ক.
স্টেশনে বসে আছি ঠায়। ট্রেন এসে আবার চলে যায়। বুক পকেটের টিকিট শরীরের ভাপে ভিজে জবুথবু। কেউ আসবার কথা নই। আমি ফিরে যাব কারও কাছে এই শহরে এমন কেউ নেই।
কাউকে পাঠাবনা ভেবে যে চিঠিখানা লিখেছিলাম, দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলেছি পরিত্যক্ত এক পুকুরে। আর বালিকা বেশ্যার মধ্যগগণে চুমু খেয়ে উঠে এসেছি মধ্যদুপুরে, চুপিসারে। এর বেশি কিছুই রেখে যাচ্ছি না এই শহরে।
আরও একবার ভালো করে দেখে নিতে চেষ্টা করি শরীরের প্রতিটা ভাজ, হাত গলিয়ে পড়ে শূন্যে। এদিক ওদিক ভালো করে দেখি - আমি কারও ছায়া, একাকী অপেক্ষমাণ।
আমার অস্পষ্ট অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না কারও। আমি স্টেশনের প্রতিটা দেহের সাথে মিলিয়ে দেখলাম নিজেকে। বুঝলাম আমাকে রেখেই ফিরে গেছে সে, অন্য কোনও ছায়ার সন্ধানে।
বিমূর্ত আমি মূর্ত হওয়ার সন্ধানে খুঁজে ফিরি শরীর। ছয়ফিট ছিপছিপে গড়ন - একটু এদিক-ওদিক হলেও ক্ষতি নেই, কে কার ছায়া মেপে দেখে! শরীর বড় দরকার, মেয়েটি শরীর ছাড়া ভালোবাসা বোঝে না একদমই।
খ
ট্রেন থেকে নেমেই হাঁটা দিই রাজপথের আইল ধরে। সূর্য তখন সম্মুখদিকে। ফাকা রাস্তায় পিছন ফিরে দেখি, ছায়াটি নেই সাথে। কি সর্বনাশ! দ্রুত ছুটে যাই স্টেশনে। তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম তাকে শত শত মানুষের ভিড়ে।
কোনও ছায়াই মিলল না আমার সাথে - না আকার, না প্রকারে!
ফিরতি ট্রেনে ফিরে গেলাম ফেলে আসা শহরে। রাস্তায় অলিতে-গলিতে ছায়ার সন্ধানে। চলতি পথে প্রতিটি ছায়ার সাথে মিলিয়ে দেখি নিজেকে। এখন বুঝতে পারছি, ওকে চিনে ও দেখে রাখবার বড় দরকার ছিল।
শেষ পর্যন্ত না পেয়ে জনসমুদ্রের মাঝখান থেকে অন্য একটি ছায়াকে নিয়ে সটকে এসেছি নীরবে।
এখন আমি ওকে চোখে চোখে রাখি। সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে পরখ করি ঘনঘন। মাঝে মধ্যে কথাও বলি ওর সাথে। অন্যের ছায়াকে নিজের করার চেষ্টায় এখন কেটে যাচ্ছে আমার দিন রাত্রি।
গ.
লোকটি (যার ছায়া আমি ছিনতাই করেছিলাম) এতদিনে নিশ্চয় ছিনতাই করেছে অন্য একটি ছায়া।
তারপর সেই লোকটি আর এক জনের। অতঃপর ঐ লোকটি অন্য কারও কিংবা আপনার...! এই ভাবে শুরু হয়েছে ছায়া ছিনতায়ের কাহিনী। আজকাল আমি আলোর নিচে ছায়া সমেত শরীর দেখলেই জিজ্ঞেস করি - আপনার ছায়াটি আসলেই আপনার তো ? তাই আমাকে পাগল বলে কেউ কেউ, এমনি করে সমাজের চোখে আমি ‘ছায়া-পাগল’ হয়ে উঠি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।