আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌলবাদ ও আমাদের নারী সমাজ

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
এককালে আমরা পরিবারের লোকজনদের নিয়ে ‘মুড়ির টিন’ নামে কথিত পাবলিক বাসে চড়তাম। তখন বিভিন্ন দাওয়াই বিক্রির জন্য এক ধরনের ক্যানভাসার অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের দাওয়াই বিক্রি করতেন। তাদের এইসব কথাবার্তা শুনে আমরা খুব বিব্রতবোধ করতাম। কিন্তু তারা তো নেহাত পেটের দায়ে সেইসব এগুলো করতেন।

আর আমাদের নারীদের সম্পর্কে আল্লামা (!) শফী সাহেবের মন্তব্য এর চেয়েও অনেক বেশি কুরুচিসম্পন্ন। তবে শুনেছি সাম্প্র্রতিককালে ‘মুড়ির টিন’ নামে কথিত গাড়িতেও নাকি ঐসব ক্যানভাসারদেরকে উঠতে দেয়া হয় না। তবে কি আল্লামা (!) শফী সাহেবের ব্যাপারেও একই স্ট্যান্ডার্ড প্রযোজ্য নয়! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইদানীং আমরা দেখছি আল্লামা (!) শফী নামক গণশত্রুকে হেলিকপ্টারযোগে আনা-নেয়ায় ব্যস্ত অনেকেই। কারণ বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর মুদ্রিত মস্তক যতটানা মুজিব প্রেমিকদের কাছে এর চেয়ে ঢেড় বেশি মুজিব বিরোধীদের কাছে।

কিন্তু আমরা ঠিক কতটুকু চিনেছি আকাশপানে উড়ে চলা ঐ গণশত্রুকে? আমরা জানি ফটিকছড়ির মতো দেশের অনেক স্থানেই মাইকে ডাক দিয়ে একদল নরপশুর মাধ্যমে অসংখ্য মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাড়ি-গাড়িসহ সবকিছু। কিন্তু যে ডাক আজ আমরা শুনতে পারছি আসলে তা বহু বছর আগের। বিশেষ করে আশির দশকে যখন দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ঠিক তখন গণশত্রুরা ধর্মের নামে বিরোধিতা শুরু করে জন্ম নিয়ন্ত্রণের।

ঝাঁপিয়ে পড়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাঠকর্মীদের ওপর। বস্তুত ইসলাম ধর্ম ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। আমরা বিশ্বাস করি ইসলাম ধর্ম একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান। কারণ পবিত্র হাদিস শরীফে জন্ম নিয়ন্ত্রণের আদি পদ্ধতি ‘আযল’ এর বিধান রয়েছে। তবু কেন আল্লামা (!) শফীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করছে।

এর কারণ একটিই, আর সেটা হলো— তাদের এমন একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন যারা হবে অন্ধ, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু এবং অশিক্ষিত। রাষ্ট্রীয় চরিত্র ও আমাদের উদাসীনতার কারণেই গণশত্রুরা জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। আর ওই অন্ধ, পঙ্গু (মানসিক ভাবে), অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীই মাইকে ডাক দিলে জড়ো হয়, তেড়ে আসে মানুষের ওপর হিংস্র জানোয়ারের মতো। অথচ আমরা যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে আসছি তারা মনুষ্যত্বের বিস্তার ঘটাতে পারিনি। আশির দশকে যখন দেশে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো বিস্তার লাভ করছিল এবং বিশেষ করে নারীদের কর্মমুখী করে তুলার প্রয়াস শুরু হয়েছিল ঠিক তখন যে দুটি গোষ্ঠী বিশেষভাবে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ধর্মের নামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এর একটি দেশের সুদি ব্যবসায়ী এবং অন্যটি দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী।

তাদের উভয়েরই উদ্দেশ্য ছিল নারীদের কর্মবিমূখ অশিক্ষিত ও পুরুষের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা। কারণ নারী নামক একটি জনগোষ্ঠীকে যদি কেবলমাত্র সন্তান উত্পাদন ও যৌন পীড়নের হাতিয়ার করে রাখা যায় এবং সর্বোপরি অন্ধ বধির (চিন্তাগতভাবে) করে রাখা যায় তাহলে গণশত্রুরা ইচ্ছে মতো মসনদ বহাল তবিয়তে থাকবেন। কিন্তু আমাদের অতি দুর্ভাগ্য আজও দেশের সর্বক্ষেত্রে সর্বশ্রেণীর নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেজন্য নারীদের ওপর বার বার আঘাত আসছে। যদিও গণশত্রুদের একান্ত কামনা- নারীরা আবার বাজারে আম, কাঁঠালের মতো বিক্রি হবে।

কিন্তু কালের বিবর্তনে আর সেইদিন কখনই ফিরে আসবে না। কারণ দিন দিন বিদ্যুতের খুটি চলে যাচ্ছে গ্রামের ভিতরে এবং প্রযুক্তির সমপ্রসারণ হচ্ছে। Click This Link target='_blank' > - :
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।