স্বাধীনতাই আমাদের শক্তি, সবচেয়ে প্রিয় ও মূল্যবান । স্বাধীনতা জন্মগত অধিকার, আজন্ম সাধ, সৈকতবিহীন একটি প্রস্তরময় দ্বীপের মত, উন্নতির শ্বাস-প্রশ্বাস। আলো ব্যতীত পৃথিবী জাগে না,স্রোত ব্যতীত নদী টেকেনা, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতি বাঁচেনা। শৃঙ্খল ম্বর্ণ নির্মিত হলেও কেউ বরণ করতে চায়না। মানুষের চিন্তার ,বলার এবং লেখার স্বাধীনতা বিহীন সমাজ পঙ্গু ও পঁচা সমাজ।
স্বাধীনতার বিনিময়ে পরাধীন স্বর্গরাজ্যও যৌবন শক্তি প্রার্থনা করেনা। কেননা স্বাধীনতাহীনতায় মস্তিষ্ক এমন একটি কারাগারে পর্যবসিত হয়। যার রুদ্ধ দুয়ারে হাত-পা বাঁধা চিন্তাধারা মাথা কুটে মরতে থাকে। স্বাধীনতা উন্নতির মুখ্য সহায় । মানুষের চিন্তা করিবার ও ব্যক্ত করিবার স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক, তদ্রুপ সকল বিষয়েই স্বাধীনতা আবশ্যক যতক্ষণ না কারও অনিষ্ট হয়।
স্বাধীনতার শাশ্বত তীব্র আকাংখা কবির ভাষায়-"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়? দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে কে পরিবে পায়?" স্বাধীনতা শুধু ঘোষণা দিয়েই হয়নি। অত্যাচারীর রক্তে সঞ্জীবনী লাভ করেছে স্বাধীনতার বৃক্ষ । স্বাধীনতা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এসেছে। নতজানু হয়ে বাঁচা অপেক্ষা শির দাঁড়া উচুঁ করে দাঁড়িয়ে মৃতু্যবরণ করাও শ্রেয়। স্বাধীনতা পেয়েও একে অর্থবহ করতে সতর্ক থাকা জরুরী যাতে কোন প্রতিবন্ধকতাই দেশের সার্বিক অগ্রগতি ব্যাহত না করে ।
দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয় তবেই দেশ প্রকাশিত। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যকার অনাকাংখিত ব্যাবধান কমিয়ে আনতে দরকার সম্মিলিত প্রয়াস ।
আমাদের স্বাধীনতা ও বর্তমান বাস্তবতা:
স্বাধীনতা লাভ করা যেমন কঠিন,স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমনি কঠিন।
আজ আমাদের অস্রের সংগ্রাম শেষ হয়েছে।
এবার স্বাধীনতার সংগ্রাম কে দেশ গড়ার সংগ্রামে রূপান্তরিত করতে হবে।
মুক্তির সংগ্রামের চেয়েও দেশ গড়ার সংগ্রাম কঠিন।
তাই দেশ গড়ার কাজে আমাদের সর্ব শক্তি নিয়োগ করতে হবে।
- শেখ মুজিবর রহমান
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে চুড়া্ন্ত; বিজয় লাভের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এ তেইশ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের। নিজেদের যথাযথ অধিকার আদায়ের জন্য সংঘটিত ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা, ৬৯'র গণঅভু্যত্থান, ৭০'র নির্বাচন ও তৎপরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন যা সর্বশেষে ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। বাংলাদেশ নতুন ও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করেই মাত্র নয় মাসে গ্রহণ করে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। সংসদীয় গণতন্ত্র, স্বাধীন বিচার বিভাগ, অর্থনৈতিক সাম্য, মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান করে বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে এ দেশে সামরিক শাসন আসে।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পরত সামরিক ব্যক্তি বর্গের দ্বারা এদেশ পরিচালিত হয়েছে। ১৯৯০ তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আবার শুরু হলেও ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে অনেক বার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর অবিবেচক আচরণের কারণে সামরিক বাহিনী সমর্থিত অনির্বাচিত সরকার দু'বছর অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করেছে। শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতাই সব নয় অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে দেশের বর্তমান বা্স্তবতা হচ্ছে,
রক্তের আলপনা এঁকে যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি বাংলাদেশের রাজকীয় ভাষারূপে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে।
