আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেপাটাইটিস দিবস আজ: দেশের ১২ মিলিয়ন লোক 'বি' 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত

শীর্ষ নিউজ ডটকম অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ, অপরীক্ষিত রক্তগ্রহণ ও অসচেতনতার কারণে বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস বা যকৃত প্রদাহের বিস্তার বাড়ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হেপাটাইটিস ভাইরাসের ধরনগুলোকে এ, বি, সি এবং ই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের তথ্যমতে, বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত। এ হার প্রতি ১২ জনে একজন।

বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আজ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে 'বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০১১। ' দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'এই হলো হেপাটাইটিস'। গতবছরও এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই দিবসটি পালিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হেপাটাইটিস অনেক আগে থেকেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সূত্রপাত করলেও এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে সচেতন করার কার্যক্রম খুব বেশি দিনের নয়। ২০০৮ সালে বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স বিশ্ববাসীকে সচেতন করার জন্য এগিয়ে আসে এবং বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়।

এরপর থেকে প্রতিবছর ১৯ মে পালন করা হয় বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হেপাটাইটিসের চিত্র ভয়াবহ। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। সুপ্ত অবস্থায় আছে ১২ লাখ লোকের মধ্যে।

হেপাটাইটিসে লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস এলায়েন্স সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের মতে, হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাস এইচআইভি এইডসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ লোক এইডসে মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদিন হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসজনিত লিভারের অসুখে মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে।

দেশে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে যাদের শরীরে ই-এন্টিজেন পজেটিভ রয়েছে তাদের নবজাতকের শরীরে এ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রজেশ কুমার রায় শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন- দীর্ঘদিন মদ্যপান, স্থ্থূলতার কারণে যকৃতে চর্বি জমাসহ বিভিন্ন কারণে লিভারে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, দেশে ৮ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস 'বি' ভাইরাসে আক্রান্ত। এর অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।

এই ভাইরাস দু'ভাবে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে রক্তগ্রহণ ও সিরিঞ্জ, দৈহিক মিলন ও ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহারের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত মা থেকে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, যারা এ ভাইরাসে আক্রান্তদের ২০ শতাংশই ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে লিভার সিরোসিসে মৃত্যুবরণ করে। আর সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৩ থেকে ৪ শতাংশ মানুষ।

'সি' ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই একে নীরব ঘাতকও বলা হয়। 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই লিভার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ট্রনিক হেপাটাইটিস লিভারসিরোসিস তৈরি করে। এর কিছুদিন পর লিভার সিরোসিস সংক্রান্ত জটিল রোগ থেকে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

এই ভাইরাস 'বি' ভাইরাসের মতো করেই শরীরে ঢোকে। তবে যারা 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত তারা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মূনীরুল আলম শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করলে হেপাটাইটিস 'এ' এবং 'ই' এর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যায়। হেপাটাইটিস 'বি' প্রতিরোধে টিকার ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। তবে হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা নেই বলে জানান তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানবজাতির একটি প্রধান রোগ হিসেবে বিবেচিত হেপাটাইটিস 'বি'। পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন বা ২০ কোটি লোক এ ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের শিকার আনুমানিক ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি লোক। অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হেপাটাইটিস বি ও সি'র সংক্রমণে প্রতিবছর প্রাণ হারায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.