ভুতের গল্প। বাস্তব ভূত না। অবাস্তব। তারপর যদি কেও ভয় পায় বা যাদের মন দুর্বল বা স্পর্শকাতর তাদের প্রতি অনুরোধ যেন এই গল্প না পড়ে। যদি আমার মত মন মানসিকতা হয় ভূত প্রেত সব দুর্বল মনের কল্পনা তাহলে ফান সেন্স এ পড়তে পারে সবাই।
ধন্যবাদ।
যদিও আমি চাচ্ছি সবাই একটু ভয় পাক। না হলে ভয়ের গল্প লিখার সার্থকতা কোথায়। তো চলে যাই মূল গল্পে।
=======================================================
আকাশের দিকে তাকিয়ে মেজাজ খিচড়ে গেল আজাদের।
দেখে মনে হচ্ছে তুমুল বৃষ্টি শুরু হবে কিছুক্ষনের মধ্যে। তার বাসা অনেক দুর। সেই যাত্রাবাড়ীতে। প্রতিদিন দুইবাস মিশুক রিকশা হাঙ্গামা করে তাকে কাজে আসতে হয়। রাস্তা তার খেয়ে ফেলে পাচ ছয় ঘন্টা সময়।
সকাল ছয়টায় ঘর থেকে বের হতে হয় নয়টার কাজের জন্য। পাচটায় তার কাজ শেষ হলে বাসায় পৌছতে প্রতিদিন ই তার আট টা নয়টা বেজে যায়। এই ছোট জবের জন্য এত হাঙ্গামা ভাল লাগেনা। ভাল একটা জব পেলে এটা ছেড়ে দিবে।
তার অফিস নয়া পল্টন ।
বাসের জন্য অপেক্ষা করতে ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সে পুরো ভিজে গেল। সবাই দৌড়ে আশেপাশে বাড়ীর নিচে অবস্থান নিল। সে যেই জায়গায় দাড়িয়ে আছে এটা একটু ঢালু জায়গা। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে পানি তার টাখনু স্পর্শ করল।
সে ঝুকে প্যান্ট টা একটু গুটিয়ে নিল। বিকট শব্দে পিলে চমকানোর মত বিজলী চমকে যাচ্ছে। আজকে সে কিছুতে দেরী করতে চাচ্ছিলনা। তার বয়স্ক চোখে ছানি পড়া মা না খেয়ে তার জন্য বসে থাকে। কিছুক্ষন বিল্ডিং এর নীচে দাড়িয়ে থাকতে দেখল একটা বাস আসছে।
আর কোন কিছু চিন্তা না করে দৌড়ে এসে বাসে উঠল। বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে বাসে উঠতে বাধ্য হয়েছে পাগল লোকদের কথা শুনে। একজন আরেকজনরে ফিসফিস করে বলতেছে ভাইজান সন্ধার দিকে পল্টনের এই বাসে উইঠেননা।
আরেকজনের অবাক প্রশ্ন কেন? আমি তো কালকে ও গেলাম।
শুনছি শনিবার ঠিক সন্ধার সময়ে এখানে পল্টনের বাসে নাকি অস্বাভাবিক কি উঠে।
এখানে দশ নম্বর বাড়ীতে নাকি বাড়ীওয়ালা খুন হইছে । তার আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় বাসে। এইটুকু শুনে সে আর থাকতে পারলনা। হাসি ও পেল রাগ ও হল। মানুষ যে কত উদ্ভট গল্প ছড়াতে পারে।
সারা বাসে তেমন কোন যাত্রী নেই। সে ছাড়া আর তিনজন যাত্রী । একজন বৃদ্ধ লোক ঝিমাচ্ছে আর আজাদের ওইপাশে দুইজন তার বয়সী ছেলে গল্প করছে। একজন গল্প করছে আর একজন চোখ বড় করে শুনছে।
ও আমাদের কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিল।
সবার ধারনা ওর সাথে জ্বিন থাকে। বলছে এক বন্ধু।
ধ্যেৎ তোদের কলেজের সব পাগল নাকি? এরকম ধারনা করত কেন? শ্রোতা বন্ধুটি জিজ্ঞাসা করে।