সেই ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণে আমাদের অনীহার অবসান এখনো হয় নি। অশুদ্ধ বানান, অশুদ্ধ শব্দপ্রয়োগ, অশুদ্ধ বাক্যগঠন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে। স্বদেশে ঘরে ঘরে শিশুরা যে হিন্দি গান, সিরিয়াল, কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠছে, সেক্ষেত্রে আমাদের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণই কী নেই? একটা সময় এমন হবে নাতো ঘরেই পরবাসী হয়ে আছে মাতৃভাষা-বাংলা ভাষা। বিদ্যমান বাস্তবতায় সম্ভবত বাংলাদেশে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যে এদেশের মানুষের মাতৃভাষা কী ইংরেজি না বাংলা? এর উত্তর সম্ভবত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে।
সম্ভবত এমন উত্তর পাওয়া যেতে পারে যে, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মাতৃভাষা ইংরেজি, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তশ্রেণীর মাতৃভাষা বাংলা।
দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠা এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি শত আনন্দ, বেদনা, দুঃখের মাঝেও আমাদেরকে নতুন ভাবে সাহস, চেতনা, উৎসাহ জোগায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে আমাদের সংস্কৃতি গৌণ হয়ে পড়ছে। অন্য সংস্কৃতির অনুসরণ করতে গিয়ে উদ্ভট আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতি তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছে।
অসম এক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় ধনী আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে।
একদিকে বহুতল ভবন অন্য দিকে পথের পাশে ভূমিহীনদের ছাপড়া ঘড়। রাজপথে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অন্যদিকে বাড়ছে দিনমজুর শ্রমিকের দীর্ঘ লাইন। অভিজাত হোটেলের সংখ্যাও বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা। পুঁজিপতিদের বিনিয়োগের চেয়ে লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা রাখতে বেশি পছন্দ । আর যারা শিল্প কারখানা তৈরি করছেন তারা শ্রম শোষণে বেশি উৎসাহী।
ফলে অসহায় মানুষ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। মুনাফা লাভকে গুরুত্ব দিয়ে জনস্বার্থকে উপেক্ষা করতে গড়ে উঠছে সিন্ডিকেট। ফলে দ্রব্যের মূল্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাপ পড়ছে মধ্য ও নিম্নবিত্তদের ওপর। নামে মাত্র বেতন দিয়ে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করতে গার্মেন্ট মালিকদের হৃদয় একটু গলেনি।
বরং শোষিত শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের মিছিলে নির্বিচারে লাঠিপেটা আর গ্রেপ্তার চোখে পড়ছে সর্বত্র। শ্রমিকের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতো দূরে থাক ক্রমান্বয়ে তারা যে অপুষ্টি আর অনাহারে মৃতু্যর পথযাত্রী সেদিকে কারও নজর নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রশাসন মারাত্মক দুটি বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছে। একটি হচ্ছে দলীয়করণ অন্যটি আত্মীয়করণ। যোগ্যতার মূল্যায়ন না করেই শুধুমাত্র মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে চাকুরি বঞ্চিত, ওএসডি এবং পদোন্নতি হয়।
নির্লজ্জ দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের কাছে যোগ্যতা ও মেধা মূল্যহীন । ফলে মেধাহীন, দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ও দলীয় কর্মী প্রশাসনে সুযোগ পায় এবং প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিরোধী পক্ষকে দমন-নির্যাতন করা ক্ষমতাসীনদের অন্যতম মিশন । যার কারণে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, ঘের দখল, জমি দখল, বাড়ি দখল, স্থাবর সকল সম্পত্তি দখল, গাছ-ফসল কেটে নিয়ে যাওয়া এমনকি নারীদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে দেয়া, হত্যা করা বা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা যেন সাধারণ বিষয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সভা, সমাবেশ, মিছিল ও আন্দোলনকে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া ক্ষমতাসীনদের অভ্যাস। বিনা কারণে বিরোধীদের প্রতি মামলা ও গ্রেপ্তার ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত যেন। বিভিন্ন আইন করে বিরোধী দমন এর ফলে গণতন্ত্র আমাদের দেশে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতার আর বিরোধীদলের অবিবেচক আচরণের কারণে গণতন্ত্র আমাদের দেশে ব্যর্থ মতবাদে পরিণত হতে চলেছে।
