প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টন মডেল থানা এলাকায়। এছাড়া ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের মহানগর কার্যালয় এবং মুক্তাঙ্গনও এ থানার আওতায়। ফলে থানার পুলিশকে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে।
এ কারণে থানা এলাকার মানুষ যথাযথ পুলিশি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে রাজনৈতিক চাপ ও অনিয়মের অভিযোগও।
মডেল থানা হিসেবে যেসব বাড়তি সুবিধা থাকার কথা সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। থানার কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ মেনে নিয়েও বললেন, 'পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। '
মানুষকে উন্নত পুলিশি সেবা দেওয়ার উদ্দেশে ২০০৯ সালে পল্টন থানাকে মডেল থানায় উন্নীত করা হয়। মডেল থানার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সুন্দর কক্ষে বসার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ, টয়লেট ইত্যাদি থাকার কথা। সরেজমিন দেখা যায়, পল্টন থানায় অভ্যাগতদের বসার ব্যবস্থা থাকলেও পানি পানের ব্যবস্থা নেই।
থানা ভবনের ভেতরের দিকে টয়লেট থাকলেও সেখানকার চিত্র ভয়াবহ। অস্বাভাবিক অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধের কারণে ভেতরে ঢোকাই মুশকিল। টয়লেটের একপাশের বড় একটি জানালা বস্তা দিয়ে বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে থানা চত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে রয়েছে জঙ্গল এবং বিভিন্ন ঘটনায় আটক গাড়ি। থানার প্রবেশমুখেও দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পল্টন থানার ব্যাপ্তি। এর মধ্যে রয়েছে চামেলীবাগ, রাজারবাগ, জিপিও, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, শান্তিনগর এবং বিজয়নগর। এ থানায় প্রায় দু'লাখ মানুষের বাস। এ সংখ্যক মানুষকে পুলিশি সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যানবাহন নেই পল্টন থানায়। বর্তমানে দুই পরিদর্শক (এসআই), ১৩ উপ-পরিদর্শক (এসআই), ১৯ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও ৩৭ কনস্টেবল রয়েছেন।
সম্প্রতি আরও ৫০ কর্মকর্তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও সাড়া মেলেনি। এদিকে নিজস্ব গাড়ি রয়েছে মাত্র তিনটি। ফলে ঘটনাস্থলে দ্রুত পেঁৗছানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। দ্রুততর পুলিশি সেবা দিতে হলে অন্তত পাঁচটি গাড়ি প্রয়োজন বলে জানান ওসি।
যদিও সম্প্রতি থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা চত্বর থেকে অন্যত্র ইট বহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান।
এদিকে ওসি না থাকলে পল্টন থানায় দায়িত্ব পালনে দেখা দেয় ঢিলেমি। এক দুপুরে থানায় গিয়ে দেখা যায়, ওসি থানা থেকে বের হওয়ার মাত্র দু'মিনিট পরই নিজ আসন থেকে উঠে যান সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার (এসডিও) ও ডিউটি অফিসার। ডিউটি অফিসার অল্প সময়ের মধ্যে ফিরলেও পরের এক ঘণ্টা এসডিওর আসনটি ফাঁকাই পড়ে থাকে। একই সময়ে থানার সেরেস্তা ও উপ-পরিদর্শকদের কক্ষে গিয়েও কাউকে দেখা যায় না।
ওসি শহীদুল হক বলেন, সব থানাতেই ওসির অনুপস্থিতিতে একটু এ রকম হয়। একটা মানুষ তো সব সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এসডিও না থাকলে ডিউটি অফিসার তার কাজ করবেন।
রাজধানীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকাই পল্টন থানার আওতাধীন। থানার কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে ওয়ার্ড কমিশনার খন্দকার আবদুর রব বলেন, 'থানায় গেলেই বিষয়টা বুঝতে পারবেন।
তারা যেন সব সময় তটস্থ হয়ে থাকে কখন কোন নির্দেশ আসে। ' তবে এখানে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনা তেমন ঘটে না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, আশপাশের অন্য থানার তুলনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।
ওসি বলেন, সভা-সমাবেশ নিয়ে পুলিশকে সব সময় সতর্ক থাকতেই হয়। অনেক সীমাবদ্ধতার পরও তারা উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বিশেষ করে মডেল থানা হওয়ার পর কিছু নতুন বিষয় যোগ হয়েছে। যেমন_ থানার অভ্যর্থনা কক্ষে সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার থাকেন। তিনি সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করেন। এছাড়া অবকাঠামোগত পরিবর্তনও হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন কারণে হয়তো কিছু কমতি থেকে যায়।
সেবাদানের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের আচরণ ও মানসিকতা একটি বড় বিষয়। তবে এখনকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ৯০ শতাংশ ভালো। আগে পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতেও টাকা নিত বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন আর তেমনটা শোনা যায় না। তিনি জানান, তার থানায় এখন বেশির ভাগ মামলা হয় বিদেশ পাঠানোর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে।
সম্প্রতি থানার সবচেয়ে আলোচিত মামলাটি সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় করা। এ মামলার দুই আসামিকেই ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।