না ও একটু অস্বাভাবিক ছিল। কারও সাথে কথা বলতনা।
মাথা নীচু করে কলেজ আসত । ছুটি হওয়ার পরে একমিনিট দাড়াতনা। কার ও দিকে না তাকায়া চলে যেত। সবাই মনে করত অহংকারী। রুপে তোমার আগুন জ্বলে এই ধরনের কমেন্টস লিখে রাখত ওর নামের সাথে।
একদিন আমরা শুধু ওর অস্বাভাবিক চেহারা দেখছি। সে এক অস্বাভাবিক চেহারা বুঝলি মনে হইলে এখন ও আমার হাত পা কাপে ভয়ে।
আজাদ মনোযোগ সহকারে এদের গল্প শুনতে থাকে।
আমাদের ক্লাসে আরিফ নামে একটি ছিল ষন্ডা বখা টাইপের। মেয়েদের বিরক্ত করা জ্বালানো ছিল এই বদটার রোজকার কাজ।
একদিন বদটা ক্লাসে ফেরদৌসী আসা (ওর নাম ফেরদৌসী) মাত্র গান গাওয়া শুরু করল ওরে লক্ষ করে।
ও সুহাসি ও রূপসী
ও দেমাগী ও সুন্দরী
ধরবে নাকি হাত বলে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। সে কিছুক্ষন বিব্রত হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওই ফাজিল ওর পথ আগলে দাড়ানো।
প্রথমে মেয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবে বলল পথ থেকে সরে দাড়াও বলছি।
ফাজিল আলতু ফালতু কথা বলতেছে না সরে। হঠাৎ আমরা শুনলাম জোরে একটা আওয়াজ। আরিফ উড়ে গিয়ে পিছনে দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে পড়ছে। এই ঘটনা নিয়ে খুব তোলপাড় হইছিল ওই সময়ে আমাদের কলেজে। আরিফের মাথা ফাইটা প্রচুর রক্ত বের হইছিল।
ফেরদৌসী চিৎকার করে কান্না শুরু করল। সে বলে থাপড় দেয়নি। প্রিন্সিপ্যালের রুমে দুইজনকে ডাকাই নেওয়ার পর। আমার দুইজন বন্ধু বলল তারা ফেরদৌসীকে হাত তুলতে দেখেনি। তাহলে ব্যাপারটা কি হইছে সেটা নিয়ে সারা কলেজে খুব জল্পনা কল্পনা চলছিল কয়দিন।
কেও কেও বলল ধরলাম সে যদি মারে সেটা ও অস্বাভাবিক। একটা মেয়ের এত শক্তি তার থাপ্পড়ে একটা দশাসই ছেলে উল্টে আর এককোনায় পড়ে যায় যেটা শক্ত বড় পালোয়ানদের পক্ষে ও কিনা অসম্ভব।
অবশেষে আমাদের বোর্ডিং এর ডাক্তার ফেরদৌসী আরিফ দুইজনকে চেক করে বলল। ডাক্তারের বক্তব্য ফেরদৌসী সম্ভবত হিষ্টিরিয়া আছে । হিষ্টিরিয়ার সময়ে মানুষের শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি ভর করে।
হিষ্টিরিয়া মানে মৃগী? হ্যা।
এর পরে সারাকলেজে ওর পরিচয় হয়ে গেল জ্বিনে পাওয়া মেয়ে। কেও ওর সাথে মিশত না ওরে কেও ঘাটাইতনা।
এই মেয়ে কোথায় এখন?তোর সাথে দেখা হয়?
ও মারা গেছে কিছুক্ষন চুপ থেকে বিষন্ন গলায় বলে গল্প বলা ছেলেটি।
আজাদ ছেলে দুইজনে চমকে উঠে ।
দুজনের মন খারাপ হয়ে যায়। তারা দুজনে মেয়েটির গল্পে একাত্ম হয়ে যায়।
কিভাবে? এটা ও রহস্যের মত। ওদের বাড়ীর সামনে পুকুরে নাকি ডুবে মারা গেছে। কেও বলে ওকে খুন করা হয়েছে ।
কেও বলে আত্মহত্যা করেছে।
অনেকক্ষন ধরে বাস চলছে। একবার ও থামছেনা দেখে আজাদ অবাক হল। এই যে ভাই এই যে ভাই গাড়ী একবার ও থামছেনা কারন কি?
