আমার নানার তখন ১০ জনের সংসার। শাহীনবাগের আধাপাকা তিন রুমের নিজ বাড়ী আর নানার সরকারী চাকরীটা তখন এই পরিবারের সম্বল। বাসার বড় বোন হিসাবে আম্মুকে তখন একহাতেই সব সামলাতে হতো। ছোট ভাই বোনদের খাবার,গোসলের পানিটা কল থেকে তোলা,পড়াশোনা আম্মা বেশ ভাল ভাবেই সামলাতেন। এক ভাইকে কোলে নিয়ে আরেক বোনকে পড়াটা দেখিয়ে দিতে দিতেই রান্নাও করতেন।
আমার মামা,খালারা এখনও মাঝে মাঝে ই গল্প গুলো বলেন। বড় আপার প্রতি সম্মান এর চাইতে ভালবাসাটি তাদের বেশী। তাইতো দেখি তাদের অতি ছোটখাটো কোন আয়োজনেও আমার মা কে তাদের চাই। সুদূর কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া থেকেও তারা তাদের বোনটিকে ভুলে যায় না একবারও। সেই কস্টের দিনগুলোতেও আমার মা একবারও পথ হারাননি।
আমার নানা তার শেষ দিনগুলোতে অনেক কথা বলতেন আমার সাথে। আম্মার জন্য নানা যত দোয়া করে গেছেন তাতে অন্য ভাই বোনের হিংসা করতে ই পারে ।
আমার বাবার সংসারে আসার পর আমার আম্মা আরও একবার নিজেকে প্রমান করলেন। সংসার জীবনের চাইতে রাজনৈতিক জীবনটাই আব্বার বেশী আপান মনে হয়। সেখানেও আম্মা তার নিজ শ্রমের জমানো টাকা দিয়ে আব্বার রাজনীতির পথে সাথী হয়েছেন,বিপদে সাহস দিয়েছেন।
গ্রামে থাকা আমার কৃষক দাদা,আদিম আমালের দাদু র খবর খবর নিয়মিত ই রাখেন। একটা ঈদ এখনো গ্রামে গিয়ে দাদা দাদুর সাথে করেন। আব্বা ব্যস্ততার কারনে তার বাবা মার যতটা খবর রাখতে পারেন না আম্মু আব্বুর অজান্তেই তার চেয় বেশ ভাল খবর রাখেন। গ্রামে গেলে দেখি কত সহজেই সবার সাথে মিশেন,রান্না করেন। তখন মনেই হ্য় না ঢাকাতে বড় হওয়া কোন মেয়ে, যেন এই গ্রামের ই বউ।
ঢাকা শহরে আমাদের পরিবারে শুরুটা একদম খালি হাতেই বলা যায়। আমার ব্যাংক কর্মকর্তা মা অফিসে যাবার সময় খাতা ভর্তি পড়াশোনা দিয়ে যেতেন। সন্ধ্যায় অফিস থেকে এসে কোন কোন দিন শাড়ীটা বদলানোর সময় হতো না,ঘরের কাজ আমাদের পড়া সব একলাই সামলাতেন। পিটানি ও কম খাই নাই জীবনে। আমার ছোট ভাইতো একবার অভিযোগ করলো আমাদের আম্ম আপন আম্মু না!!!!!!!!আজ যখন তিন চার মাস পর তিন ভাইবোন রাত জেগে আম্মুর সাথে আড্ডা দেই আর সেই দিন গুলোর কথা মনে করি তখন বেশ মজা হয়।
ঢাকা শহরের এক প্রান্তে এক কানা গলির শেষ মাথায় আমার বাবা মার কস্টে তৈরী আধখানা বাড়ী তে আমার বেশ ভাল ই আছি। বাসায় গেলে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার প্রিয় বেলী ফুল আম্মা আমার মাথার কাছে রেখে অফিসে গেছেন। আম্মাকে বলি জীবনে ত কিছুই পেলেন না। আম্মা হাসে আর বলে অফিসে আগে সবাই কানিজ বলে ডাকতো। এখন ডাকে উকিলের বা ডাক্তারের মা বলে, এইটাই আমার প্রাপ্তি।
আমি ভাবি আর অবাক হই একটা মানুষ এত অল্পতে কিভাবে খুশী হয়?
আমার আম্মু এখন নানু হয়ে গেছে । আমার ভাগিনা জাহিন এর প্রতি আমার মা এর দরদ দেখলে মাঝে মাঝে হিংসা লাগে।
সামনেই মা দিবস। আমি দিবসে বিশ্বাসী নই। তবুও বন্ধুদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনে লিখতে ইছা করলো।
এখনকার মেয়েরা নাকি ছেলেকে বলে আমি তোমার পরিবারের সাথে থাকতে পারবো না। আলাদা থাকব,তোমার ফ্যামিলির স্ট্যাটাস ছোট!!!তোমাদের ঢাকাতে কয়টা বাড়ী?? আরো কত কি!!!!এসব শুনে হাসি আর আমার মায়ের জীবনের ঘটানা গুলো ভাবি । । আম্মাকে এই আধুনিক ঢাকায় বড়( !!) হওয়া মেয়েদের সাথে মিলাতে পারি না। বড় অচেনা লাগে।
সেই সব আধুনিক(!!!) মেয়েদের বলি মেয়ে তুমি মা হয়ে উঠো ...ডাইনি হয়ো না। । সবার আম্মূকে মা দিবসের ভালবাসা।
n.bকিছু ঘটনা কাছে থেকে দেখা ও শোনার পর গত দুই দিন বেশ খারাপ লাগতেছিল। আমি ভাল লেখক নই.আমার আম্মা ও খুব সাধারন একজন ।
কিছু মানুষকে কস্ট দেবার জন্যই লেখাটা লেখা। আমার মার জন্য দোয়া করবেন। এখন বেশ ভাল বোধ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।