নারী স্বাধীনতা ও অধিকার বনাম পরকালে নারীদের মুক্তি – ৩ !
স্ত্রী উপর স্বামীর হক যে বেশী, এ সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে রসুলুল্লাহ সা: বলেন ; ”যে স্ত্রী এমতাবস্হায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । ”
কোন এক ব্যক্তি সফরে যাওয়ার সময় স্ত্রী কে বলে গেল ,উপর তলার কক্ষ থেকে নীচে নামবে না । নীচে তার পিতা বসবাস করত । ঘটনাক্রমে সে অসুস্হ হয়ে পড়ল । স্ত্রী নীচে পিতার কাছে নামার অনুমতি চেয়ে রসুলুল্লাহ সা: -এর কাছে লোক পাঠালে তিনি বললেন: স্বামীর আদেশ পালন কর ।
শেষ পর্যন্ত পিতা মারা গেলে সে আবার আনুমতি প্রার্থনা করল । রসুলু্লাহ সা: আবার বললেন: স্বামীর আদেশ পালন কর । ফলে পিতা সমাধিস্হও হয়ে গেল ; কিন্তু সে নীচে নামল না । অত:পর রসুলুল্লাহ সা: এই মহিলাকে বলে পাঠালেন : তুমি যে স্বামীর আদেশ পালন করেছ,এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমার পিতার মাগফেরাত করেছেন । অন্য এক হাদিস আছে: ”যখন স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে,আপন গুপ্ত অঙ্গের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তখন সে তার পালনকর্তার জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
এ হাদিস দ্বার স্বামীর আনুগত্যকে ইসলামের রোকনসমুহের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে । একবার রসুলুল্লা সা: মহিলাদের আলোচনা প্রসংঙ্গে বললেন: গর্ভবতী নারী, সন্তান প্রসবকারিণী নারী, দুগ্ধদানকারিণী নারী, সন্তানদের প্রতি দয়াশীলা নারী, স্বামীর সাথে যে অসদাচরন করে, তা যদি না করত; তবে তাদের মধ্যে যারা নামাযী, তারা জান্নাতে প্রবেশ করত । এক হাদিসে তিনি বলেন:
”আমি দোযখে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ বাসিন্দাই মহিলা । মহিলারা আরজ করল : ইয়া রসুলাল্লাহ সা: ,এর কারণ কি? তিনি বললেন: মহিলারা অভিসম্পাত বেশী করে এবং স্বামীদের না-শোকরী করে । ” অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তাতে পুরুষ জান্নাতীদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা খুব নগণ্য ।
আমি জিঙ্গেস করলাম : মহিলারা কোথায় ? উত্তর হল : দুটি লাল বস্তু তাদের জান্নাতে আসার পথে বাধা হয়েছে । একটি স্বর্ণ ও অপরটি জাফরান । অর্থাৎ, রঙ্গীন পোশাক ও অলংকার ।
হযরত আয়েশা রা: বলেন : কোন এক যুবতি রসুলুল্লাহ সা:-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরজ করল : ইয়া রসুলাল্লাহ্, আমি যুবতি । মানুষ আমার কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু বিবাহ আমার ভাল লাগে না ।
এখন জানতে চাই, স্ত্রীর উপর স্বামীর হক কি? ধরে নেয়া যাক, স্বামীর আপাদমস্তক পুঁজে ভর্তি । যদি স্ত্রী এই পুঁজ চেটে নেয়, তবুও তার শোকর আদায় করতে পারবে না । মহিলা বলল: আমি বিবাহ করব কি ? তিনি বললেন করে নাও । বিবাহ করা উত্তম । হযরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন: খাসাম গোত্রের এক মহিলা রসুলুল্লাহ সা:-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরজ করল : ইয়া রসুলাল্লাহ্, আমি স্বামীহীনা বিবাহ করতে চাই ।
