এনার্জি সেভিং বাল্বের আলোও অনেক তীব্র আলো। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলোও যখন ফ্ল্যাটের সব রুমে এক সঙ্গে অপ্রয়োজনে জ্বালিয়ে রাখা হয় তখন অন্ধকার দূর করতে গিয়ে আরেক ধরনের অন্ধকারের জš§ হয়, সেটা কি আমরা উপলব্ধি করি? করি নাÑ আর করি না বলেই ক্রমাগত তৈরি হয় চিন্তাজট আর সেই চিন্তাজট জটিল থেকে জটিলতর হয়ে জš§ দেয় সংকটের পর সংকট।
পাঠক, বলবেন ক্ষমতাসীনদের সাফাই গাইছিÑ হয়তোবা, আমার নিজেরই তো তাই মনে হচ্ছে কিন্তু কেন? আমার তো সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে ¯ে¬াগানে শরিক হওয়ার কথা ‘দড়ি ধরে মারো টান/রাজা হবে খান খান। ’ এই স্লোগান আমরা এরশাদ আমলে দিয়েছি, পতন ঘটেছে সামরিক স্বৈরাচারের, পরে আরও এরকম পতন ঘটেছে গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারেরÑ সত্যি কথা বলতে কি ক্রমাগত একই ¯ে¬াগানে আজ ক্লান্ত-শ্রান্ত বোধ হয়Ñ হয়তো সে কারণেই পাশ ফেরার মতো পার্শ্বচিন্তায় গড়াইÑ একেই কি স্থির দাবিদার চিন্তা থেকে বলা হবে বিচ্যুতি? বলা যাবে ক্ষমতার পক্ষাবলম্বন? বলা যাবে সংস্কারবাদী অবস্থান? বলা যাবে বিপ¬বের পক্ষ ত্যাগ? বলা যাবে বিশ্বাসঘাতকতা? সত্যিই কি প্রযোজ্য হবে উপর্যুক্ত বিশেষণগুলো আমার ওপর কিংবা আমার সম্পর্কে? (পাঠক, এই রচনায় ‘আমি’ কিংবা ‘আমার’ শব্দটি এই নিবন্ধকার অর্থে প্রযোজ্য নয়। এই আমি বা আমার একটা নাগরিক অবস্থান মাত্র। )
আমরা সামরিক স্বৈরাচার দেখেছি, গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার দেখেছি এবং দেখছি কিন্তু জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান দেখছি না। এই সমাধানগুলো পাওয়ার জন্য যে ‘শক্ত চিন্তা’ প্রয়োজন সেই চিন্তার অনুপস্থিতিই বোধকরি আমাদের যাবতীয় দুশ্চিন্তা আর দুর্বিপাকের কারণ।
আর সেই চিন্তাজট ছাড়াবার সময়, ছাড়াবার উদ্যোগ বোধহয় ব্যক্তি থেকেও সূচনা করা প্রয়োজন।
২.