সামনের কথা বলা লোকটি এখন আর কথা বলছেনা । সে ঝিমাচ্ছে।
একটা অন্ধকার গলির মত জায়গায় এসে বাস থামল।
সামনে থেকে খুব শীতল কঠিন গলায় বলল ড্রাইভার আপনি নামতে চাইলে নামতে পারেন। বেকুব ড্রাইভার এমন একটা জায়গায় থামাইছেনা মনে হয় থাপ্পড় দেই মনে মনে আজাদ বকতে থাকে।
আরে মিঞা আমি কি তোমারে বলছি এখানে নামব। আমি অনেকদুর যাব।
আগে বল তোমার বাসের শেষ ষ্টপ কোথায়?
বনানী গোরস্থান স্যার।
বনানী গোরস্থান মানি। আজাদের বিরক্তি চরমে পৌছে গেছে এতক্ষনে।
স্যার এটা লাশের গাড়ী। গোরস্থানে তো যাইব ।
আমরা সবাই তো লাশ? আপনি কি লাশ না জিন্দা বলে যা চোখের সামনে দেখল অতিপ্রাকূত কেও বিশ্বাস করবেনা তাকে । দেখল চোখের সামনে চারটা লাশ চারভাবে পড়ে আছে। কার ও গলায় ফাস দড়ির কার ও বুকে ছুরি গাথা। কার ও হাতে পিস্তলে মাথায় গুলি করা।
ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহ এসব কি দেখতেছি কি শুনতেছি?আমি কি স্বপ্ন দেখতেছি নাকি সত্যি এসব হচ্ছে।
মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা হল। জোরে একবার বলল আল্লাহ আমাকে নিরাপদে পৌছে দাও অসহায় মায়ের কাছে।
মায়ের মুখটা মনে করতে করতে আল্লাহর নাম জপতে জপতে মনে জোর আনল । লাশগুলিকে পাশ কাটিয়ে আস্তে আস্তে যেতে থাকল। লাশের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা লাশ তার হাত চেপে ধরল ভাইজান দয়া করেন প্লিজ আমারে ছাইড়া যাইয়েন না।
আমি ও আপনার সঙ্গে যাব পল্টন দুই নম্বর ব্লকে দশ নম্বর বাড়ীটা। আমার বউ বাচ্চারা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে ভাইজান । আমারে যদি নামায় দিতেন ভাই। তার বুকে ছুরি গাথা এখনও রক্ত ঝরছে। এই অবস্থায় হাত বাড়িয়ে আজাদের হাত ধরে রইল।
আজাদ হাতের ব্যাগ দিয়ে লোকটার হাতে বাড়ী দিতে লাগল
লা হাওলা ওয়ালা কুআতা ইল্লা বিল্লহিল আলীয়ূল আজিম। পড়ছে আর বলতেছে সর সর সব ভূতের গোষ্ঠি আমার মায়ের দোহাই আল্লাহর দোহাই লাগে।
বাস থেকে নেমে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল।
কিছু দয়ালু পথিকের দৃষ্টির সামনে পড়ে গেল একসময়।
এক পথিক অবাক হয়ে বলে আপনি এই রাস্তায় কেন গেছিলেন? আপনার কেও কি মারা গেছে?