এখন স্বামীর হক কি, জানতে চাই । তনি বললেন , স্বামীর এক হক, সে যদি উটের পিঠে থেকেও সহবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করে,তবে স্ত্রী অস্বীকার করতে পারবেনা । আরেক হক , কোন বস্তু তার ঘর থেকে তার অনুমতি ব্যতীত কাউকে দিবে না । দিলে তুমি রোজা রেখে কেবল ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্তই থাকবে । তোমার রোজা কবুল হবে না ।
যদি তুমি স্বামীর আদেশ ছাড়া ঘর থেকে বের হও , তবে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং তওবা না করা পর্যন্ত ফেরেশতেরা তোমার প্রতি অভিসম্পাত করতে থাকবে । এক হাদিসে আছে, ”যদি আমি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম , তবে স্ত্রীকে আবশ্যই নির্দেশ করতাম যেন সে তার স্বামীকে সেজদা করে । ” এরুপ বলার কারন , স্ত্রীর উপর স্বামীর হক বেশী । রসুলে আকরাম সা: আরও বলেন: স্ত্রী আল্লহর পবিত্র সত্তার অধিকতর নিকটবর্তী তখন হয়, যখন সে তার কক্ষের অভ্যন্তরে থাকে । স্ত্রীর পক্ষে গৃহের আঙ্গিনায় নামায পড়া মসজিদে নামাজ পড়া অপেক্ষা উত্তম ।
আর কক্ষের ভেতরকার কক্ষে নামায পড়া কক্ষের ভেতর নামায পড়ার তুলনায় শ্রেয়: । এটা বলার কারন , স্ত্রীর অবস্থার উৎকৃষ্টতা ও অপকৃষ্টতা পর্দার উপর নির্ভরশীল । সুতরাং, যে অবস্থায় পর্দা বেশী হবে, সে আবস্থাই তার জন্য উত্তম । এ কারনেই রসুলুল্লাহ সা: বলেন : ”নারী হল নগ্নতা । সে যখন বের হয় তখন শয়তান উঁকি দিয়ে দেখে ।
’তিনি আরও বলেন, স্ত্রীট দশটি নগ্নতা রয়েছে । সে যখন বিবাহ করে তখন স্বামী একটি নগ্নতা ঢেকে দেয় । আর যখন সে মারা যায়, তখন কবর দশটি নগ্নতা আবৃত করে দেয় । মোট কথা, স্বামীর হক স্ত্রীর উপর অনেক । তন্মধ্যে অধিক গুরুত্তপূর্ণ দুটি- ১টি আত্নরক্ষা ও পর্দা এবং অপরটি প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিসপত্র দাবী না করা এবং স্বামীর উপার্জন হারাম হলে তা থেকে বেঁচে থাকা ।
সেমতে পূর্ববর্তীকালে নারীর অভ্যাস তাই ছিল । তখন কোন পুরুষ সফরে গেলে তার স্ত্রী ও কণ্যারা তাকে বলত: খবরদার ! হারাম উপার্জন করবে না। আমরা ক্ষুধা ও কষ্টে সবর করব; কিন্তু দোযখের আগুনে সবর করতে পারবনা । সে যুগের এক ব্যক্তি সফরের ইচ্ছা করলে তার প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহ হল । সবাই তার স্ত্রীকে বলল: তুমি তার সফরে সন্মত হচ্ছ কেন? সে তো তোমার খরচের জন্য কিছুই রেখে যাচ্ছে না ।
স্ত্রী বলল : আমি আমার স্বামিকে যেদিন থেকে দেখেছি , ভক্ষকই পেয়েছি- রিজিকদাতা পাইনি । আমার পালনকর্তা আমার রিজিকদাতা । এখন ভক্ষক চলে যাবে এবং রিজিকদাতা আমার কাছে থাকবে ।
