আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার গল্প

সত্যানুসন্ধিৎসু

‘৭১-এর ৭ই মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্পষ্টই বোঝা গেছে বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামের নির্দেশনা। তখনও যেন বাংলার আকাশে-বাতাসে সেই বজ্রকণ্ঠ “তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো; আর যার যা-কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এবার দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ” ওই ভাষণের পরদিন থেকেই হারেজ উদ্দিনের চেষ্টা শুরু হয়ে গেলো গ্রামের যুবশ্রেনীকে একত্রিত করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেবার কাজ।

শহীদ হারেজ উদ্দিন ছিলেন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনছার কমান্ডার এবং শাহাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বক্রিয় কর্মী। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলাধীন রূপপুর আনবিক শক্তি কেন্দ্রের আবাসিক এলাকার একটি পরিত্যক্ত ঘরকে বেছে নেওয়া হলো প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অফিস হিসেবে। আর অস্ত্রশস্ত্র বলতে কয়েকটা বন্দুক, এয়ারগান আর বাঁশের লাঠি। তাই দিয়েই শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও মহড়া। বঙ্গবন্ধুর অগ্নিমন্ত্রে উদ্ধুদ্ধ প্রশিক্ষণার্থী যুবকরা সকলেই নিবেদিতপ্রাণ।

ওরা যেন ভুলেই গেছে জগৎ-সংসার। এখন প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে যতক্ষণ দেরি। কিন্তু কার্যক্রমের মাঝপথে বাধ সাধলো আনবিক শক্তি কেন্দ্রের প্রকৌশলী দোভাষী একরামুল হুদা। সে ওই কেন্দ্রের ভেতরে এই ধরনের প্রশিক্ষণকার্যক্রম কিছুতেই হতে দেবে না। কিন্তু স্থানীয় জনগণের চাপের মুখে সে এক সময় নতী স্বীকার করলো।

পাবনা জেলা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছে ইতিমধ্যে, সেই কমিটির সদস্যও হারেজ উদ্দিন। ২৫শে মার্চের কালো রাতের পর ঢাকার পতন ঘটলে পাক সেনাদের অপারেশন বিস্তৃত হলো সারা দেশব্যাপী। ২৬শে মার্চ রাজশাহীতে অবস্থানরত ২৫-পাঞ্জাব রেজিমেন্টর এক কোম্পানি সৈন্য এসে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলো পাবনা শহরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টেলিফোন এক্সপেঞ্জ ভবন ও অন্যান্য সরকারী স্থাপনাসমূহ। এ ঘটনার পর পাবনা জেলা প্রতিরোধ কমিটির ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস(ইপিআর), পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর যৌথ কমান্ড ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ছ’টায় স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাকসেনাদের ওপর দুর্বার আক্রমণ শুরু করলো। যৌথবাহিনীর কাছে অস্ত্র বলতে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, একটা হালকা মেশিনগান, আর একনলা বা দোনলা বন্দুক।

খালের অপর পাড়ে খানিকটা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে যৌথ কমান্ড যে আক্রমণ পরিচালনা করছিল তাতেই পাক সেনাদের ৮৫ জন সদস্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালো। অন্যরা পালিয়ে গিয়ে জড়ো হলো অপেক্ষমান সঙ্গীদের কাছে। যৌথবাহিনী তাদের পেছনে পেছনে ধাওয়া করলো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের দিকে। সন্ধ্যার পর পাক সেনাদের সাহায্যার্থে একটা হেলিকপ্টার এসে পাবনা শহরের উপর দিয়ে চক্কর দিতে দেখে প্রতিরোধযোদ্ধারা সেই হেলিকপ্টারটি লক্ষ্য করে রাইফেল আর হালকা মেসিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করলে সেটি পালিয়ে গেল। ২৯ মার্চ দুপুরের দিকে নিরুপায় হয়ে পাক সেনারা রণেভঙ্গ দিয়ে নিহত সঙ্গীদের লাশগুলো গাড়িতে তুলে নিয়ে গ্রামের পথ ধরে রওয়ানা দিলো রাজশাহীর দিকে।