একদল যে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে অন্যদল ক্ষমতায় এসে তা পরিত্যাগ করাই আমাদের দেশের নীতি (!)। কোন স্থানে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলে অন্য দল সুযোগ পেলে তা ভিন্ন স্থানে স্থানান্তর না করলে যেন আমাদের রাজনীতি হয় না। আর কোন স্থাপনার নাম গ্রহণেতো কোন কথাই নেই। যার যার নিজের বা দলীয় নাম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধহ্স্ত; তবে নাম পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব সেরা। আর কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে দলীয় লোককে সুযোগ দান এবং মাকাল ফল মার্কা উন্নয়নে আমাদের জুড়ি মেলা ভার।
সংকীর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমরা বিচার বিভাগকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছি ও করছি। রাষ্ট্রের সফলতার শর্ত যেখানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ সেখানে আমারা সরাসরি আবার কখনো ভিন্ন পদ্ধতিতে এ বিভাগকে প্রভাবিত করি। যদি আইনের শাসন বা গণতন্ত্রই আমাদের উদ্দেশ্য হয় তাহলে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চিন্তা আমাদের মাথায় কীভাবে আসে? আমরা মূলত আইন করি আইন ভঙ্গ করার জন্য বা সে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে সার্থেদ্ধারের জন্য। যার কারণে কখনোই আমাদের দেশে বিচার বিভাগ প্রশ্নের ঊধের্্ব উঠতে পারেনি।
ক্ষমতার অংশীদারদের প্রায় সকলেই যার যার অবস্থান থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে অভ্যস্ত।
নিজের স্বার্থোদ্ধার, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যক্তিগত ব্যবহার, অন্যকে বঞ্চিত করার মানসিকতা আমাদের চরিত্রে পরিণত হয়েছে। আর দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা কয়েকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দুর্ভাগ্য অর্জন করেছি। টাকা ছাড়া কাজ হয়না বলেই ৫ হাজার টাকার কর্মচারী আজ ৩০ কোটি টাকার মালিক। আর রুই কাতলা ব্যক্তিদের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। দুর্নীতি আজ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।
টিআইবির রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার এবং ২০১০ সালের জরিপে ১০ মাত্রায় ২.৩% দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসাবে স্বীকৃত।
দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন, সংগ্রাম ও নানা ঘটনার সূত্র ধরে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। এ দীর্ঘ সময়ে বহু লোক বিভিন্ন অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়ে স্বার্থের নেশায় অন্ধ হয়ে আমরা অনেককেই ভুলে গেছি। অনেককে তার অবদানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি।
কাউকে বা তার অবদানের চেয়ে কম আবার কাউকে বেশি মর্যাদা দিয়েছি। আমাদের ইতিহাস নিয়ে আমরাই যদি ঐকমত্যে আসতে না পারি তবে কীভাবে এ ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের নগ্ন হ্স্তক্ষেপ নতুন শঙ্কার সৃষ্টি করছে। আমাদের রাজনীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ঝটিকা সফর শঙ্কার সৃষ্টি করে। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে আমাদের রাজনীতিবিদদের ধরনা দেয়ার বিষয়টিও মারাত্মক হতাশার সৃষ্টি করে।
নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কথা আমরা ভুলে গেছি। যার ফলে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেই পররাষ্ট্রনীতির আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়।
স্বাধীনতাযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের মানুষ ৭৫হাজার কোটি টাকার সাহায্য প্রদান করেছিল তবু আমরা দেশটাকে গড়তে পারিনি। এপর্যন্ত যত বৈদেশিক অনুদান এসেছে তার ৭৫ ভাগ লুট হয়েছে। অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের জন্ম হয়েছে।
আমাদের শ্রম সস্তা বলেই বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এখানে কারখানা খুলে পণ্য উৎপাদন করছে। আমরা আমাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারিনি; প্রাকৃতিক সম্পদেরও উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর এদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল।
তবু অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ।
১৫ কোটি মানুষ এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এ দেশের মাঠে এখনও সোনার ফসল ধান ও পাট জন্মে। এ দেশের মাটির নীচে রয়েছে তেল ও গ্যাসের অফুরন্ত ভাণ্ডার। সুন্দরবনের মত ম্যানগ্রোভ বন আমাদের অমূল্য সম্পদ। ইলিশ ও চিংড়ি খুলে দিয়েছে আমাদের সম্ভাবনার দুয়ার।
রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পের অবদান এখন অনেক অনেক গুন বেশি। এ দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ আশান্বিত করে চলেছেন। এ দেশের মেধাবীদের নতুন নতুন আবিষ্কার উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। নানাবিধ এ সম্ভাবনা গুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়াতে পারে যদি সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান ও সম্ভাবনার বিকাশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
স্বাধীনতার চলিস্নশ বছর
স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তবে এখনো প্রবৃদ্ধির সুফল সকল মানুষের কাছে পেঁৗছানো যায়নি। দারিদ্র্য ঘোচানো আর বৈষম্য দূরীকরণ কৃষকের কল্যাণ ও গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন ছাড়া কোন দিন সম্ভব নয়। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। নতুন প্রজন্ম চায় দেশের প্রত্যেক মানুষ কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন পরিচালনার জন্য চাহিদা ও পছন্দানুযায়ী সব সময় যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাবে, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা পাবে, মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারবে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজ পতাকার মান অক্ষুণ্ন থাকবে, স্বাধীন আত্দনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমরা মাথা উচুঁ করে নিজেদের অ্স্তিত্বকে জানান দেবে।
শ্রুতিসুখকর কথামালা নয়, রাষ্ট্রের অঙ্গীকার, দূর দৃষ্টি সম্পন্ন লাগসই পরিকল্পনা, উৎকর্ষিত প্রযুক্তি প্রয়োগে দক্ষ নিবেদিত কর্মী বাহিনী, সহজপ্রাপ্তি, নিরবচ্ছিন্ন তদারকি ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত টেকসই উন্নয়ন হবে।
আগামীতেও বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তবে আমাদের সমাজের চাহিদার আলোকে আমাদের নেতৃবৃন্দ, নীতি নির্ধারকগণ যদি মজবুত অর্থনীতি ও সুপরিকল্পিত উন্নয়ন ধারা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন এবং নতুন প্রজন্মকে উৎপাদন ও কর্মমুখী করতে পারেন তবে কোন প্রতিবন্ধকতাই সামনে এগিয়ে চলার গতিকে থামাতে পারবেনা । কিন্তু বা্স্তবে দেখা যায়,
বহুদলীয় গণতন্ত্রকে একটি সুখী, নির্ভেদ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি পরিপূর্ণ, স্বনির্ভর এবং প্রগতিশীল সমাজে রূপ দেয়া সম্ভবপর হয়নি। বাক স্বাধীনতা অনেকাংশে খর্ব এবং সাধারণ মানুষ বৃহৎ অর্থে অধিকারবঞ্চিত।
বাংলাদেশে ১ কোটি সাড়ে ১২ লাখ ভূমিহীন ও প্রা্ন্তিক চাষী রয়েছে। দেশে নিরক্ষর ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে নিম্নবিত্ত, ভাসমান মানুষ ও বস্তির সংখ্যা। ২০০০ সালের দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৬০ লাখ মানুষ বাস করে ;বস্তিতে এবং ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় মাত্র ৭৫০ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনের বিভিন্ন মডেল নিয়ে বিশ্বব্যপী বিভিন্ন আলোড়ন সৃষ্টি হলেও ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। সবোচ্র্চ সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাসের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে বাংলাদেশের। ২০২০ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশ ভুমি সমুদ্র গর্ভে চলে যাবার আশংকা রয়েছে। আসবে খাদ্য উৎপাদনে আঘাত।
উদ্বাস্তু ভুমিহারাদের চাপ কমাবে আবাদী জমি। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট ( আইএফপিআরআই) প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০০৮(জিএইচআই) এ ৩৩ টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশের ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সব সময় জোগাড় করতে পারেনা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেশের খাদ্য সংকটের যে চিত্রটি দেখা যায়, ৫০% পরিবার বছরের কোন না সময় খাদ্য সংকটে থাকে,২৫% পরিবার নিয়মিত ভাবে সারা বছর খাদ্য সংকটে থাকে,১৫% পরিবার ১ বেলা খেয়ে পরের বেলায় খাদ্য নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে,৭% পরিবার কখনই তিন বেলা খেতে পায় না।
