চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন মত প্রকাশ করেন।
গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, “আমাদের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। আমরা বাস্তবের বাইরে নই। দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে। এই চ্যালেঞ্জ ঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারলে সবকিছুই ঠিকমত চলবে।
নতুবা ঝুঁকি থেকেই যাবে। ”
মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মূল উদ্দেশ্য মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করা। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ ছয়মাস দেশের আর্থিক খাত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুদ্রানীতিতেই চলবে।
লিখিত বক্তব্যে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের মুদ্রানীতি হবে গত ছয় মাসের মতোই ‘ভারসাম্যপূর্ণ’।
মুদ্রানীতিতে বলা হয়, অবকাঠামো খাতসহ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগে বড় ধরনের গতিশীলতা আনা না গেলে চলতি অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জন হবে না। মূল্যষ্ফীতিও লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখাটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার ঘোষিত ষোড়শ মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মে মাস শেষে এর পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
গত অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়।
আর সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
সরকার চলতি অর্থবছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, নানা অনিশ্চয়তায় গড় প্রবৃদ্ধির উন্নতি হওয়ার আশা কম।
গভর্নর বলেন, “অবকাঠামো খাতে ও অন্যবিধ বিনিয়োগ কার্যক্রমে বড় ধরনের গতিশীলতা না আনা গেলে প্রবৃদ্ধির বাস্তব অর্জন বিগত দশ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশের চেয়ে খুব একটা বেশি হবার সম্ভাবনা কম। ”
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব মুখ্য নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপো ও বিশেষ রেপোর সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেসিস পয়েন্ট।
গভর্নর বলেন, “সাম্প্রতিক গতিধারা বিবেচনায় মুদ্রানীতিতে সুদহার ও বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি অনুপাত অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পুরানো ভিত্তি হিসেবে মূল্যষ্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন। ”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে সম্ভাব্য মজুরি ও ভাতা বৃদ্ধির চাপ, হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সরবরাহ ঘাটতির কারণে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। এছাড়া নির্বাচনের কারণে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বাড়বে।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমী বলেন, “বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানো হয়নি।
প্রবৃদ্ধি সীমিত করা হয়েছে। এ কারণে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে অর্থ সঙ্কট হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোরভাবে দেখবে, ঋণ নিয়ে কোথায় খরচ করা হচ্ছে। ”
এক কাজে ঋণ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান, নাজনীন সুলতানা, এস কে সুর চৌধুরী, প্রধান অর্থনীতিবিদ হাসান জামানসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রা নীতি ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন।
বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গ
এবারই প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে কোন ব্যাংকের ক্ষেত্রে কি ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হলো।
গভর্নর তার লিখিত বক্তব্যে বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গে বলেন, বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় তাদের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর সীমা নির্ধারণ এবং বৃহৎ ও একক ঋণ গ্রহীতার সীমার অতিরিক্ত ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন, ব্যালান্স শিট বহির্ভূত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় তদন্ত করে বেশকিছু গুরুতর অনিয়ম ধরা পড়েছে। এর প্রেক্ষিতেই সমঝোতা স্মারক।
ভবিষ্যত কেলেঙ্কারির আশঙ্কায় এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আগাম আত্মপক্ষ সমর্থন’ কি না জানতে চাইলে এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যা প্রয়োজন মনে করেছে তাই করেছে। এটি সবাইকে জানানোও দরকার। কোনো আত্মপক্ষ সমর্থন নয়। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।