আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ: মানুষের জন্ম নামক একটি কবিতা

ধূলো পড়া ব্লগ.....

কবিতাটা যখন প্রথম আরিককে শুনাতে গেলাম, কিছুদূর শুনে সে খাতাটা আমার হাত থেকে নিয়ে সেটা কামড়াবার দিকে মনোযোগ দিলো, সেই যাত্রায় তার হাত থেকে খাতা বাচানো গেলেও পরে এক সময় তার পাশে আবিষ্কার করলাম সেই খাতা সিক্ত এবং অ্যামনিয়ার গন্ধ বিশিষ্ট, পাশে সে গম্ভীর সিরিয়াস সমালোচকের মত বসে । আমার পাচ মাস বয়সের সেই ক্ষুদ্র সমালোচক এখন আগের চাইতে কিছুটা বড় হয়েছে, আগামীকাল তার বয়স পাচ বছর পূর্ণ হবে। এই কিছুদিন আগেও তার প্রিয় কার্টুন ছিলো হনুমান, হিন্দিতে পোগো চ্যানেলে দেয়, তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হতো, বুড়া তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও, সে বেশ দৃঢ়তার সাথে জবাব দিতো, “আমি হনুমান হতে চাই”। আমি বাসায় গেলে তার প্রিয় কাজ হল আমার মোবাইল থেকে বাসার অন্যান্য মেম্বারকে, যারা তখন হয়তো অন্য রুমে আছে, ফোন করা। সেদিন সে বললো, আমি নিজের সাথে কথা বলতে চাই, অত্যন্ত দার্শনিক টাইপের ইচ্ছা সন্দেহ নাই, কিন্তু নিজের সাথে কথা বলার জন্য এখন পর্যন্ত কোন দার্শনিক দুই কানে দুইটা মোবাইল ধরে , একটা থেকে অন্যটাতে কল করে এবং সেই কল রিসিভ করে, ত্বারস্বরে চিৎকার করেছেন বলে আমার জানা নাই।

সে খুবই শ্রেণী বৈষম্যে বিশ্বাসী, সে বাসার মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করেছে, একদলকে সে বাইরে যাওয়ার আগে চুমু খেয়ে দেয়, আমি এই দলে, আরেক দলের সাথে হ্যান্ডশেক করে, আরেক দল বাইরে যাওয়ার সময় খালি কি কি আনতে হবে সেইটা মনে করায় দেয়, এদেরকে খালি টা টা দেয়া হয়। সে আমার জীবনে খুব স্পেশাল একটা মানুষ কারণ আক্ষরিক অর্থেই তাকে আমি এক্কেবারে ন্যাদা ন্যাদা বাচ্চা থেকে হাড় জ্বালাতন করা দুষ্টুর শিরোমনি হয়ে উঠতে দেখেছি, দাড়ানো এবং হাটার মতো সহজ কাজগুলো কষ্ট করে শিখতে দেখেছি, তার খামচি খেয়েছি এবং আদরে সিক্ত হয়েছি । আমি যখন তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমি বলি না সে যেন অনেক বিখ্যাত হয়, বড় লোক হয়, জ্ঞানী হয়, আমি বলি, সে যেন খুব সাদামাটা কিন্তু ভালো একটা মানুষ হয়, সে যেন জীবনে খুব সুখী হয়, কিন্তু তার সুখ যেন অন্যকারো দু:খের কারণ না হয়, খুব অল্প কিছু মানুষ, যারা এই মানব জীবনটার মেইন টিউনটাকে ধরতে পারে, জীবনটাকে উপলব্ধি করতে পারে, সে যেন, তাদের একজন হয়। সময় খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে, আমি খুব আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছি, সেদিন হয়তো চলেই আসলো বলে, আরিক বউ নিয়ে এসে বলবে, ইনি হচ্ছেন আমার মামা, কই সালাম কর, আরিকের বউ মিষ্টি হেসে আমাকে সালাম করবে, আর আমি আমার পাকা চুল ভর্তি মাথায় আঙুল চালিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলবো, বেচে থাক মা, সুখী হও। ............................................................................ এবার যেই কবিতা নিয়ে এতো কথা সেই কবিতাটা, এটা আরিককে নিয়ে লেখা আজকে থেকে প্রায় পাচ বছর আগে।

মানুষের জন্ম আবার জন্মালো এক মানব শিশু, আর পৃথিবী দেখলো সেই পুরনো ‘আদম’ , স্বর্গের উদ্যান থেকে বহিস্কৃত- পৃথিবীর বিষন্ন উদ্যানে। তাকালো সে দুই চোখ মেলে... যে আকাশ, যে সূর্য, যে জো্ৎস্না দেখে দেখে আমাদের ক্লান্ত হল চোখ, তাই দেখে বিস্ময়ে, আনন্দে স্তব্ধ হল সে। যে ঈশ্বর মানেই প্রার্থনার দায়ভার আমাদের মাথায়, আর অপরাধবোধ শুধু, সেই ঈশ্বরের জ্যোতির্ময় অস্তিত্বের সান্নিধ্যের অভাবে সে কাঁদলো, বাতাসকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কাঁপলো তার হাত। আর, তাকে দেখে, তার গা থেকে শুঁকে নিয়ে গন্ধ, ঈশ্বর আর স্বর্গের ধূলো মাখা উদ্যানের, আমরাও স্বপ্ন দেখলাম নতুন ভোরের, ভুলে গিয়ে জীবনের সব গুলো কষ্টের রাত। এবং অবশ্যই শেষ করার আগে-- “হ্যাপী বার্থডে টু মাই আকিন বুড়া, আমি জানি যে তুমি খালি আমারই আকিন হও, অন্য কারো আকিন হও না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।