আজাদ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
এই সামনে তো বনানী কবরস্থান। নোটিশ খেয়াল করেন না। সাহসী মানুষ যাইতে ভয় পায় এখানে। আপনি দেখি বেঞ্চে ঘুমাই আছেন।
না মানি আমি পরে চিন্তা করল এই কথা কাওরে সে বলবেনা।
বললে সবাই তারে পাগল বা অসুস্থ ছাড়া কিছু বলবেনা। আল্লাহর রহমতে মায়ের দোয়ায় প্রান টা ফিরে পেয়েছে আল্লাহর শোকর।
পরিশিষ্ট এই ঘটনার পর থেকে আজাদ এখন ভূত বিশ্বাসী হয়ে গিয়েছে। সে ভূলে ও এখন নয়াপল্টনের ওই রাস্তা দিয়ে যায়না। শনিবারে সে ঘুরে দরকার হলে অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে কিন্তু দ্বিতীয় ব্লকের দশ নম্বর বাড়ীর সামনে যাওয়া বা ওইজায়গার কোন বাসে উঠেনা।
সমাপ্ত।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মেজাজ খিচড়ে গেল আজাদের। দেখে মনে হচ্ছে তুমুল বৃষ্টি শুরু হবে কিছুক্ষনের মধ্যে। তার বাসা অনেক দুর। সেই যাত্রাবাড়ীতে।
প্রতিদিন দুইবাস মিশুক রিকশা হাঙ্গামা করে তাকে কাজে আসতে হয়। রাস্তা তার খেয়ে ফেলে পাচ ছয় ঘন্টা সময়। সকাল ছয়টায় ঘর থেকে বের হতে হয় নয়টার কাজের জন্য। পাচটায় তার কাজ শেষ হলে বাসায় পৌছতে প্রতিদিন ই তার আট টা নয়টা বেজে যায়। এই ছোট জবের জন্য এত হাঙ্গামা ভাল লাগেনা।
ভাল একটা জব পেলে এটা ছেড়ে দিবে।
তার অফিস নয়া পল্টন । বাসের জন্য অপেক্ষা করতে ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সে পুরো ভিজে গেল। সবাই দৌড়ে আশেপাশে বাড়ীর নিচে অবস্থান নিল।
সে যেই জায়গায় দাড়িয়ে আছে এটা একটু ঢালু জায়গা। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে পানি তার টাখনু স্পর্শ করল। সে ঝুকে প্যান্ট টা একটু গুটিয়ে নিল। বিকট শব্দে পিলে চমকানোর মত বিজলী চমকে যাচ্ছে। আজকে সে কিছুতে দেরী করতে চাচ্ছিলনা।
তার বয়স্ক চোখে ছানি পড়া মা না খেয়ে তার জন্য বসে থাকে। কিছুক্ষন বিল্ডিং এর নীচে দাড়িয়ে থাকতে দেখল একটা বাস আসছে। আর কোন কিছু চিন্তা না করে দৌড়ে এসে বাসে উঠল। বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে বাসে উঠতে বাধ্য হয়েছে পাগল লোকদের কথা শুনে। একজন আরেকজনরে ফিসফিস করে বলতেছে ভাইজান সন্ধার দিকে পল্টনের এই বাসে উইঠেননা।
আরেকজনের অবাক প্রশ্ন কেন? আমি তো কালকে ও গেলাম।
শুনছি শনিবার ঠিক সন্ধার সময়ে এখানে পল্টনের বাসে নাকি অস্বাভাবিক কি উঠে। এখানে দশ নম্বর বাড়ীতে নাকি বাড়ীওয়ালা খুন হইছে । তার আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় বাসে। এইটুকু শুনে সে আর থাকতে পারলনা।
হাসি ও পেল রাগ ও হল। মানুষ যে কত উদ্ভট গল্প ছড়াতে পারে।
সারা বাসে তেমন কোন যাত্রী নেই। সে ছাড়া আর তিনজন যাত্রী । একজন বৃদ্ধ লোক ঝিমাচ্ছে আর আজাদের ওইপাশে দুইজন তার বয়সী ছেলে গল্প করছে।
একজন গল্প করছে আর একজন চোখ বড় করে শুনছে।
ও আমাদের কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিল। সবার ধারনা ওর সাথে জ্বিন থাকে। বলছে এক বন্ধু।