১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের গ্যাসের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়বে বহুগুণ।
ভারি শিল্পের সম্প্রসারণ শক্তির অভাবে ব্যাহত হবে।
যেকোন বিচারেই বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা। মোটামোটি ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি নিয়ে আমরা সকল খাতেই খোঁড়াচ্ছি। বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুত সংকট এত তীব্র, অথচ দেশের মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। তাই সবাইকে বিদ্যুত সেবার আওতায় আনা হলে এই সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে।
ড. আকবর আলি খান বলেছেন, দুর্বল জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ অর্জন না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না| আর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত বেসরকারিকরণের নীতিগত অবস্থানের কারণে দরিদ্র শ্রেণীর সুযোগ সুবিধা হ্রাস পাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে দরিদ্র জনগণের, বাড়ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তের সংখ্যা।
জাতিসংঘের একটি মূল্যায়ন নিরিখে বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় কনজেস্টেড নগরীতে পরিণত হবে ঢাকা। পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন পরিবেশবিদ ও নগর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা।
আমাদের প্রাপ্তি
উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেরই রয়েছে
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা।
-প্রয়াত অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক
বাংলাদেশকে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিচারে ফ্রন্টিয়ার ফাইভ শীর্ষক তালিকায় পাঁচটি দেশের একটি হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্বখ্যাত সংস্থা জেপি মরগ্যান।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাচ - এর প্রধান অর্থনীতিবিদ জেমস ও. নেইল এর ভাষায়, বাংলাদেশ হচ্ছে ব্রিক-এর ( ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চীন) পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় নেঙ্ট ইলেভেন বা পরবর্তী১১টি দেশের অন্যতম একটি। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর বা এসঅ্যান্ডপির মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশকে সভ্রেন ক্রেডিট রেটিং বা সার্বভৌম ঋণমান নির্ণয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে আ্ন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু নেতিবাচক ধারণা থাকলেও অনেকগুলো ইতিবাচক দিক ও নানা ধরণের অর্জনও রয়েছে।
ড.ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তি, বাংলা ভাষার আ্ন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, ক্রিকেটে উন্নতি দেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী- বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২০০৮ সালে ১২ তম এবং ২০০৯ সালে ৮ম; বিশ্ব রেমিট্যান্সের প্রায় ২.৫৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ গত নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিক থেকে মোট জিডিপিতে বছরে ৫ শতাংশের ওপরে এবং বিগত ৭/৮ বছর ধরে প্রায় ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের জিডিপি ২০১৫ তে হবে ৮, ২০২১ সালে হবে ১০ । ড. আতিয়ার রহমান বলেন, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮%এ উঠবে।
২০২০ Bangladesh: long Run Perspective Study শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২০ সাল নাগাদ কমপক্ষে ৮০০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনার-এ প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ৩০ টি আউট সোর্সিং দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মত স্থান পেয়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১০ অনুসারে , বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের ৭৭.১৭% তৈরি পোশাক থেকে আয় করে। ২০১১ সালের ১লা জানুয়ারি ইউরোপীয় কমিশন রুলস অব অরিজিন শিথিল করায় বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এদেশের তৈরি পোষাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের অন্যতম।
