আমি বেশ চুপচাপ!! বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল মারাত্নক দূষণের শিকার হয়েছে। ফলে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ শামুক ঝিনুক সহ উপকূলীয় জীব বৈচিত্র। পঁচা ঝিনুক সামুকের তীব্র দুর্গন্ধে গত কয়েক দিন ধরে সৈকতে অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার শহর উপকূলের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার উপকূল জুড়ে সমুদ্রের পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাঁকখালী নদী মোহনায় এই দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশী বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জাফর আলম জানিয়েছেন- সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার উপকূলে পরিবেশ দূষন মাত্রা মনিটরিং-এ তাদের কোন জরিপ নেই। তিনি জানান কক্সবাজারে একটি অফিস করা হয়েছে। লোকবল নিয়োগ দেয়া হলেই এখান থেকে মনিটরিং কাজ শুরু হবে।
কক্সবাজার সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় সৈকত জুড়ে লাখ লাখ মৃত শামুক ও ঝিনুক জোয়রের পানিতে ভেসে আসছে। পঁচা ঝিনুক শামুকের তীব্র দুর্গন্ধে সৈকতের পরিবেশ হয়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন- এভাবে সামুদ্রিক জীব বৈচিত্রের মড়ক সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি। তিনি জানান দীর্ঘ উপকূল জুড়ে পানিতে তেলের স্তর পড়েছে। ফলে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন গত একমাস ধরে উপকূলে শামুক ঝিনুকের মৃত্যুর হার বেড়েছে। কিছু লোকজন মরা ঝিনুক শামুক কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পলোট্রি ফার্মে হাঁস মুরগীর খাবার এবং চুন তৈরিতে এই ঝিনুক শামুক ব্যবহার হচ্ছে।
কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানিয়েছে, সমুদ্রে শামুক ঝিনুকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক কারণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান- এই ধরণের অবস্থা ২০০২ সালেও একবার হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সমুদ্র দূষণের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সাগরে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলেও জীব বৈচিত্র মারা যেতে পারে।
তিনি জানান- সমুদ্র উপকূল জুড়ে দূষণের ফলে ইলিশ সহ সামুদ্রিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রজজন ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই বিষয়ে একটি ব্যাপক জরীপের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান সাগরে জরিপ কাজ চালানোর জন্য সরকার একটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌকা এবং মালবাহি জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত বর্জ্যের কারণে সমুদ্র দূষণ হচ্ছে সব চেয়ে বেশী।
সাগরে ৩০ হাজারের বেশী ফিসিং বোট রয়েছে। যার মাধ্যমে সমুদ্র দূষণ হচ্ছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। অন্যদিকে বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজ সমূহ সমুদ্রে বর্জ্য নিক্ষেপ করছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া বিভিন্ন নদী মোহনায় রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ডকইয়ার্ড। এখানে মাছ ধরার নৌকা ও ইঞ্জিন সার্ভিসিং করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সমুদ্রে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে শুধুমাত্র কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী মোহনায় রয়েছে শতাধিক ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ডের বৈধ কোন অনুমোদনও নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমুদ্র দূষণের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত স্থানে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতি লিটার পানিতে স্থান ভেদে ৫ মিলি গ্রামের নীচে নেমে যাচ্ছে। তিনি জানান, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৩ এর নীচে নেমে গেলে জলজ প্রাণী মারা যাবে।
বেসরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্র উপকূল জুড়ে তেল জাতীয় পদার্থের কারণে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশী।
এখানে প্রতি লিটার পানিতে ১০০ থেকে ১৩০ মিলি গ্রাম পর্যন্ত তেল জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী মোহনায় এই মাত্রা আরো বেশী। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি গ্রাম তেল জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি থাকলে তা সাধারণ সহনীয় মাত্রা বলে গণ্য করা হয়। এর উপরে গেলেই দূষণের পর্যায়ে চলে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।