‘চিন্তাজটে আমরা বিশ বছর পিছিয়ে আছি। আজ যে কথা তীব্রভাবে মূল্য দিয়ে বুঝতে হচ্ছে সেটি বিশ বছর আগে উপলব্ধি করে কর্ম এবং পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন ছিল’Ñ এই লেখাটির প্রথম অংশটুকু পড়ে মুকুল ভাই মন্তব্য করলেন। এটি তার অভিমত তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ অভিমতটি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে সাফাই বলে মনে হবে কিন্তু তার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অভিপ্রায়টি কিন্তু তা নয়, আমি যখন তার অভিমতটির সঙ্গে একমত পোষণ করে বললাম, ‘বিশ বছর নয় আমরা ৩৫-৪০ বছর পিছিয়ে আছি,’ তখন তিনি অবাক হলেও ঔৎসুক্য প্রকাশ করলেন। আমি বললাম, ‘বিকেন্দ্রীকরণের কথা ছিল স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই।
৬৪ জেলা গভর্নর দিয়ে যার সূচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ তো থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। পিছিয়ে পড়ার সেই শুরু। আবার আমলাতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হয় স্বৈরশাসকের হাতে, সেটাও স্থগিত হয়ে এক জবরজং অবস্থায় পতিতÑ কথা ছিল গণতান্ত্রিক জমানায় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং পূর্ণ সম্মতিতে চালু হবে উপজেলা ব্যবস্থা। মানুষ তার সমস্যার সমাধান পাবে ঘরের দরোজায়।
কিন্তু সেটি তো এখনও গাড়ি আর চেয়ারের বিতর্কে বিতর্কিত। রাজত্ব চলবে কার-- সংসদ সদস্য না উপজেলা চেয়ারম্যানেরÑ এই সমস্যারই সুরাহা মিলছে না। ক্ষমতাকে আমরা নিমক্ষমতাবানরা চাবুক আর মসনদে সংজ্ঞায়িত করে ফেলেছিÑ ক্ষমতাকে ‘জনসেবা’ ভাবলে কি এই দ্বন্দ্ব-বিতর্কÑ পথে প্রতিবন্ধকতা তুলে দাঁড়িয়ে থাকত এমন যুগের পর যুগ? থাকত না। আসলে ঔপনিবেশিকতার ভূত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে যে শর্ষেসমূহকে তা হচ্ছে এদেশের আমলাতন্ত্র। আর সেই আমলাতন্ত্রের আছরে আচ্ছন্ন, পক্ষপুটে আশ্রিত রাজনীতি, সমরনীতি তার নির্দেশিত পথেই কিংবা বলা যায় তার হিপনোটিজম করা পন্থাকেই ভাবে অগ্রগমন।
ভাবে ক্ষমতার চাবুকেই ঘোড়া-গাধা দৌড়ায়Ñ মানুষকে সে মানুষ বলে জানে নাÑ কারণ তার মগজ-রক্ত-মস্তিষ্ক এসব তো জন মেকলে সাহেব আড়াইশ’ বছর আগেই বদলে দিয়ে গেছেন। তার ভাবনায় তাই মানুষ নেই, মাটি নেইÑ আছে কেবলই মোক্ষ। মোক্ষ হচ্ছে ভোগ-বিলাস, অর্থসম্পদ। তাই জনতার ভোটে যে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছে তাকে প্রথমে ঘোড়ায় চড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, চাবুক নিয়ে চলছে ঝিঝু খেলা। ক্ষমতা? দেই-দিচ্ছিÑ যখন দেয়া হবে তখন তাও মোক্ষ অর্জনে ব্যয়িত হওয়ার চরিত্র পেয়ে যাবে।
সাধারণ মানুষের ভোট তাদের দাসখতের সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যে কথাগুলো লিখব ভেবে এই লেখাটির শুরু গত কয়েকদিনের পত্রিকায় কয়েকটি সংবাদে সেই কথাগুলো দেখছি উঠে এসেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বার্ষিক অধিবেশনে সেমিনার পেপারে দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদরা ব্যক্ত করেছেন দেখি ‘আমার ভাবনা’Ñ এই ‘আমার ভাবনা’ কথাটি উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে উদ্ধৃত করছিÑ এই ‘আমার’ কোনও ব্যক্তি আমি নয়Ñ এই ‘আমার’ হচ্ছে ‘বাংলাদেশ’ ‘গোটা বাংলাদেশের মানুষ’Ñ আর এই ‘ভাবনা’ও কোনও ভাবনা নয় এটি হচ্ছে মূর্তিমান বাস্তবতাÑ যা এই মুহূর্তে করণীয়Ñ কিন্তু আমরা জানি, আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় বন্দি এই করণীয় শ্যাওলায় ও আগাছায় পরিণত হবে পরিকল্পনা কমিশনের দেরাজে কিংবা দেশের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহীর টেবিলে।
এবার একটু দেখা যাক কি কথা বলেছেন দেশের চিন্তাশীল মেধাবী ও মানব দরদি সন্তানেরা!