রাবেয়া বিনতে ইসমাঈল আহমদ ইবনে আবুল হাওয়ারীর কাছে নিজের বিবাহের পয়গাম দিলে এবাদতের কারণে তিনি তা অপছন্দ করেন এবং বলেন : স্ত্রীর খাহেশ আমার নেই । আমি এবাদতে মগ্ন থাকতে চাই ।
রাবেয়া বলেন : আমি আমার অবস্থায় তোমার চেয়ে অধিক মগ্ন রয়েছি । পুরুষের খাহেশ আমার নেই, কিন্তু আমি আমার পুর্ব স্বামীর কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে অনেক ধন সম্পদ পেয়েছি । আমি চাই তুমি এসব ধন সম্পদ তোমার সঙ্গীদের মধ্যে ব্যয় কর এবং তোমার মাধ্যমে আমি সজ্জনদের পরিচয় লাভ করি । আহমদ বললেন : আমি আগে আমার ওস্তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নেই । অত:পর তিনি হযরত সোলায়মান দারানীর কাছে ঘটনা বর্নণা করলেন ।
তিনি রাবেয়ার কথা শুনে বললেন: তাকে বিয়ে করে নাও । সে আল্লাহর ওলী । কেননা, এরুপ কথাবার্তা ওলীরা বলেন । আহমদবলেন : ইতিপূর্বে ওস্তাদ আমাকে বিবাহ করতে বারন করতেন এবং বলতেন, আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে যে কেউ বিবাহ করেছে, সে-ই বদলে গেছে । এর পর আমি রাবেয়াকে বিয়ে করলাম ।
এই রাবেয়াও সিরিয়ায় তেমনি ছিল , যেমন ছিল বসরায় রাবেয়া বসরী ।
স্বামীর ধনসমপ্দ অযথা ব্যয় না করা স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য ; বরং সে স্বামীর ধনসম্পদের হেফাযত করবে । রসূলে করীম সা: বলেন : স্ত্রীর জন্য হালাল নয় যে, সে স্বামীর গৃহ থেকে তার অনুমতি ছাড়া কোন খাদ্যবস্তু অন্যকে দেবে । তবে খারাপ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে কাঁচা খাদ্য সামগ্রী দিতে পারে । যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কাউকে খাওয়ায়, তবে সওয়াব স্বামী নেবে এবং গোনাহ স্ত্রীর উপর থাকবে ।
পিতামাতার উপর কণ্যা সন্তানের হক তাদেরকে অপরের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং স্বামীর সাথে সদ্ভাবে বসবাস করার শিক্ষা দেবে । বর্ণিত আছে, আসমা বিনতে খারেজা করারী তাঁর কণ্যার বিয়ের সময় তাকে এরুপ উপদেশ দান করেন : যে গৃহে তুমি এসেছিলে, এখন সেখান থেকে বের হয়ে এমন শয্যায় যাচ্ছ,যে সম্পর্কে তুমি ওয়াকিফহাল ছিলেনা । তুমি এমন ব্যক্তির কাছে থাকবে,যার সাথে পূর্ব থেকে পরিচয় ছিল না । অতএব তুমি তার পৃথিবী হবে । ফলে সে তোমার আকাশ হবে ।
তুমি তর জন্যে শান্তির কারন হলে , সে তোমার সুখের কারন হবে । তুমি তার বাঁদী হলে, সে তোমার গোলাম হয়ে থাকবে । স্বত:প্রণোদিত হয়ে তার কাছে যাবে না যে, তোমাকে ঘৃণা করে এবং দূরেও থাকবেনা যে, দ্রুত ভুলে যায় । বরং, সে তোমার কাছে থাকলে, তুমি তার নিকটে থাকবে । সে আলাদা থাকলে, তুমি দূরে থাকবে ।
তার নাক, কান, ও চোখের দিকে লক্ষ্য রাখবে । সে যেন তোমার কাছ থেকে সুগন্ধি ছাড়া অন্য কিছুর ঘ্রাণ না পায় । সে যখন শুনে তখন যেন তোমার কাছ থেকে ভাল কথা শুনে এবং যখন দেখে তখন যেন ভাল কিছু দেখে । স্ত্রীর আদব সমূহের মধ্যে একশ কথার এক কথা, স্ত্রী আপন গৃহের কাজে ব্যস্ত থাকবে । ছাদে আরোহন করে এদিক ওদিক তাকাবে না ।