পরে খোঁজ করে জানা গেল নিহত ৮৫জন পাক সেনা ছাড়াও তাদের মধ্যে রয়েছে দুজন সিনিয়র অফিসার ও তিনজন জুনিয়র অফিসার। পাক সেনাদের গাড়ির বহর আগিয়ে চলছিল হেমায়েতপুর মেন্টাল হসপিটালের পাশ দিয়ে কাচা পথ ধরে সোজা পশ্চিম দিকে ঈশ্বরদী অভিমুখে । যুদ্ধের মধ্যেই হারেজ উদ্দিন ছুটে আসেন ঈশ্বরদীতে এবং তার প্রশিক্ষণার্থী সদস্যদের দ্রুত একত্রিত করে, ঈশ্বরদীসহ সকল ইউনিয়ন থেকে আসা অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে আবার ফিরে গেলেন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যোদ্ধারা এবার পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ করলো মাধপুরে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর সেখান থেকে পাক সেনারা দাশুড়িয়ার দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করে।

তাদের উদ্দেশ্য দাশুড়িয়া পৌঁছাতে পারলেই হয়তো নাটের রোড হয়ে রাজশাহী যাওয়া সহজ হবে। মাধপুরের সেই যুদ্ধে ৮/১০ জন প্রতিরোধ যোদ্ধা শহীদ হলেন। যাহোক, সেই যুদ্ধে অবশিষ্ট পাক সেনা দাশুড়িয়া হয়ে নাটোরের দিকে চলে গেলে রণে ক্লান্ত অনেকেই ঘরে ফিরে এলেন। পাক সেনাদের গাড়ির বহর নাগালের বাইরে চলে গেলে হারেজ উদ্দিন পরদিন ফিরে এলেন বাড়িতে। আর ওদিকে লালপুরের ময়না গ্রামে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অবশিষ্ট পাকসেনাদের দলটি সর্ম্পুর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

সে যুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ভেতর শহীদের সংখ্যাও বেড়ে গেল মোট ২০/২২ জনের কোঠায়। চরশাহাপুরের বাড়িতে এসেই দু’দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে হারেজ উদ্দিন আবারও প্রশিক্ষণের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খবর আসছে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। দেশের সর্বত্রই খ্যাপা কুকুরের মত হামলে পড়েছে পাক সেনারা। নির্বিচারে তারা বাড়িঘরে আগুণ দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, হত্যা করছে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালী সন্তানদের যাকেই দেখছে সামনে।

সারাদেশে বয়ে চলেছে রক্তের বন্যা। সারাদেশে ভরে উঠেছে আর্তনাদ, হাহাকার। সেই নারকীয় তান্ডব দেখে পরলোকে বসে হয়তো লজ্জায় মুখ ঢাকছে চেঙ্গিস খাঁ, হালাকু খাঁ-রা। ঠিক তার দু’সপ্তাহ বাদেই পাবনা জেলা প্রতিরোধ কমিটির দিক থেকে খবর এলো, পাক সেনাদের আরেকটি বিরাট দল ঢাকা থেকে আরিচাঘাট হয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে নগরবাড়ি ঘাটের দিকে। খবরের কনফার্মেশনের পর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে পাবনার সকল প্রতিরোধ যোদ্ধাকে একত্রিত হয়ে নগরবাড়ি ঘাটে সমবেত হতে বলা হয়েছে।

সেই সংবাদ পাওয়ামাত্র হারেজ উদ্দিন ঈশ্বরদী থেকে নগরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। ১০ই এপ্রিল নগরবাড়ি ঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা সন্মুখীন হলো পাকবাহিনীর। সেখানে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে হারেজ উদ্দিন গুলিতে আহত হলেন। আরো মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ অস্ত্র দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না প্রতিরোধ যোদ্ধারা। আকাশ থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে জঙ্গী বিমান থেকে মেসিনগানের গুলিবর্ষণ ছিল ভয়াবহ।

