প্রায় দ্বিতীয় সাগর-রুনি হতে যাচ্ছিলেন সম্পাদক সাহেব। সস্ত্রীক মৃত্যু। খুব কাছাকাছি থেকে ফেরত এসেছেন। বেশ কিছুদিন আলোচনা করার মত একটা বিষয়ও হারালাম। সেই সঙ্গে চার কলামের একটি শিরোনামও।
আবার কি সুযোগ দিবে আততায়ী? না হাল ছেড়ে দিবে? তা সময়ই বলে দিবে। আমাদের কাজ অপেক্ষা করা। আর সম্পাদক সাহেব অপেক্ষায় থাকবেন কখন হুমকি ভরা পরবর্তী ফোনটা আসে। তবে একটা ব্যাপার হয়তো নিশ্চিত করেই বলা যায়, পরিণতি একই হবে, ‘তদন্ত চলবে’।
সাংবাদিকদের সস্ত্রীক মেরে ফেলার ফ্যাশানটা হালে নতুন শুরু হয়েছে।
একটা দুটো ছোটখাটো সাংবাদিক আগেও মারা হয়েছে। কিছু মারা হয়েছে দ্বায়িত্ব পালনের সময়। কিছু মেরে ফেলা হয়েছে কোন রিপোর্ট প্রকাশের প্রতিদান স্বরূপ। কোন ক্ষেত্রে তো কারণই জানা যায় নি। থেমে থাকেনি কখনও।
বরং নতুন নতুন নৃশংসতা যুক্ত হয়েছে। এই নতুনত্ব সিরিজের নবতম সংস্করণ সস্ত্রীক মৃত্যু। সাগর রুনিকে দিয়েই এই ফ্যাশান শোর উদ্বোধন। প্রচুর লেখালেখি, মানব বন্ধন, বক্তৃতা, বিবৃতি। ব্যাস ঐ পর্যন্তই।
এক বছর পার হওয়ার পরও খুনির দেখা নেই। মোটের ওপর বলা যায় উদ্বোধনী মৃত্যু টি খুব খারাপ হয়নি।
এসব মৃত্যু সাংবাদিক এবং খুনি দুজনেরই কিছুটা পাবলিসিটি করে দেয়। সাংবাদিকের পাবলিসিটি কতটা আকর্ষণীয় হবে তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। মৃত্যুতে নৃশংসতা থাকলে ভালো।
তবে এসব মৃত্যুর পরে কিভাবে রিপোর্ট হবে নির্ভর করে সাংবাদিকটির অবস্থানের ওপর। একটু সিনিয়র সাংবাদিক হলে প্রথম পাতা, অখ্যাত পত্রিকার ছোট সাংবাদিক হলে ভেতরের পাতা। সবচেয়ে আলচিত হয়ে বেশ কিছুদিন পত্রিকার পাতায় থাকা যায়, ‘সস্ত্রীক মারা পড়লে’। কম হলেও চার কলামের শিরোনাম। বেশীও হতে পারে।
সম্পাদক মেরে ফেলা খুব একটা ঘটে নি। তাঁর ওপর আবার জাতীয় দৈনিক এর সম্পাদক। ভারাটে খুনিদের জন্য অবশ্যই একটা জ্যাকপট। তাঁদের বায়েডাটা কিংবা সিভি তে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হওয়ার মত ব্যাপার। এ ধরণের নামি দামী মানুষ মারবার পরে যেহেতু ধরা না পড়া প্রায় নিশ্চিত, তাই এসব কিলিং মিশন হাতে নেয়াটা বোধহয় অনেকটাই সেফ।
খুনিকে আড়াল করতে স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হয়তো বলবেন ‘সাংবাদিক সাহেবের স্ত্রীর স্বভাব প্রশ্নবিদ্ধ ছিল’। দেখা মিলবে কাহিনীর নতুন মোড়ের।
মেরে ফেলবার এতো সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন মারল না সেটাই প্রশ্ন। এদেশে যেভাবে চাইলেই মানুষ মারা যায়, সেখানে মানুষ মেরে ফেলা যেখানে নিত্য নৈমিত্যিক একটা ব্যাপার, চাল ডাল নুন কেনার মত, সেখানে কাউকে মারবার ইচ্ছা হয়েছে অথচ মারবে না, এমনটা হওয়ার কথা না। কেবল ভয় দেখাতে চেয়েছিল? হতে পারে।
আরও কিছু ভাংচুর, আগুন দেয়ার ঘটনা আগে ঘটিয়েছিল। এতেও ভয় না পেলে কি বা করার ছিল? তাই এবারের উদ্দেশ্য ছিল একটু বেশী ভয় দেখানো।
কাজ হাসিল হবে কি না কে জানে। এখন উপদেশের বন্যা দেখা দিবে। এক গ্রুপ সাহস জোগাবে।
‘ভয় পাবেন না। আমরা আছি আপনার সঙ্গে। ‘ ‘এঁরা কাপুরুষ। এঁরা রাতের অন্ধকারে আঘাত করে। ‘ এই গ্রুপের সংখ্যাই বেশী হবে।
এবং এঁরা সবার সামনে বেশ উচ্চস্বরে উপদেশ দিবেন। দ্বিতীয় গ্রুপে থাকবেন কিছু ভীতু। চুপি চুপি একাকী বলবেন। ‘কি দরকার এসবে যাওয়ার। দেখলেন তো সাগর রুনির অবস্থা।
এদেশের কিচ্ছু হবে না। ‘ সম্পাদক সাহেবের যে নিজস্ব বুদ্ধি শুদ্ধি আছে তা অনেকেই ভুলে যাবেন।
সমস্যা কি এখানেই থামবে? মনে হয় না। উনি যদি ভয় না পান? তখন কি হবে? উত্তর তো একটাই এর চেয়েও গুরুতর কিছু করতে হবে। এবার কি সন্তানদের ওপর আঘাত? নাকি দ্বিতীয় সাগর রুনি? একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন? পুরো লেখাটায় একবারের জন্যও সরকার কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাহায্য নেয়ার কথা বলিনি।
আমার বিশ্বাস তাঁর আশেপাশের লোকজন ও এমন জঘন্য উপদেশ তাঁকে দেন নি। শত্রু কেউ থেকে থাকলে তাঁর কথা আলাদা, তিনি বলতে পারেন ‘পুলিশে খবর দাও, প্রটেকশান চাও’। মোদ্দা কথা, এই ধরণের আঘাত থেকে যদি কেউ বাঁচাতে পারে, তবে একমাত্র সেই আততায়ী। তিনি যদি দয়া পরবশ হয়ে ঠিক করেন, ‘যা তোকে মেরে ফেলার প্ল্যান কান্সেল করলাম’ তবেই নিষ্কৃতি। সেটা পেতে চাইলে চলতে হবে তাঁর নির্দেশ মত।
‘অকুতোভয়’ একটা শব্দ আছে বাংলা অভিধানে। এ ধরনের মানুষকে নিয়ে আসলেই বেজায় সমস্যা। ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হয় না। ‘একদিন তো মরতেই হবে’ এমন সব ফালতু যুক্তির ওপর ভর করে তাঁরা নিজেদের কাজ করতে থাকেন। সম্পাদক সাহেব কি করবেন তা সময়ই বলে দেবে।
ভয় দেখাতে আততায়ী সফল হল না বেচারাদের ছয়টা বোমা বৃথা গেল, সেই অপেক্ষায় থাকলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।