আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহুর্ত

salehin.arshady@gmail.com

সকাল থেকেই আজ আকাশের মন খারাপ। গম্ভীর কালো হয়ে আছে। তবে বাতাসে সেই গুমোট ভাব টা নেই। পশ্চিম থেকে শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অভ্যাস মত ভোরে ঘুম ভেঙে গেল।

এই সময় টায় কিছু করার থাকে না। পেপার ও আসেনি। আর আসলেও কি। আজকাল পেপার পড়তেও ইচ্ছা করে না। একবার ভাবলাম রাজিবকে ফোন দেই।

অনেকদিন শীতলক্ষ্যার পাড় থেকে সূর্যোদয় দেখা হয় না। শাবদি পর্যন্ত ঘুরে আসা যাবে। কি ভেবে আর ফোন করলাম না। কি দরকার একাকিত্ব টা নষ্ট করে। বেড়িয়ে পড়লাম ঘর থেকে.... শহর থেকে দূরে, বিসিক শিল্প নগরীর পাশে একটা জায়গার নাম বাড়ৈ ভোগ।

এখানকার আখড়ায় প্রতিমাকে বার পদের ভোগ দেয়া হয় সেই প্রাচীন কাল থেকে। সেই থেকে জায়গার নাম বাড়ৈ ভোগ। মেইন রোড থেকে নেমে একটু সামনে গেলেই দশ ফিট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বিশাল এক কম্পাউন্ড- আমার কর্মস্থল। গেট খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবুজ হলুদ আর লালের এক ধাক্কা এসে লাগল চোখে। গেট বরাবর সবুজ ঘাসের কার্পেট।

ঠিক ডানেই অগোছালো বাগান। ঝাঁকে ঝাঁকে হলুদ কসমস ফুটে আছে। বাগানের পার ধরে রক্ত জবাদের মিছিল। সাজানো বাগান এর চেয়ে অগোছালো বাগান বেশী সুন্দর লাগে আমার কাছে। প্রকৃতির এই ব্যাপার গুলোতে মানুষের হাত পরলেই কেমন যেন এক মেকি ভাব চলে আসে।

আমার গন্ধ টের পেয়ে গেছে জিনি। ঘেউ ঘেউ করতে করতে তীর বেগে এসে দিল এক লাফ আমার উপর। মনের আঁশ মিটানো আদর না করা পর্যন্ত আমাকে ছাড়বে না.... চোখের পলকে ফর্সা হয়ে গেছে চারিদিক। প্ল্যান্টের পিছনের ছোট্ট জংলাটা জেগে উঠেছে আগেই। এখানে অনেক পাখি আছে সেটা জানলেও আজকের মত আগে খেয়াল করে দেখিনি।

কিচিরমিচির কুকু কাকা চিঁচিঁ আওয়াজে অশান্ত হয়ে উঠল জায়গা টা। কিন্তু খারাপ লাগছে না একটুও। গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে পাখি গুলোকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। মন্ত্রমুদ্ধের মত তাকিয়ে আছি প্রকৃতির দিকে। এইদিক টায় সারি সারি তুলসি গাছ।

দুটি পাতা ছিঁড়ে এর ঝাঁঝালো গন্ধ টুকু বুকে টেনে নিলাম। - স্যার, আজকে এত সকালে? চাঁন মিয়ার কথা কানে যেতেই মোহ কেটে গেল। -হুমম। - স্যার আপনি তো আম গাছ গুলো দেখেন নাই। পিছনে গিয়া দেইখ্খা আসেন গিয়া।

কেমনে আগলায় রাকসি। চামচিকা আর চড়ই এর জ্বালায় আর টিকা গেল না স্যার। ধনিয়া ক্ষেত টা পুরা সাফ করে দিসে। উফফ্ ব্যাটা এত কথা বলে কেন? সামনে থেকে না সরালে পটর পটর করতেই থাকবে বুইরা ভাম। - চাঁন মিয়া, একটা কড়া করে কফি আর একটা বেনসন নিয়া আস।