প্রতিবেশীদের সাথে কম কথা বলবে এবং নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদের গৃহে যাবে না । স্বামীর উপস্হিতিতে এবং অনুপস্হিতিতে তার সন্মান রক্ষা করবে । প্রত্যেক কাজে তার সন্তুষ্টি কামনা করবে । নিজের ব্যপারে ও স্বামীর ধনসম্পদের ব্যপারে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না । স্বামীর অনুমতিক্রমে গৃহ থেকে বের হলেও সাধারন পোশাকে আবৃতা হয়ে পর্দার সাথে বের হবে ।
সড়কের মধ্যস্হলে ও বাজার থেকে বেঁচে চলবে । সর্বপ্রযত্নে নিজের অবস্হার উন্নতি ও ঘর-কন্নায় নিয়োজিত থাকবে এবং নামাজ-রোজার সাথে সম্বন্ধ রাখবে । স্বামীর কোন বন্ধু দরজায় আওয়াজ দিলে যদি স্বামী গৃহে না থাকে, তবে তার সাথে কোন কথা না বলাই নিজের স্বামীর আত্নমর্জাদার দাবী । স্বামীকে আল্লাহ তা’আলা যা কিছু দিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে । খুব সেজেগুজে থাকবে এবং স্বামী সম্ভোগ করতে চাইলে তজ্জন্যে সর্বাবস্হায় প্রস্তুত থাকবে ।
সন্তানদের প্রতি স্নেহমমতা করবে । স্বামীর কথার প্রত্যুত্তর দেবে না ।
এক হাদিসে রসুল পাক সাঃ বলেন,”আল্লাহ তাআল আমর পুর্বে জান্নাতে যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হারাম করছেন,কিন্তু আমি এক মহিলাকে দেখবো সে জান্নাতের দরজার দিকে আমার আগে আগে যেতে থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করবো ব্যাপার কি,এই মহিলা আমার আগে যাচ্ছে ? আমাকে বলা হবে ,হে মোহাম্মাদ সাঃ ! এই মহিলা সুন্দরী রুপবতী ছিল। তার দুটি এতিম শিশু ছিল।
সে তাদের ব্যাপরে সবর করে ছিল। ফলে তার যে দুর্দশা হবার ছিল তাই হয়েছে। আল্লাহতাআলা তার এই আত্নত্যগ পছন্দ করে তাকে এই মর্যাদা দান করেছেন।
স্ত্রীর অন্যতম আদব হচ্ছে, স্বামীর সাথে আপন রুপ-লাবন্য নিয়ে গর্ব না করা এবং স্বামী কুশ্রী হওয়ার কারনে তাকে হেয় মনে না করা । আসমায়ী বলেন, আমি জংগলে গিয়ে একজন নেহায়েত রুপসি মহিলাকে দেখলাম ।
সাথে তার স্বামীকে দেখলাম যরম কুশ্রী কদাকার । আমি মহিলাকে বললাম: আশ্চর্যের বিষয় , তুমি
তুমি এমন ব্যক্তির স্ত্রী হয়ে সুখী আছ! সে বলল: চুপ কর, তুমি ভুল করছ। আসল ব্যপার হচ্ছে সম্ভবত: সে তার স্রষ্টার সন্তুষ্টির কোন কাজ করেছে, যার বিনিময়ে আমাকে লাভ করেছে । আর খুব সম্ভবত আমার দ্বারা স্রষ্টার মর্জির খেলাফ কোন কাজ হয়েছে, যার শাস্তিস্বরুপ আমি এই স্বামী পেয়েছি । সুতরাং, আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য যা পছন্দ করেছেন টাতে আমি সন্তুষ্ট থাকব না কেন ? আসমায়ী বলেন: মহিলা আমাকে সম্পূর্ন নিরুত্তর করে দিল ।