এক সময় প্রতিরোধ বাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হলো। নগরবাড়ি ঘাট-পাবনা সড়কটি সম্পুর্ণভাবে চলে গেল পাকবাহিনীর দখলে। সেখান থেকে সড়কপথে নগরবাড়ি-পাবনা-ঈশ্বরদী যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গেল। যুদ্ধে আহত হারেজ উদ্দিনকে অনেক কষ্ট করে প্রায় ৫০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হলো। বাড়িতে ফেরার পর শুরু হলো তাঁর চিকিৎসা।

যুদ্ধের ভেতর দিয়ে অগ্রসরমান পাকবাহিনী প্রায় নির্বিঘ্নেই পৌঁছে গেল পাবনায়। সেখান থেকে ১০ মাইল দূরে দাশুড়িয়া। পথের দু’ধারের অসংখ্য বাড়িঘর পুড়ে ছাই হলো, প্রাণ দিল বহু বাঙালী। প্রতিরোধ বাহিনীর একটা গ্রুপ তখন পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছে নিজেদের প্রস্তুত করে রেখেছিল। পাক বাহিনী দাশুড়িয়া থেকে পাকশীর দিকে অগ্রসর হলো না।

কিন্তু দাশুড়িয়ায় সারাদিন ধরে তারা নিজেদের অবস্থান পাকপোক্ত করে সন্ধ্যায় পাকশীতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে মর্টার থেকে গোলা ছুঁড়তে লাগলো অবিরাম। একটার পর একটা এভাবে শত শত রকেট এসে পাকশীর ব্রীজের আশেপাশে বিস্ফোরিত হতে লাগলো। এসব দেখে প্রতিরোধ যোদ্ধারা তো হতবাক। তাদের কাছে এরকম অস্ত্র নেই, তারা এসব ভাবতেও পারেনি কখনও। সেই অদৃশ্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাই তাদের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রশ্নই ছিল না।

তারা ব্রীজের মুখ থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বাধ্য হলো। ১১ই এপ্রিল পাকসেনারা থানা আওয়ামী লীগ নেতা আজিমুদ্দিনের চরশাহাপুরস্থ বিশাল পাকা বাড়ি দখল করে সেনা-ক্যাস্প স্থাপন করলো। বিমান বন্দর, সুগারক্যান রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং এগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টার প্রভৃতি জায়গাগুলো মূলত পাক-বাহিনীর মিনিক্যান্টনমেন্টে পরিণত হলো এবং দু’তিন দিনের মধ্যেই গোটা ঈশ্বরদীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলো পাক বাহিনী। এরকম পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ বাহিনী এমনিতেই নিজেদের সীমাবদ্ধতার ভেতরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যে-যেদিকে সুযোগ পেলো নিরাপদ দুরত্বে সরে গেল। তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতে পাড়ি জমালো প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।

আর সেই অবসরে পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিল স্থানীয় জামাতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের সদস্য এবং হাজার হাজার অবাঙালী বিহারী নাগরিকরা। এরপর অবস্থার পটভূমি একেবারেই বদলে গেল। প্রথম সুযোগেই আনবিক শক্তি কেন্দ্রের সেই প্রকৌশলী একরামুল হুদা, সেখানকার এক অবাঙালী নাইট গার্ড আব্দুল মান্নান আগত পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ইনফর্মার হিসেবে কাজ করতে লাগলো। এই দু’ইনফর্মারের প্রথম টার্গেট হলো হারেজ উদ্দিন আর ইউনাইটেড ব্যাংক, স্থানীয় শাখার রাইফেলধারী গার্ড আব্দুল গাফফার। প্রকৌশলী একরামুল হুদা, সেখানকার এক অবাঙালী নাইট গার্ড আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে প্রতিরোধ বাহিনী সম্পর্কে পর্যাপ্ত খোঁজ-খবর নেয়ার পর পাক সেনারা ওই দু’জনকে পথপ্রদর্শক হিসেবে সঙ্গে নিয়ে হায়েনার মত খুঁজতে লাগলো প্রতিরোধযোদ্ধাদের।