...জংলার আর একটু পিছন দিকে এগিয়ে যেতেই আম গাছ গুলো দেখা দিল। আমের ভারে গাছ গুলো নুয়ে পড়েছে মাটিতে। চোরের ভয়ে পাঁচিলের উপর বড়ই এর ডাল দেয়া। আম গাছের পাশেই কয়েকটি ভুট্টার গাছ। তার পাশে কচি পাটশাক আর ধনে পাতার টুকরো টুকরো ক্ষেত।

বাঁশঝাড় টার ছায়ার নীচে কচি দূব্বার চাদরে গা এলিয়ে দিলাম। চোখের ঠিক সামনেই বিশাল কড়ই গাছ। গাছটির ডালে ডালে পাখির বাসা। শুয়ে শুয়ে পর্যবেক্ষন শুরু করলাম। কড়ই গাছে চারটি শালিক পরিবার আর একটি কাক পরিবার বাসা বেঁধেছে।

সারাদিন শালিকের সাথে কাকেদের ঝগড়া। দুটা বাসায় মনে হয় ছানা আছে। ইশশ....আমি ফটোগ্রাফার হলে এগুলো তুলতে পারতাম। আম গাছ আর ডাব গাছে হাজার হাজার চড়ুই আর কাক পরিবারের সহবস্থান। শয়ে শয়ে চড়ুইয়েরা যখন ধনে পাতার ক্ষেতে হামলা চালায় তখন খুব চমত্‍কার লাগে।

চাঁন মিয়ার দৌড়ানি খেয়ে আবার ঝাঁক বেধে উড়ে যায় নিরাপদ দূরত্বে। বেচারি বুড়োটা ঝিমানো শুরু করলেই আবার বি-৫০ জঙ্গি বিমানের মত হামলে পড়ে। ক্যাফেইন আর নিকোটিনের কম্বো রক্তে মিশতেই চনমনা হয়ে উঠলাম। দূরে জিনি একটা ইদুঁর মেরে এখন ওটা নিয়ে খেলছে। যেখানে বসে আছি ঠিক তার পাশেই পিঁপড়ার বড় একটা ঢিবি।

শ্রমিক পিঁপড়া রা নানা জায়গা থেকে খাবার নিয়ে টুপ করে গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। কতদিন পর আজকে বুলবুলি আর টুনটুনি দেখলাম। আমার চারপাশে লাইভ ন্যাট জিও। কত কিছু উপভোগ করার আছে জীবনে। ঘুন পোকা কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলার আগেই জীবনের মজা টা নিয়ে নেই।

এখন আমি আম পারব। কাঁচা আমের সরবত খাব। এরপর ডাব গাছে উঠে ডাব পারব। সেই সাথে ক্লাইম্বিং টাও প্র্যাকটিস হয়ে যাবে। দেখতে পারলে সবকিছু সুন্দর লাগে।

মামুলি জিনিস ও খুব অসাধারন হয়ে ধরা দেয়। আফসোস করে আমি মরতে চাই না। পুরোটা উপভোগ করে তবে শ্রান্ত হব। আই লাভ মাই লাইফ। এর উপর কারো অধিকার নাই।

আমার ভিতু মনের ও নাই। [গত কয়েকদিন থেকে মন টা অনেক অস্থির ছিল। হয়ত কিছুটা ভয় ও পেয়েছিলাম। অজানা আশংকায় নার্ভ গুলো সবসময় এলার্ট থাকত। ধুর কি লাভ চিন্তা করে।

যা হবার তা হবেই। চিন্তা করে কিছু উল্টাতে পারব না। আবদুল্লাহ ভাই কে কোট করি- "চিন্তা করলে ব্রেন সেল মরে যায়, তাই আমি চিন্তা করি না। " ভেবেছিলাম লেখাটা উত্‍সর্গ করব নিবিড় ও আসিফ কে। পরে উপলব্ধি হল এই আজাইড়া লেখা তাদের উত্‍সর্গ করার মানেই হয় না।

ওদের উত্‍সর্গ করতে হবে একটা টাফ এক্সপিডিশন প্ল্যান। আসিফ ও নিবিড় তোমাদের চাঙ্গা হওয়ার অপেক্ষা আছি আমরা। তোমরা চাঙ্গা হলেই আমরা বেড়িয়ে পরব আবার। নতুন গন্তব্যে...অজানার উদ্দেশ্যে। ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।