আগের পর্ব লেখার পর আর সময় পাচ্ছিলাম না বাকি পর্ব টা লেখার। যাই হোক ভুমিকা না দিয়ে শুরু করি।
• আমার একটা স্বভাব ছিল চিমটি দেওয়া। খুবি বাজে স্বভাব। এই ব্যাপারে আমার ছোটমামা ভাল বলতে পারবে।
কারণ তাকেই বেশী চিমটি দেওয়া হত। প্রায়ই বলতো, তোর এত খামচানী স্বভাব কেনোরে? আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর দেখা গেলো হাজব্যান্ডকে চিমটি দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তো হাজব্যান্ড ব্যাচারা নতুন বৌ কে কিছু বলতে পারে না। অতিরিক্ত ভদ্র টাইপ আর কি।
আমিও মনের সুখে চিমটি দেই। আস্তে আস্তে বুঝলাম সে একটু বিরক্ত হচ্ছে। তাই চিমটির পরিমান কমতে লাগলো। একদিন শশুর বাড়ীর এক প্রোগ্রামে সবাই বসা। আমার এক পাশে এক মুরুব্বী, আর এক পাশে আমার হাজব্যান্ড।
আমি কি একটা কথা আস্তে করে আমার হাজব্যান্ডকে বলতে যাওয়ার আগে তাকে চিমটি দিলাম। তারপর যখন কথা বলতে যাব, আমার আক্কেল গুরুম। ওরে আল্লাহরে, কাকে চিমটি দিলাম। তাকিয়ে দেখি মুরুব্বী। খাইসে আমারে, মুরুব্বীকে চিমটি দিয়ে ফেলেছি।
আমি হাসবো না কাদবো বুঝলাম না। শুধু বললাম ‘সরি’।
মুরুব্বী অতি ভাল মানুষ। কিছুই বলেননি। ব্যাপারটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।
এরপর আর কনোদিন কাউকে চিমটি দেইনি।
• আমার হাজব্যান্ড গাড়ী চালাচ্ছে। আমি তার পাশে বসা। হঠাৎ দেখি সামনে আমার ছোটভাই তানভীর হেটে যাচ্ছে। আমার ভাই আবার তবলীগ করে।
অ্যাশ কালারের পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা। মাথায় পাগড়ী বাধা। কাধে লম্বা ঝুলানো ব্যাগ। আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম, ‘এই গাড়ী সাইড করো। তানভীর যায়’।
সে বললো, ‘কোথায় তানভীর?’ আমি বললাম, ‘ঐ তো সামনে’।
সে বললো, ‘কাকে কি বলো?’ আমি ক্ষ্যাপে গেলাম। বললাম, ‘কি, আমার ভাইকে আমি চিনি না। এখনি সাইড করো গাড়ী। আমি কথা বলবো।
’ পুরা ঝারি দিলাম। সে গাড়ী সাইড করলো। আমি জানালার গ্লাস নামিয়ে ডাকলাম, ‘তানভীর, কৈ যাস?’ বলার পরই বুঝলাম সর্বনাশ, কাকে কি বলি। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমাকে কিছু বলছেন?’ আমি বিব্রত হয়ে বললাম, ‘সরি ভাই, আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার ছোটভাই’।
এরপর হাজব্যান্ড এর ঝারি শুরু।
• বাসায় বুয়া নেই। অফিস বন্ধ। সব কাপড় ধুয়ে ছাদে কাপড় নিয়ে গেলাম। ছাদে উঠে চোখ ধাধিয়ে গেলো। দুপুর ১২টার দিকে কি যে রোদ ছাদে।
রোদের জন্য চোখ পিটপিট করে তাকাতে হচ্ছে। কিছুই দেখতে পারিনা। তো কাপড় রোদে শুকাতে দিচ্ছি। দেখি পাশের বাড়ীর বুয়াও কাপড় শুকাতে দিচ্ছে। আমি বুয়াকে ডাকলাম, ‘এই বুয়া আমাদের একটা বুয়া ঠিক করে দাও না’।
আমার কথা শুনে বুয়া ছাদের কিনারে আসলো। আমিও কাছে গেলাম। আল্লাহরে, এইটাতো পাশের বাড়ির আন্টি। আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাদের বাসায় বুয়া নেই?’ আমি বিব্রত হয়ে বললাম, ‘না মানে, বুয়া নেই। আর কি রোদ দেখেন, আমি ঠিক মত আপনাকে চিনতে পারিনি’।
তারপর অনেকক্ষন গল্প করে নিচে নামলাম। আসলে ঐ বাসার বুয়ার চেহারা আর কাপড় একদম আন্টির মত। আর তারাও বুয়াকে ভালো কাপড় জামা দিতেন। হঠাৎ করে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। আন্টিরা এখন আর পাশের বাড়িতে থাকেন না।
ভালো মানুষ ছিলেন।
• আমার মেয়ে তখন খুব ছোট। স্কুলে ভর্তি হয়নি তখনো। পাশের বাড়ীর (আমাদের পিছনের বাড়ি) মহিলাকে কখনো দেখিনি। উনার বাসায় জাফর নামে কেউ থাকতো।
কারন প্রায় সময় উনি চিৎকার করে তাকে ডাকতেন। একদিন সকালে তিনি ডাকছেন, ‘জাফর, জাফর। একটা ডিম আনো’।
