সমুদ্র দা... আমাদের প্রিয় কবি সমুদ্র গুপ্ত শেষ পর্যন্ত আমাকে দোষী করে গেলেন।
শাহবাগ আজিজ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মুক্তচিন্তা প্রকাশনীতে বসে ছিলেন সমুদ্র দা। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম; ডান হাতটা বাড়িয়ে বললাম, একটা কবিতা চাই।
কবিতা নিলে টাকা দিতে হবে।
আপনি তো জানেন, আপনার কাছ থেকে কবিতা নিয়ে আমি টাকা দেই না।
দ্যাখ, তুই টাকা না দিলে আমি তোরে কবিতা দিবো না।
আপনাকে কবিতা দিতেই হবে।
আচ্ছা দিবো; তবে সিগারেট খাওয়াবি তো?
আমি এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এসে তাঁকে দিয়ে বলি, এই নেন সিগারেট, এবার শুরু করেন।
সমুদ্র দা কবিতা লেখা শুরু করেন এবং এক টানে কবিতা শেষও করেন। আমার হাতে কবিতা তুলে দেন, এই নে তোর কবিতা।
(পরদিন সন্ধ্যায় আবার আজাজ মার্কেটে যাই, জানতে পারি সমুদ্র দা অসুস্থ। আমি তাঁর ফোনে ফোন দেই)
সমুদ্র দা কি অবস্থা?
সোহাগ, তুই আমার সিগারেটের প্যাকেটে কি মিশায় দিছিস?
আমি আবার কি মিশাবো? আপনাকে তো ইনটেক প্যাকেট দিলাম।
না, তুই কিছু মিশায় দিছিস!
ওই সব বাজে কথা বাদ দেন। বিছানায় শুয়ে শুয়ে যা ভাবছেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে তা লিখে আমাকে দিবেন।
(আমি ফোন রেখে দেই)
কয়েক দিন পর আবার তাঁর সাথে দেখা, বারডেম হাসপাতালে।
কি দাদা, কি অবস্থা?
তুই আমার সিগারেটের প্যাকেটে কি মিশায় দিছিস? এবার বলতো।
আবর সেই কথা।
আরো কিছু কথা হয় তাঁর সাথে। কিন্তু সেই কথাটা আমি ভুলতে পারি না। "তুই আমার সিগারেটের প্যাকেটে কি মিশায় দিছিস?"
সেই শেষ দ্যাখা।
আর দেখা হয় না দাদার সাথে। দাদা ইন্ডিয়া চলে যান উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। ... দাদার শেষ চলে যাওয়া...
দাদা শেষ পর্যন্ত তাহলে আমাকে দোষী করে গেলেন। আমার সৌভাগ্য... একজন সমুদ্র আমাকে দোষী করে গেলেন... আর কয় জনের এমন সৌভাগ্য হয়েছে...
# আজ সকাল (২২.০৭.২০০৮) ১০ টায় সমুদ্র দা'র মৃত দেহ নিয়ে আসা হবে আজিজ মার্কেটের সামনে... শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য... আমি সেখানে যাবো না... কারণ, আমি জীবীত সমুদ্র দা'র স্মৃতি ধরে রাখতে চাই আমার মাঝে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।