‘‘অর্থনীতি সমিতির সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন
ক্ষমতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ
ক্ষমতা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সারা দেশ থেকে মানুষের ঢাকামুখী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করারও পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ১৭তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার এই তাগিদ ও পরামর্শ দেয়া হয়।
‘উন্নয়ন অর্থনীতি’ শিরোনামের কর্ম-অধিবেশনে বক্তারা শাসনক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেন। তারা বলেন, মানুষকে ঢাকামুখী করে তুলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই অধিবেশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার জনদরদি বলে পরিচিত।
অথচ তারাই উপজেলা তথা স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করে সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব বাড়াচ্ছে। শুধু মুখে বিকেন্দ্রীকরণের কথা নয়, বাস্তবেও তা করে দেখাতে হবে। ’’
(সূত্র : প্রথম আলো, ১০ এপ্রিল ২০১০)
এর ঠিক আগের দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ যেটি আমি পাঠকদের জন্য পুরোপুরি তুলে দিতে চাই। সংবাদটি দেশের নয়, বিদেশের কিন্তু তাতে রয়েছে আমাদের সংকটের প্রতিচ্ছবি এবং তার সমাধানের ভাবনা।
রাজধানী সরানোর চিন্তায় ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের চতুর্থ জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে জাকার্তার ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের।
তবে এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ, তীব্র যানজট আর আবর্জনার কারণে রাজধানী জাকার্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথাও চিন্তা করছেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণায় জানানো হয়, ২০২৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পানির ঢেউ জাকার্তার প্রেসিডেন্ট ভবন পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। শহরটিকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা অব্যাহত থাকার পরও প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় হাজারো লোক ঘরহীন হয়। কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হয়।
বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার স্থানগুলো ভরাট করে ফেলা এবং খালগুলো আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে অবস্থা আরও খারাপ হয়। এসব কারণে রাজধানী অন্য কোনও স্থানে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার ব্যাপারটি আবার বিবেচনায় এনেছে প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোয়োনো।
গত ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের ইয়োধোয়োনো বলেন, ‘জাকার্তায় জনসংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় প্রশাসন অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাটি আবারও বিবেচনা করা হচ্ছে। ’ এর আগে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুকর্ন ও প্রেসিডেন্ট সুহার্তোও রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাটি বিবেচনা করেছেন। সুহার্তো জাকার্তার ৫০ কিলোমিটার পূর্বে ‘জোঙ্গোল’ নামকস্থানে রাজধানী সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
১৯৯৮ সালে তার পদত্যাগের কারণে ওই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। আর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্ন ‘পালাঙ্গকারায়া’তে নতুন রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ দেদেন রুকমানা বলেন, ‘দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে রাজধানী সরিয়ে নেয়া সম্ভব। মাহাথির মোহাম্মদের দৃঢ়তার কারণেই মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রাজায়ায় স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। ভালো একটি পরিকল্পনা থাকলে আমরা শূন্য থেকেই একটি শহর গড়ে তুলতে পারি।
যেমনটি হয়েছে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায়। ’
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও গাদাগাদি অবস্থার কারণে কুয়ালালামপুর থেকে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে এ কাজ শুরু হয়। স্থানান্তরের জন্য ঠিক কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল তা জানা না গেলেও করদাতারা এ কাজে ৫৮০ কোটি ডলারেরও বেশি জমা করে বলে জানা যায়। তবে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি খুব সহজ হবে না।
দেশটির ১৭ হাজার ৫০৮টি দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল জাভা দ্বীপে জাকার্তার অবস্থান। এখানেই বসবাস করে সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী জাভানিজরা। তারা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ খুব সহজে ছেড়ে দিতে চাইবে না। অন্যদিকে শহরের স্থানীয় প্রশাসনেরও চাপ আছে। তারা ২০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
(সূত্র : কালের কণ্ঠ, ৯ এপ্রিল ২০১০)
অতঃপর পাঠক, আমরা কি দু-আড়াইশ’ বছরের মেকলে সাহেব প্রবর্তিত ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের পুরনো ভূতের ভৃত্য হয়ে থেকে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়ে কবরে ঢুকে বসে থাকব? নাকি চিন্তার জট ছাড়িয়ে কাজে নামব আজইÑ সব জট খোলার।
আমরা কি এমন ‘দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ দেখাতে ব্যর্থ হব? আমরা কি ‘শূন্য থেকে একটি নতুন শহর গড়ার’ প্রচেষ্টা করব না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।