স্ত্রীর অন্যতম আদব, সে কোন অবস্থাতেই স্বামীকে পীড়ন করবে না । হযরত মোয়ায ইবনে জাবালের রেওয়ায়েতে রসূলে করিম সা: বলেন : দুনিয়াতে যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে পীড়ন করে, তখন তার বেহেশতী হুর স্ত্রী দুনিয়ার স্ত্রীকে বলে : তুমি ধ্বংস হও । তুমি তাকে পীড়ন করোনা । সে-তো তোমার কাছে মুছাফির । সত্বরই তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের কাছে চলে আসবে ।
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর কর্তব্য হবে তার জন্য চার মাস দশ দিনের বেশী শোক প্রকাশ না করা । এটা বিবাহের অন্যতম হক । স্ত্রী এই চারমাস দশ দিন সুগন্ধি ও সাজসজ্জা থেকে বেঁচে থাকবে । যয়নব বিনতে আবু সালামা বলেন : আমি আমি আবু সুফিয়ানের মৃত্যুর পর তার কণ্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে হাবীবা রা: – এর কাছে গেলাম । তিনি হলুদ রংগের সুগন্ধি এনে আপন গালে মালিশ করলেন এবং বললেন : আল্লাহর কসম, আমার সুগন্ধির কোন প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু আমি রসুল সা:-কে বলতে শুনেছি, ”আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, এমন কোন মহিলার জন্যে মৃতের কারনে তিন দিনের বাশী শোক পালন করা বধ* নয় ; কিন্তু স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে ।
শোক পালন কালে স্ত্রী মৃত স্বামীর গৃহেই থাকবে । বাপের বাড়ী চলে যাওয়া জায়েয নয় । স্ত্রীর অন্যতম আদব, স্বামীর গৃহে যেসব কাজ সম্পাদন করা তার জন্যে সম্ভব, সেগুলো অম্লান বদনে করবে । হযরত আসমা বিনতে আবুবকর সিদ্দীক রা:- বর্ণনা করেন, ”হযরত যোবায়েরের সাথে আমার বিবাহ হলে তাঁর কোন ধন সম্পদ ছিল না । না ছিল কোন গোলাম, না ছিল বাঁদী ।
কেবল একটি ঘোড়া ও পানি আনার জন্য একটি উট ছিল । ফলে আমিই তার ঘোড়াকে ঘাস-পানি দিতাম এবং উটের জন্যে খোরমার বীচি কুটে খাবার দিতাম । পানি ভরে আনতাম এবং মশক শেলাই করতাম । এ ছাড়া আটা পিষতাম এবং দু’ক্রোশ দূর থেকে মাথায় বহন করে বীচি আনতাম । অবশেষে আমার পিতা হযরত আবু বকর রা:- আমার কাছে একটি বাঁদী পাঠিয়ে দিলেন ।
এতে আমি অনেক কাজ-কর্ম থেকে মুক্তি পাই । একদিন আমার মাথায় বীচির বস্তা ছিল, তখন পথিমধ্যে রসূলুল্লাহ্ সা:-এর সাথে সাক্ষাৎ হল । সাহাবীগণও তাঁর সাথে ছিলেন । তিনি আমাকে নিজের পেছনে সওয়ার করিয়ে নেয়ার জন্য আপন উষ্ট্রীকে বসার জন্যে ইশারা করলেন, কিন্তু পুরুষদের সাথে চলতে আমি লজ্জাবোধ করলাম এবং আমার স্বামীর আত্নমর্যাদাবোধ স্মরণ করলাম । কারন, তিনি অত্যন্ত আত্নমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন ।
রসূলুল্লাহ্ সা: আমার লজ্জা আঁচ করে চলে গেলেন । বাড়ি ফিরে আমি আমার স্বামী যোবায়রের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করলেতিনি বললেন: আল্লাহর কসম, তুমি যে মাথায় বীচি বহন করেছ, এটা রসূলুল্লাহ্ সা:-এর সাথে সওয়ার হওয়ার তুলনায় আমার জন্যে কঠিনতর ।
–স্বামীর হক – / এহইয়াউ উলুমিদ্দীন ২য় খন্ড পৃ:২৯৬ (ইমাম গাযযালী র: ) -
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।