আহত হারেজ উদ্দিন মৃত্যুঝুঁকির মধ্যেও ১১ এপ্রিল রাতটা বাড়িতেই কাটালো। সকাল হতে না হতেই একজন দৌড়ে খবর নিয়ে এলো, পাক সেনাদের একটা গাড়ির বহর এদিকেই এগিয়ে আসছে। সেই গাড়িতে পাকআর্মির সঙ্গে বসে আছে একরামুল হুদা আর আব্দুল মান্নান। খবর শোনামাত্রই হারেজ উদ্দিন ঘর থেকে রাইফেলটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো পাশের বালির খাদের দিকে। খবর পৌঁছে গিয়েছিল গাফফারের কাছেও।

সেও রাইফেল হাতে যোগ দিল হারেজ উদ্দিনের সঙ্গে। ওরা দু’জন তখন জয়নাল মন্ডলের বালির খাদের মধ্যে পজিশন নিয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাক সেনাদের গাড়ির বহর পৌঁছে গেছে দৃষ্টিসীমার মধ্যে। একরামুল হুদা আর আব্দুল মান্নান গাড়িতে বসেই দেখিয়ে দিল হারেজ উদ্দিন আর আব্দুল গাফফারের অবস্থান।

গাড়ি থামিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাক সেনারা নেমে এলো এবং বালির খাদের চারদিকে ঘিরে ফেললো। কয়েকজন সৈন্য ওই দু’জনকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই হারেজ উদ্দিনের রাইফেল গর্জে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গেই পাক সেনাদের অস্ত্র থেকে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ হতে লাগলো। এরই ফাঁকে কয়েকজন পাক সেনা পেছন থেকে এসে ধরে ফেললো হারেজ উদ্দিন আর আব্দুল গাফফারকে। তারপর তারা তাদের দু’জনকে নিয়ে গেল আই-কে রোডে ইউনাইটেড মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সামনে।

সেখানে তাদের উপর শুরু হলো অমানুসিক নির্যাতন। কিন্তু তাদের দু’জনের মুখ থেকে পাক সেনারা কোনো কথাই বের করতে পারলো না। পরে সেখানেই দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে গেল সেনারা। সকাল আটটার দিকে ঘটনাটা এভাবে ঘটলেও সারাদিনই রাস্তায় পড়ে রইলো দুই শহীদের লাশ। ভয়ে সেদিকে কেউ-ই পা বাড়ালো না।

পরে রাতের অন্ধকারে সাহসী কয়েকজন আত্বীয়-স্বজন সেখান থেকে হারেজ উদ্দিনের লাশটা সরিয়ে নিয়ে নতুনহাট সংলগ্ন আফসার সরদারের পারিবারিক গোরস্থানে বিনা জানাযায় আর বিনা কফিনে সমাধিস্থ করলো। কিন্তু আব্দুল গাফফারের লাশটা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানেই পড়ে রইল শিয়াল-কুকুরের খাদ্য হয়ে। এক সময় শরীরের মাংসগুলো শেষ হয়ে গেল, পড়ে রইল কেবল কঙ্কালটা। আব্দুল গাফফারের বাড়ি ঢাকা জেলায়। চাকরির সুবাদের সে ঈশ্বরদীতে থাকতো।

সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধারের কেউ ছিল না। মাসখানেক পর শহীদ হারেজ উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মজিদ ও তার কয়েকজন বন্ধু সেই কঙ্কালটা সেখান থেকে উদ্ধার করে সসম্মানে দাফনের ব্যবস্থা করেছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর ওই দুই দালালের মধ্যে একরামুল হুদা তার বিহারী স্ত্রীকে সাথে নিয়ে লন্ডন পালিয়ে যায়। আর আব্দুল মান্নান এখন ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.