ধ্যেৎ তোদের কলেজের সব পাগল নাকি? এরকম ধারনা করত কেন? শ্রোতা বন্ধুটি জিজ্ঞাসা করে।
না ও একটু অস্বাভাবিক ছিল। কারও সাথে কথা বলতনা। মাথা নীচু করে কলেজ আসত । ছুটি হওয়ার পরে একমিনিট দাড়াতনা। কার ও দিকে না তাকায়া চলে যেত।
সবাই মনে করত অহংকারী। রুপে তোমার আগুন জ্বলে এই ধরনের কমেন্টস লিখে রাখত ওর নামের সাথে।
একদিন আমরা শুধু ওর অস্বাভাবিক চেহারা দেখছি। সে এক অস্বাভাবিক চেহারা বুঝলি মনে হইলে এখন ও আমার হাত পা কাপে ভয়ে।
আজাদ মনোযোগ সহকারে এদের গল্প শুনতে থাকে।
আমাদের ক্লাসে আরিফ নামে একটি ছিল ষন্ডা বখা টাইপের। মেয়েদের বিরক্ত করা জ্বালানো ছিল এই বদটার রোজকার কাজ।
একদিন বদটা ক্লাসে ফেরদৌসী আসা (ওর নাম ফেরদৌসী) মাত্র গান গাওয়া শুরু করল ওরে লক্ষ করে।
ও সুহাসি ও রূপসী
ও দেমাগী ও সুন্দরী
ধরবে নাকি হাত বলে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। সে কিছুক্ষন বিব্রত হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ওই ফাজিল ওর পথ আগলে দাড়ানো।
প্রথমে মেয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবে বলল পথ থেকে সরে দাড়াও বলছি।
ফাজিল আলতু ফালতু কথা বলতেছে না সরে। হঠাৎ আমরা শুনলাম জোরে একটা আওয়াজ। আরিফ উড়ে গিয়ে পিছনে দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে পড়ছে।
এই ঘটনা নিয়ে খুব তোলপাড় হইছিল ওই সময়ে আমাদের কলেজে। আরিফের মাথা ফাইটা প্রচুর রক্ত বের হইছিল। ফেরদৌসী চিৎকার করে কান্না শুরু করল। সে বলে থাপড় দেয়নি। প্রিন্সিপ্যালের রুমে দুইজনকে ডাকাই নেওয়ার পর।
আমার দুইজন বন্ধু বলল তারা ফেরদৌসীকে হাত তুলতে দেখেনি। তাহলে ব্যাপারটা কি হইছে সেটা নিয়ে সারা কলেজে খুব জল্পনা কল্পনা চলছিল কয়দিন। কেও কেও বলল ধরলাম সে যদি মারে সেটা ও অস্বাভাবিক। একটা মেয়ের এত শক্তি তার থাপ্পড়ে একটা দশাসই ছেলে উল্টে আর এককোনায় পড়ে যায় যেটা শক্ত বড় পালোয়ানদের পক্ষে ও কিনা অসম্ভব।
অবশেষে আমাদের বোর্ডিং এর ডাক্তার ফেরদৌসী আরিফ দুইজনকে চেক করে বলল।
ডাক্তারের বক্তব্য ফেরদৌসী সম্ভবত হিষ্টিরিয়া আছে । হিষ্টিরিয়ার সময়ে মানুষের শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি ভর করে।
হিষ্টিরিয়া মানে মৃগী? হ্যা।
এর পরে সারাকলেজে ওর পরিচয় হয়ে গেল জ্বিনে পাওয়া মেয়ে। কেও ওর সাথে মিশত না ওরে কেও ঘাটাইতনা।
এই মেয়ে কোথায় এখন?তোর সাথে দেখা হয়?
ও মারা গেছে কিছুক্ষন চুপ থেকে বিষন্ন গলায় বলে গল্প বলা ছেলেটি।
আজাদ ছেলে দুইজনে চমকে উঠে । দুজনের মন খারাপ হয়ে যায়। তারা দুজনে মেয়েটির গল্পে একাত্ম হয়ে যায়।
কিভাবে? এটা ও রহস্যের মত।
ওদের বাড়ীর সামনে পুকুরে নাকি ডুবে মারা গেছে। কেও বলে ওকে খুন করা হয়েছে । কেও বলে আত্মহত্যা করেছে।
অনেকক্ষন ধরে বাস চলছে। একবার ও থামছেনা দেখে আজাদ অবাক হল।
এই যে ভাই এই যে ভাই গাড়ী একবার ও থামছেনা কারন কি?