বাংলাদেশই এলডিসি-ভুক্ত একমাত্র দেশ যেটি অভ্যন্তরীন প্রয়োজন মেটানোর পর রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে রফতানি খাতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড-এর নিজস্ব খামারে উৎপাদিত কুমির রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র হচ্ছে ঔষধ শিল্প। বাংলাদেশে উৎপাদিত ঔষধের কোটার ব্যাবস্থা রয়েছে বিশ্ব বাজারে । ৬১ দেশে এদেশের ঔষধ রপ্তানী হচ্ছে।
আমাদের প্রত্যাশা
এদেশ হিন্দুর নয়, মুসলমানদেরও নয়।
এ দেশ কে যে নিজের দেশ বলে ভাববে এদেশ তার। এদেশের কল্যাণ দেখে যার মন আনন্দে ভরে উঠবে এ দেশ তার। এ দেশের দুঃখে কাদঁবে যে এদেশ তার। আর তার এবং তাদের এদেশ যারা এদেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে ও ভবিষ্যতেও দেবে।
- এ কে ফজলুল হক
আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, অর্থনৈতিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা , উন্নত জাতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
এজন্য আমরা চাই,
২০২১ সালের মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। দেশের সর্বত্র বিনিয়োগ এবং কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে রাজধানীর বাইরে শিল্পকারখানা স্থাপন করা হবে।
দারিদ্র্যের পকেট খ্যাত আইলা সিডর বিধ্বস্ত ও মঙ্গা এলাকাগুলোতে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রথাগত ব্যাংকিং থেকে বেড়িয়ে এসে সকল শাখা সমূহকে আধুনিক ও গতিশীল করে গড়ে তোলা হবে। দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে উন্নত ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে এসএমই, দারিদ্র বিমোচন, প্রতিবন্ধী , নারী উদ্যোক্তা ও কৃষি উৎপাদনে ঋণ প্রবাহ বাড়য়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে।
বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। Product Development , International Marketing এবং Full Security কে গুরম্নত্ব দেয়া হবে।
আমাদের শিল্পায়নের প্রক্রিয়াটা যদি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ভিত্তিক হয় তাহলে তাদের পৃষ্টপোষকতার জন্য রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রতি বছর ১৮ লাখ নতুন মুখ শ্রম শক্তিতে যোগ হচ্ছে। এরপরও বহু যুবক বেকার থেকে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে যুবকদের বিভিন্নক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা এবং উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা দরকার। নবীনদের মেধা ও প্রবীনের অভিজ্ঞতাকে জাতির উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে প্রচারণা চালানো হবে।
বিশ্ববাজারের শ্রমের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের জনশক্তিকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে রুপা্ন্তরিত করা হবে এবং বিশ্বের শ্রমবাজারগুলোতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় প্রবেশ করানোর প্রয়াস বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশের জুতা, খেলনা, ফার্নিচার শিল্পকে বিশ্বের অনেক দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম করতে উন্নত বিশ্বের সুযোগ সুবিধাগুলো উন্মুক্ত করণে সরকারের উদ্যোগ বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশের কৃষির উন্নতির জন্য - উৎপাদন উপকরন বাজার রেগুলেশনের আওতায় রাখা, সেচের জন্য বিদ্যুত এবং ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করা, পরিবেশ বান্ধব এবং দেশী জাতের প্রাধান্য রক্ষা করে এমন প্রযুক্তিগত গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো এবং সমতাভিমুখী প্রবৃদ্ধির জন্য অবশ্যই ভূমি সংস্কার ও আবাদ যোগ্য জমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার মাত্র ৮% বাস্তবায়ন হয় বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে। অথচ সর্বদা আমাদের সকল নীতিপ্রনয়নে দাতাগোষ্ঠী নাক গলানোর চেষ্টা করছে। স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসি, পিআরএসপি ইত্যাদির মাধ্যমে তারা আমাদের ব্যায়ের খাত সংকীর্ণ ও নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। এসব বন্ধ করা হবে।