উনি ডেকেই যাচ্ছেন। আমার মেয়েও তখন চিৎকার করে বলছে, ‘জাফর নেই,জাফর নেই’।
আমার মেয়েকে থামানো যাচ্ছিল না। কি যে লজ্জা লাগছিল।
• আমার ছেলে যখন ক্লাস ওয়ান বা টুতে পড়তো তখন সে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল একবার। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। নার্স এসে ব্লাড নিচ্ছিল।
আমার ছেলে বললো, ‘রক্তের কাজ শেষ হয়ে গেলে রক্তগুলো ফেরত দিয়ে যাবেন’।
আহারে আমার এত মায়া লাগছিলো। মনে হচ্ছিল নিজের রক্তগুলি দিয়ে দেই তাকে।
• তরমুজ আমার অনেক প্রিয় ফল গুলোর মধ্যে একটি। সেদিন অফিসের বাস থেকে নেমেই দেখলাম ভ্যান গাড়ীতে করে এক লোক তরমুজ বিক্রি করছে।
খালি একশ, খালি একশ বলে চিৎকার করছে। তরমুজের সাইজও বড়। এই সাইজের তরমুজ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দাম। কাছে গিয়ে দেখলাম খারাপ না। আমি বললাম, দুটো নিবো।
চিন্তা করলাম যে একটা আম্মুকে দিব, আরেকটা বাসায় নিবো। তো দরদাম করে দুটো তরমুজ নিলাম ১৮০ টাকাতে। হি হি হি। দূটো নেটের ব্যাগে দুটো তরমুজ বেধে দিলো। হাটা শুরু করলাম।
কাধে অফিসের ব্যাগ। ঐটা পাচ কেজি ভারী। তার উপর দুটো তরমুজ। একটাও রিক্সা নাই। যাও একটা রিক্সা পেলাম আমার অবস্থা দেখে বেটা ডাবলের বেশী ভাড়া চাইলো।
মেজাজ বিগড়ে গেলো। ধুররর, যা থাকে কপালে, রিক্সাই নিবো না। হাটা শুরু করলাম। ভাবলাম একটু কষ্ট হবে কিন্তু যেতে পারবো। মনে মনে ভাবলাম আধা মাইল কি আমি হাটতে পারবো না!পাচ মিনিট হাটার পর আর পারিনা রে বাবা।
আমি একটু থামি, তরমুজ রাস্তায় রাখি, আবার চলি। একটা রিক্সাও পাই্না। নিজের বোকামির জন্য এখন আরো রাগ লাগছে। আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। আল্লাহ একটু হেল্প করো প্লিজ।
আমার পিছনে দু’জন মহিলা আমাকে সাইড কাটিয়ে চলে গেলো। আর সামনে গিয়ে ফিরে ফিরে আমার দিকে তাকাতে লাগলো। কেমন জানি লাগে। আজকাল তো মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। তারা থামলো।
একজন আমার কাছে এসে বললো, ‘তরমুজ দুটো আমারে দেন। আপনিতো আলগাইতে পারতাছেননা’।
বলেই আমার হাত থেকে জোর করে তরমুজ নিতে চাইলো। আমি বললাম, ‘ভাই অসুবিধা নাই, আমি পারবো’।
ঐ মহিলা শুনবেই না।
সে আমার হাত থেকে জোর করে তরমুজ নিবে। তরমুজওয়ালা দুটো ব্যাগ একসাথে বেধে দিয়েছিল। তাই একটা তরমুজ তার হাতে , আরেকটা আমার হাতে। দু’জনে মিলে টানাটানি করছি রাস্তার মাঝে। আমি মহা বিব্রত।
সে নিবেই আমার হাত থেকে। বললো, আমি আপনাকে চিনি, ভালো জানি। আমি আপনার ছোট বোন হলে আমাকে দিতেন না। ইত্যাদি কি সব বলে বুঝাতে লাগলো। এক সময় না পেরে তার হাতে দিয়ে দিয়ে দিলাম।
তারপর বললাম, ঠিক আছে একটা আমি নেই, আরেকটা আপনি নেন। তাহলে আপনারো কষ্ট কম হবে। না, সে শুনবেই না। কি আর করা, দুটোই নিলো আর আমার সাথে হাটতে লাগলো। গল্প করতে করতে হাটতে লাগলাম।
আবার চাইলাম, তখনো দিলো না। একেবারে আমার বাসায় এসে আমার হাতে দিলো। একটা তরমুজ জোর করে তাকে দিয়ে দিলাম। নিতে চাচ্ছিল না। এখনো এমন মানুষ দুনিয়াতে আছে !!! চিনে না, জানে না, কোথা থেকে এসে আমাকে সাহায্য করে গেলো।
বাসায় এসে আল্লাহর কাছে শোকরানার নামায পড়লাম।
• আমার ছেলে ছোট থাকতে একবার এসে বললো, ‘মা, আমি মুরগীর দুধ খাবো’।
কিভাবে যে তার মাথায় এটা আসলো বুঝলাম না। আমি হাসতে হাসতে শেষ। অনেক বুঝানোর পর সে বুঝলো যে মুরগীর দুধ বলে কিছু নেই।
হি হি হি !!
বিব্রত হওয়ার কাহিনী আপাতত শেষ। আল্লাহ যেনো আর এই ব্যাপারে না লিখতে হয়। আর বিব্রত হতে চাইনা।
আগের পর্ব-http://www.somewhereinblog.net/blog/tan2903/29248276
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।