সামনের কথা বলা লোকটি এখন আর কথা বলছেনা । সে ঝিমাচ্ছে। একটা অন্ধকার গলির মত জায়গায় এসে বাস থামল।
সামনে থেকে খুব শীতল কঠিন গলায় বলল ড্রাইভার আপনি নামতে চাইলে নামতে পারেন। বেকুব ড্রাইভার এমন একটা জায়গায় থামাইছেনা মনে হয় থাপ্পড় দেই মনে মনে আজাদ বকতে থাকে।
আরে মিঞা আমি কি তোমারে বলছি এখানে নামব। আমি অনেকদুর যাব। আগে বল তোমার বাসের শেষ ষ্টপ কোথায়?
বনানী গোরস্থান স্যার।
বনানী গোরস্থান মানি। আজাদের বিরক্তি চরমে পৌছে গেছে এতক্ষনে।
স্যার এটা লাশের গাড়ী। গোরস্থানে তো যাইব । আমরা সবাই তো লাশ? আপনি কি লাশ না জিন্দা বলে যা চোখের সামনে দেখল অতিপ্রাকূত কেও বিশ্বাস করবেনা তাকে । দেখল চোখের সামনে চারটা লাশ চারভাবে পড়ে আছে। কার ও গলায় ফাস দড়ির কার ও বুকে ছুরি গাথা।
কার ও হাতে পিস্তলে মাথায় গুলি করা।
ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহ এসব কি দেখতেছি কি শুনতেছি?আমি কি স্বপ্ন দেখতেছি নাকি সত্যি এসব হচ্ছে। মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা হল। জোরে একবার বলল আল্লাহ আমাকে নিরাপদে পৌছে দাও অসহায় মায়ের কাছে।
মায়ের মুখটা মনে করতে করতে আল্লাহর নাম জপতে জপতে মনে জোর আনল ।
লাশগুলিকে পাশ কাটিয়ে আস্তে আস্তে যেতে থাকল। লাশের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা লাশ তার হাত চেপে ধরল ভাইজান দয়া করেন প্লিজ আমারে ছাইড়া যাইয়েন না। আমি ও আপনার সঙ্গে যাব পল্টন দুই নম্বর ব্লকে দশ নম্বর বাড়ীটা। আমার বউ বাচ্চারা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে ভাইজান । আমারে যদি নামায় দিতেন ভাই।
তার বুকে ছুরি গাথা এখনও রক্ত ঝরছে। এই অবস্থায় হাত বাড়িয়ে আজাদের হাত ধরে রইল।
আজাদ হাতের ব্যাগ দিয়ে লোকটার হাতে বাড়ী দিতে লাগল
লা হাওলা ওয়ালা কুআতা ইল্লা বিল্লহিল আলীয়ূল আজিম। পড়ছে আর বলতেছে সর সর সব ভূতের গোষ্ঠি আমার মায়ের দোহাই আল্লাহর দোহাই লাগে।
বাস থেকে নেমে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল।
কিছু দয়ালু পথিকের দৃষ্টির সামনে পড়ে গেল একসময়।
এক পথিক অবাক হয়ে বলে আপনি এই রাস্তায় কেন গেছিলেন? আপনার কেও কি মারা গেছে?
আজাদ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
এই সামনে তো বনানী কবরস্থান। নোটিশ খেয়াল করেন না। সাহসী মানুষ যাইতে ভয় পায় এখানে।
আপনি দেখি বেঞ্চে ঘুমাই আছেন।
না মানি আমি পরে চিন্তা করল এই কথা কাওরে সে বলবেনা। বললে সবাই তারে পাগল বা অসুস্থ ছাড়া কিছু বলবেনা। আল্লাহর রহমতে মায়ের দোয়ায় প্রান টা ফিরে পেয়েছে আল্লাহর শোকর।
পরিশিষ্ট এই ঘটনার পর থেকে আজাদ এখন ভূত বিশ্বাসী হয়ে গিয়েছে।
সে ভূলে ও এখন নয়াপল্টনের ওই রাস্তা দিয়ে যায়না। শনিবারে সে ঘুরে দরকার হলে অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে কিন্তু দ্বিতীয় ব্লকের দশ নম্বর বাড়ীর সামনে যাওয়া বা ওইজায়গার কোন বাসে উঠেনা।
সমাপ্ত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।