সমাজের প্রতিটি স্তরেই আজ দুর্নীতি বিরাজমান। বর্তমান বাংলাদেশে বিদ্যমান দুর্নীতিসমূহ হচ্ছে; Bribery, Smuggling, Unfairness, Misuse of power, Misdirect, Nepotism, Deprive of legal rights , Evasion,Extending Influence, Delay in working ইত্যাদি। দুর্নীতির কারণ Lust for Money,Demonstration effect,Satellite culture, Poverty, Unemployment, Law and order situation,Illusion for aristocracy, Political patronage,Lack proper education,Social degradation,Availabilities of arms এর মধ্যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নই দুর্নীতির প্রধান কারণ। দুর্নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের সাধারণ জনগণ এবং সৎ ও ভদ্র শ্রেণী। আমরা চাই দুনর্ীতিমুক্ত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে পর্যাপ্ত সেবাকে তাদের দোরগোড়ায় সহজসাধ্য ও সময়মত পেঁৗছে দিতে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হবে।
দেশে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনায় বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ করা হবে। গোটা দেশের ভৌত পরিকল্পনা ভাবা হবে। জাতীয়ভাবে সমগ্র দেশের জন্য যেমন, তেমনি প্রতিটি শহর ও গ্রামের পরিচালন ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।
পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপন ও আদিবাসী সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বা্স্তবায়ন করা হবে ।
এজন্য সেবামূলক সংগঠন বা স্থানীয় নানা ক্লাব গঠন করে আইটির সাথে সম্পৃক্ত করে জ্ঞানভিত্তিক সচেতন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
রুগ্ন হয়ে পড়ছে আমাদের শ্রমিকেরা। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এখন ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। প্রা্ন্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হবে।
পানির জন্য হাহাকার বাড়ছে।
পানির এ অপচয় রোধ করে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা লাভের অধিকার এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডের অধিকার থেকে বঞ্চিত যেকোনো শিশুই শিশু শ্রমিক। ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতামুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পূরণে এই অসহায় শিশুকেও শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ফান্ডের জন্য আ্ন্তর্জাতিক ফোরামে অর্থনৈতিক অনিয়ম রুখে দিতে দরকষাকষির সামর্থ্য ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হবে। আগামীতে পুঁজির প্রবাহকে দরিদ্রমুখী করা হবে।
বাংলাদেশের ৬৩% কর্মসংস্থানের যোগানদাতা দরিদ্র কৃষক ও খামারিরা। তাদের নানা ঝুঁকি কাটিয়ে উঠে নতুন উদ্যোমে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। ঘাম ও রক্তের সম্মিলনে কৃষককে ক্ষেতে দেখতে শস্যবীমা , কৃষিবীমা চালু করা হবে। কৃষি-কৃষকের সার্বিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবিলায় কৃষি গভর্ানেন্স প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শিক্ষা ও করণীয়
তালি জোড়া দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।
চাই সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেম ও দুনর্ীতিমুক্ত বাংলাদেশ।
- নোবেল বিজয়ী অর্মত্য সেন
ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মো: আতাহারুল ইসলামের মতে, ২০৫০ সালের দিকে জনসংখ্যা হবে কমপক্ষে ১৮.৮ কোটি এবং সর্বোচ্চ ২৪.৪ কোটি। কোনও কোনও সংস্থার মতে ২০৫০ সালে ২৮ কোটিও নাকি হতে পারে। অনুমান করা যায় ২০৫০ সালে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ হাজার ছোট, মাঝারি, বড় নগর থাকবে , থাকবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ গ্রাম। সুতরাং ভবিষ্যতের বা্স্তবতাকে মাথায় রেখেই আমাদের বর্তমানকে সাজাতে হবে।
সেক্ষেত্রে-
উত্তরবঙ্গের মঙ্গা কবলিত অঞ্চলগুলোতে সরকার ও বেসরকারী সংস্থাকে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। আর স্থানীয়ভাবে সমস্যার কারণ ও তার গতি প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে প্রান্তিক মানুষজনের ওপর।
মূল্যস্ফীতি হওয়ার আগে চিহ্নিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা `দরকার । প্রতিষ্ঠানগুলোতে এজন্যে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি ,দক্ষ পরিচালক , হিসাব নিরীক্ষার উন্নত মান । এ জন্য উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা লাগবে I আইনের ব্যাপক সংশোধন প্রয়োজন্।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রামীণ খাতে অর্থায়ন বাড়াতে হবে| দেশের মোট আমানতের ৮৭ ভাগ এখনও শহরে।
