বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সেবিকা ও চিকিৎসকদের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্চনা রানী (২০) নামের ওই গৃহবধূ গত শনিবার রাতে হাসপাতালে মারা যান। এর আগে দুপুরে হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ কামরুল ইসলাম এ অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান অপারেশন) করেন।
জানা গেছে, হাসপাতালে নয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও শুধু চক্ষু বিভাগে একজন কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া বাকি পদগুলো শূন্য। গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত বছরের ১৮ নভেম্বর বরগুনা থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার পর এই পদটি শূন্য রয়েছে। এ জন্য বর্তমানে জরুরি প্রসূতিসেবা ও অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
মারা যাওয়া গৃহবধূর স্বজনেরা জানান, জেলার বামনা উপজেলার খোলপেটুয়া গ্রামের নরসুন্দর সমীর চন্দ্র শীলের স্ত্রী অর্চনা রানীকে শুক্রবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর।
সন্তান প্রসবের পর সুস্থ থাকলেও রক্তচাপ কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল।
স্বজনেরা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে অর্চনা সামান্য কাশতে থাকলে বিষয়টি তাৎক্ষণিক গাইনি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকাকে জানানো হয়। সেবিকা রোগীকে একটি ইনজেকশন দেন। এরপর তাঁর কাশি আরও বেড়ে যায়। এ সময় স্বজনেরা বিষয়টি বারবার কর্তব্যরত সেবিকাকে জানান।
কিন্তু সেবিকা তাঁদের কথায় কান দেননি। রাত আটটার দিকে প্রচণ্ড কাশিতে তাঁর পেটের সেলাই খুলে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে সাড়ে আটটার দিকে সেবিকা ও জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেন। বিষয়টি মুঠোফোনে জানালে চিকিৎসক কামরুল ইসলাম রাত সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতালে আসেন। তিনি পুনরায় রোগীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান।
রাত ১০টার দিকে অর্চনার মৃত্যু হয়।
রাত পৌনে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। অর্চনার নিথর দেহ হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় স্ট্রেচারে শোয়ানো।
অর্চনার জা মালতী রানী আহাজারি করে বলেন, ‘অন্তত ২৫ বার নার্সের কাছে গেছি। তাঁকে অনুরোধ করেছি, কেবল পায়ে হাত দেওয়ার বাকি রেখেছি।
কিন্তু নার্স আমাদের কথা শোনেননি। ওই সময় চিকিৎসা দিলে অর্চনাকে এভাবে মরতে হতো না। ’
অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে কর্তব্যরত সেবিকা বিলকিস জাহান বলেন, ‘আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি রোগীকে বাঁচাতে। খবর পেয়ে আমার সহকর্মীরা ও আমি বারবার রোগীর কাছে গেছি। ’
চিকিৎসক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগীর অ্যাকলামশিয়া ডেভেলপ করায় মৃত্যু হয়েছে।
আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ’ অ্যাকলামশিয়ার বিষয়টি অস্ত্রোপচারের আগে ধরা পড়েছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পরও রোগী কথা বলেছে এবং সুস্থ ছিল। ’ চোখের চিকিৎসক হয়ে প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও শুধু চক্ষু বিভাগ ছাড়া কোনো বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তাই জরুরি প্রয়োজনে আমি সিজারিয়ান অপারেশন করি।
’ প্রসূতির অস্ত্রোপচারের ওপর তাঁর প্রশিক্ষণ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
বরগুনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. ইউনুস আলী গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এখন দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে অন্য চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হচ্ছে। না হয় ওই রোগীকে বরিশালে পাঠানো লাগত। ’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।