ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় দায়িত্বের শপথ নিয়ে দেশে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করল বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ। প্রগতি লেখক সংঘ মূলত একটি সাহিত্য সংগঠন। এই সংগঠনটির রয়েছে সুদীর্ঘ ধারাবাহিক ইতিহাস। সাম্যবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র, সামাজিক পশ্চাত্পদতা ও রাজনৈতিক পরাধীনতাকে সাহিত্যের উপাদান করে সমাজের মানুষকে জাগ্রত ও প্রগতিশীল ভাবধারায় উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন যারা এ সংঘটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তাদের মিলনক্ষেত্র। ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতে ১৯৩৬ সালের ১০ এপ্রিল সাজ্জাদ জহিরের নেতৃত্বে লখনৌতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিখিল ভারত প্রগতী লেখখ সংঘ’।
কিন্তু একে শুরু বলা যাবে না। সংঘের শিকড় খুঁজতে গেলে যেতে হবে আরেকটু অতীতে। ১৯৩৫ সালের গোড়ার দিকে লন্ডনে ‘ভারতীয় প্রগতি লেখক সংঘ’ নামে একটি সাহিত্য সভা গঠিত হয়। সৈয়দ সাজ্জাদ জহির এবং মুকুল রাজ আনন্দ এর উদ্যোক্তা ছিলেন। এরপর ১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ’।
এই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৯ সালে সোমেন চন্দ, সতীশ পাকড়াশী, রণেশ দাশগুপ্ত, জ্যোতির্ময় সেনের উদ্যোগে প্রগতি লেখক সংঘ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই একসময় সংঘের কার্যক্রম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে। প্রগতি লেখক সংঘ আন্তর্জাতিক রূপ পায়।
প্রগতি লেখক সংঘ উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ্ত সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। সাম্যবাদ ও মানবতাবাদই হলো এই সংঘের কর্মীদের মূলমন্ত্র।
একসময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুন্সী প্রেমচাঁদ সভাপতি এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংঘের বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেছেন।
ঢাকায় প্রগতি লেখক সংঘের কার্যক্রমে প্রথম থেকেই সোমেন চন্দ যুক্ত ছিলেন। দক্ষিণ মৈশুন্ডির ‘প্রগতি পাঠাগার’ ছিল সংঘের কার্যালয়। সেখানে সংঘের নিয়মিত সাহিত্যের বৈঠক বসত।
বৈঠকে পঠিত প্রবন্ধের একটি সংকলন ‘ক্রান্তি’ ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়। ঐ বছরই গেণ্ডারিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রগতি লেখক সংঘ প্রথম সম্মেলন করে। কাজী আবদুল ওদুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদক এবং সোমেন চন্দ সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এসময় সংঘটি দেশে স্বর্ণসময় অতিক্রম করছিল। বহিরাঙ্গনেও তখন সংঘের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত ছিল।
১৯৪১ সালে জার্মান কর্তৃক সোভিয়েত রাশিয়া আক্রান্ত হলে লেখক সংঘ প্রতিবাদ স্বরুপ ব্যাপ্টিস্ট মিশন হলে ‘সোভিয়েত মেলা’ নামে সপ্তাহব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর রাজনীতিতে পরিবর্তন দেখা দিলে সংঘের কার্যক্রম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পর ধীরে ধীরে প্রগতি লেখক সংঘের কার্যক্রম থেমে যায়।
২০০৮ সালে দেশের কিছু প্রগতিশীল লেখকের প্রচেষ্টায় ‘বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ’ পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে। সেসময় একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে সম্প্রতি মহান মে দিবসে গঠন করা হয় বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি। নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক বিশ্বজিত্ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রতন সিদ্দিকী, সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, কোষাধক্ষ কামরুল হাসান শায়ক এবং প্রচার ও অনুষ্ঠান সম্পাদক হন তাপস রায়।
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের অস্থায়ী কার্যালয় ৪৩ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সড়ক, শান্তিনগর, ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।