গ্রামের ১৩ ভাগ আমানতের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮ ভাগ। ব্যাংকগুলোর ঋণের ৯২ ভাগই বিতরণ করা হয়েছে শহরে। শহর ও গ্রামের এই অর্থনৈতিক বৈষম্যকে রাষ্ট্রীয় নীতি এবং সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করি| শহর ও গ্রামের মধ্যে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য গ্রামীণ খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবকাঠামো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরী|
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার| সিদ্ধান্তহীনতা ও অস্বচ্ছতা বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নকে আরো পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই কতর্ৃপক্ষকে এব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
উন্নয়নের মূলধারায় নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
তারা যেনহিডেন ওয়েলথ | বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উন্নয়নের জন্যই নারীদের উন্নয়ন প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেশকে সক্ষম করে তুলতে মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং তাদের মাঝে দ্রুত তহবিল সরবরাহের জন্যে কার্যকর ভুমিকা নিতে হবে।
রাজধানীর ন্যায় সকল সুযোগ-সুবিধার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রতিটি বিভাগীয় শহরকে সম্প্রসারিত করতে হবে|কেননা জনসংখ্যার চাপে ঢাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া ঢাকাকে রক্ষা করা সম্ভব হবেনা।
National Adaptation Programme of Action- NAPA কে কার্যকরী ও গতিশীল করা হবে।
কৃষি, পরিবেশ ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি কার্যকরী ও অর্জনযোগ্য রোডম্যাপ অনুযায়ী উন্নয়ন ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে গ্রামমুখি করতে শুধু সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আর লেখালেখি কিংবা টকশোর পাশাপাশি গ্রামভিত্তিক কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে তা বা্স্তবায়নের মধ্য দিয়ে কাংখিত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
সামাজিক ক্ষেত্রে কর্মসূচির লক্ষ্যই হবে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, রোগব্যাধি ও পাপাচার দূরকরে সামাজিক কল্যাণ সাধন করা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কর্মসূচি হবে, আর্থিক দুর্গতি ও সুদভিত্তিক ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করা এবং সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা। ভূখন্ড পুনরুদ্ধার, রিরোধী শক্তির সাথে লড়াই, ইচ্ছার স্বাধীনতা এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সংরক্ষণেই সামরিক ক্ষেত্রের কল্যাণ প্রয়োজন।
মিডিয়া ও প্রচারক্ষেত্রগুলোর কর্মসূচীর লক্ষ্য হবে, আদর্শ প্রচার, নৈতিক শিক্ষার ব্যাখ্যা, আদর্শের মধ্যমপন্থার বৈশিষ্ট ও ব্যাপকতা স্পষ্ট করা।
বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে কাজর উদ্দেশ্যই হবে ভ্রান্ত ধারণার সংশোধন করে সঠিক ধারণার সৃষ্টি এবং ভ্রান্ত ধারনা ও ত্রুটিপূর্ণ মতামত সংশোধন। বুদ্ধিবৃত্তিক ও জ্ঞানের ক্ষেত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট বিরাট সমস্যা। বর্তমান যে যুগে বাস করছি তার পারিপাশ্বর্িক বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞানের গুরুতর অভাব দেখা যায়।
নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রেও অজ্ঞতা প্রকট। এ'টি দূর করা।
দৃষ্টিনন্দন এই পৃথিবীর বিমুগ্ধ সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য উপাদান হচ্ছে কৃষি সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক গৌরবমন্ডিত শিল্প । মানুষের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যগত পেশা কৃষিই সর্বাপেক্ষা দৃশ্যমান ও অপরিহার্য উৎপাদন উপহার দেয়। কৃষি গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন, সভ্যতার ঊষা, উন্ন্য়নের দিশা।
অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম নিয়ামক শক্তি কৃষিই আমাদের বেচেঁ থাকার অবলম্বন। শুধু কৃষিই নয়, কৃষক আমাদের গর্বের ধন,সাহস।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।