বিষাদময় বর্তমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদল বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায় করার সামর্থ নিয়ে সংশয় রয়েছে আওয়ামীলীগের মত বিএনপি ও এর ঐক্যজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যেও।
বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলার পূর্বে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তাহলে স্পষ্টই বুঝতে পারা যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে যে আন্দোলন হতে যাচ্ছে তাতে আন্দোলনকারীদের কতটুকু সমর্থন রয়েছে!
মধ্যবর্তী নির্বচনকে সমর্থন করলেও বিএনপি কোন রকম আলোচনা ছাড়াই এরকম একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটি শরিক দলের নেতারা ভালভাবে মেনে নেয়নি। এদিকে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কোনরকম রাখঢাক বাদেই সরাসরি বলে দিয়েছেন যখন দরকার পড়বে ঠিক তখনই শরিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য ডাকা হবে, তবুও তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর।
এককভাবে কোনদল সরকারকে কোন দাবি মানাতে বাধ্য করার মত নজির এদেশে কখনও ঘটেনি আশাকরি ঘটবেওনা। তবে একটি প্রথা প্রায়শই অনুশীলন করা হয় আর তা হল, সরকারকে ব্যর্থ বলে এরকম দাবি তুলে বা আন্দোলন ডেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো ক্ষমতায় থাকা সরকারকে জানান দেয় যে তারা নি:শেষ হয়ে যায়নি। বিএনপিও এর ব্যতিক্রম নয়।
মধ্যবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন নেতা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করলেও আসলে কোন নেতাই হয়তো মন থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচন আশা করছেন না। কারন তারা সবাই জানেন যে, এটা একটা অবাস্তব দাবি।
যদি দাবিপূরন হয় তাহলে তাদের জন্য অবশ্যই ভাল, কারন তারা ক্ষমতায় আসতে পারছেন। তখন তারা নিজেদের সফল আন্দোলনকারী দল হিসেবে সরকার গঠন করবে এবং গর্ব করতে থাকবে, কিছু দিন যেতে না যেতে আবারও শুরু হবে সেই পূর্বের ব্যর্থ সরকারের মতই দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি, বিরোধী দল ছাড়াও নিজের দলের দু-গ্র“পের কোন্দল আর মারামারি-হানাহানি, টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজির মত নানারকম কর্মকান্ড। তাদের কর্মকান্ড দেখে বিরোধীদলগুলো উৎসাহিত হবে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে হটিয়ে দিয়ে নিজে ক্ষমতা দখল করতে। তাহলে অবস্থা কি দাড়ালো, যাহাই লাউ তাহাই কদু কিংবা মুদ্রার বিপরীত পিঠ!
দেশের বড়দল দুটি যদি শূধুমাত্র পারস্পরিক বিরোধী ধারার বক্তব্য না দিয়ে বরং বিভিন্ন রকম উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে সুনিশ্চিতভাবে এদেশের আমজনতার অনেক উপকার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কারন সবাইতো ক্ষমতা লাভের আশায় অন্ধপ্রায় হয়ে আছে।
কেউ বা ক্ষমতা ভোগের আশায় আবার কেউবা তা পাবার আশায়।
সরকারি দল যেই থাকুক না কেন তারা বিরোধী দলের কোন দাবিই আমলে নেননা। আর বিরোধীদলীয় সকল দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেয়। দলীয় প্রধান বা নেতাদের গলা ভাঙ্গা ছাড়া তেমন কিছু না হলেও ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয় সাধারন নাগরিকদের ও তৃনমূলে থাকা কিছু রাজনৈতিক কর্মীদের, এমন পরিস্থিতিতে জীবন চলে যাওয়ার মত শত শত ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু সেদিকে সরকারি বা বিরোধীদলের প্রধানদের তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যাযনা।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেটাই যেন স্বাভাবিক ব্যাপার।
দেশের বড় দুটি দলের প্রধানই রয়েছে বিদেশ সফরে, তারা সেখানেও পারস্পরিক বিরোধী বক্তব্য দিয়ে নিজের দলকে শক্তিশালী করার জন্য বিদেশি শক্তির সাহায্য কামনা করছেন। তবে আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে দেশে থাকা বড় বড় নেতাদের চেষ্টার কোন ত্র“টি দেখা যাচ্ছেনা। আসুন দেখি মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে কার কি মন্তব্য তা যেনে নেয়া যাক দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের বক্তব্য থেকেই।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিকে যৌক্তিক মনে করলেও বিএনপি আচরনে কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
তিনি বলেন, বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সাথে কথা বলেনি। তবে তারা যদি নিজে নিজে আন্দোলন করে তাহলে আমরাও নিশ্চয় তাদের অপেক্ষায় বসে থাকবো না।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই মধ্যবর্তী নির্বাচন আলোচনা করতে তারা চার দলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন।
জামাতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, এককভাবে কোন দল সরকারকে কোন দাবি মাসাতে বাধ্য করার নজির এদেশে নেই। তবে সব বিরোধী দলই যদি মনে করে, এ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, জনগনের দুর্ভোগ ততই বাড়বে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কর্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি এখন পর্যন্ত কোন আন্দোলনই করতে পারেনি। গন-অভ্যুত্থানেরর মত কোন ঘটনাও ঘটেনি। এর পরও মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি আমার কাছে মনে হচ্ছে মামার বাড়ির আবদার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, এদেশে অতীতে কোন মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়নি। এছাড়া যে দাবির পেছনে জনগন নেই, সে দাবি ব্যর্থ হতে বাধ্য।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের এ দাবিকে ’মধ্যবর্তী রসিকতা’ বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম মধ্যবর্তী নির্বাচনকে আরো বেশি জোরদার করার জন্য বলেন, শেখ সাহব যখন ছয় দফার আন্দোলন শুরু করেন তখন তার পাশে দাড়ানোর লোকও ছিলনা। আমরা মাত্র দাবিটা তুলেছি। এটা অর্জনের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রয়োজন, ভবিষ্যতে সে ধরনের কর্মসূচিতে যাব।
বিএনপির চার দলের শরিক নেতা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রথম প্রথম রসিকতাই মনে হবে।
এরশাদেও সময় বলা হয়েছিল, ক্ষমতা কি জিরো পয়েন্টে ছাড়বো? তত্বাবধায়ক সরকার সরকারের আন্দোলনের সময় ’শিশু আর পাগল’ ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল?
পরিশেষে বলতে পারি, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোন প্রয়াস বা ইচ্ছা নেই। কোন দলই কোন দলকে ছাড় দিতে চায়না, আর সেটা বিরোধী দল হলেতো কথাই নেই। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে যে কর্মসূচির পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা কতটুকু সফল হবে আমরা কেউই সঠিক ভাবে জানিনা, এমন কি যারা একর্মসূচি আয়োজন করছে তারাও না। তারা কোন সঠিক জবাব দিতে পারবেনা, মধ্যবর্তী নির্বাচনের সফলতার মাধ্যমে কি পাবে দেশের সাধারন জনগন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।