পরাঞ্জয়ী...
নিটোলের লেখা কবিতাটা পড়লাম। ডায়রীর পাতায় লিখে রেখেছে, ছোট করে নীল কালিতে। শিরোনাম নেই, তবুও বোঝা যায় কাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে। অন্যের ডায়রী পড়া অন্যায়। জানি, তবুও...................... এ তো আমাকেই লেখা।
আমার এতে দখল আছে। আজ অবধি ঠিক খুলে বলেনি কিছুই আমাকে। তবুও ঠিক জানি কত টা ভালবাসে আমাকে। আগে যাও কিছু আহ্লাদী সম্বোধন কোরতো , ঈদানীং তাও করেনা। আমি মুখ ফুটে কিছুই বলিনা।
থাক, আমাকে ও নাম ধরেই ডাকুক। তবুও বুঝি সে ভালবাসে আমাকে। এই বুঝি কম হল?!!! আদুরে সেই কথা গুলো নেই আর। আমিও লজ্জা পাই বলতে। কোথায় যেন একটা কাঁটা, একটা দেয়াল দু'জনের মাঝে।
থাক,তবুও তো ভালবাসি!!
তোকে এখন চাই বুকের উপর
অনাবৃত..............................
শীত? ভীষন?
ভয় কি? আমি আছি না?
উত্তপ্ত চুল্লী.......................
তোকে দুমড়ে মুচড়ে ভাঙব আমি
ঠোঁটের স্বাধ নেব আমার উদ্বেল ঠোঁটের পিড়নে
শীত তাড়াবো আজ, শীত তাড়াবো
পৌরূষ-হীন এক পুরূষ আমি।
তোর ক্ষুধার্ত গহ্বরে মানিক খোঁজার সাধ্য নেই আমার
বিশ্বাস কর....................
তোকে দিতে পারি স্রেফ আজন্মের অতৃপ্তির যন্ত্রনা!
পৌরুষহীন পুরুষ আমি।
ভেবে দেখ আরেকবার, আর একটিবার
আমার ঘরের শোকেজে সাজানো পুতুল হবি কিনা?
হবি কিনা অকর্মা পুরুষের বিলাসবাসিনী
আমি সেই পুরুষ যে ভয়াবহ পূর্ণিমাতেও পাশ ফিরে ঘুমোয় নিশ্চিন্তে
ভেবে দেখ, জিজ্ঞেস কর তোর বুভুক্ষ শরীরটাকে
তারপরও ভালবাসবি কিনা আমাকে
পৌরুষহীন পুরুষ আমি।
কবিতাটা শেষ করেই কেমন যেন খটকা লাগলো, আচ্ছা শিরোনাম টা কেমন হতে পারতো???!!
পৌরুষহীন পুরুষ"? নাহ কেমন সস্তা লাগে। তবে??!! কিছুই মনে আসছে না।
নিটোলকে জিজ্ঞেস করবো? থাক্, তাহলে আবার লুকিয়ে ডায়রী পড়ার কথাটা জেনে যাবে সে।
আচ্ছা, নিটোল একদিন ডেকে বলেনা কেন আমাকে "নেহা, তোকে ভীষণ ভালবাসি আমি, তোকে ছাড়া চলবেনা আমার। " তখন আমি কি করবো। আনন্দে বিষ্ময়ে ওর দিকে বোকার মত চেয়ে থাকবো নাকি ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদবো?!! কি জানি!!
হুট করেই মনে হল কিছু লিখি। হাতের কাছে থাকা ওর ডায়রী থেকে একটা কাগজ ছিড়লাম।
লাল কালি তে লিখলাম...........
নিটোল,
বুড়ো হতে বসেছ, চুলে তোমার পাঁক ধরে গেল তবুও বুদ্ধি খুললো না। আমি আর কতকাল বসে থাকবো বলতো। এই যে এতদিন ধরে আইবুড়ো হয়ে ঘরে বসে আছি, সে বুঝি তোমার চোখে পড়েনা? !! কি সব ছাইপাসের কবিতা লেখ! ওর চেয়ে তো মুকুন্দের স্টলের পুঁথি গুলোও ভাল। ওসব বাজে কাজ না করে একটা সংসার পাতলেও তো পার। যে হতচ্ছাড়া চেহারা বানিয়ে রেখেছ, তাতে আমি ছাড়া সুবিধে হবে বলে ভরসা পাইনা!!
আর ঐ যে কি সব বকেছ, কি যেন পৌরুষ টৌরুষের কথা?!!! ওসব তো ক্ষনিকের।
ওসব বলে বুঝি পার পেতে চাইছ আমার হাত থেকে??!! সে হবেনা। এত কাল এত কিছু ফেলে যে অপেক্ষা করলাম সে বুঝি এমনি এমনি??!! শোন, একটা কথা বলি----- জীবনের একটা রঙ থাকে যা পুরুষ মানুষ যৌবনের অপর প্রান্তে না গিয়ে বুঝতে পারেনা। অলীক দেহের মায়া সেখানে কিছুই না। সেখানে চায় একটা বন্ধু, একটা আপন মানুষ, একটা অসম্ভব ভরসার জায়গা। যৌবনের অপরপ্রান্তে না গিয়েই ঈশৃর তোমাকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
ও দিয়েই চলবে আমার!
নারীর কাছে ও যে কত ঠুনকো, কত অপ্রয়োজনীয় কিংবা বাহুল্য সে বোঝবার সাধ্য ঈশৃর তোমাদের দেননি। তাই চুল পাঁকিয়েও বসে থাকো মিথ্যে পৌরুষের অহং নিয়ে! এ চিঠিখানা হাতে পেয়ে "বাক বাকুম" কোরনা। কারন আমাকে বিয়ে করে তোমার "হরগোবিন্দ" চলনবলন বদলাতে হবে, বলে রাখলাম। পূর্ণিমা রাতে পাশ ফিরে ঘুমানো চলবেনা মোটেও, সারারাত গল্প করবে আমার সাথে। যখন রাঁধতে বসবো, পাশে গিয়ে বসে থাকবে।
আর..............আচ্ছা থাক বাকি লিস্ট পরে নিও।
আর লিখতে পারছিনা, বড্ড মাথা ধরেছে।
নেহা
উৎসর্গ: আমার একজন অসূস্থ বন্ধু যে শারিরীক অসূস্থতার কারনে মানসিক ভাবেও খুব ভেঙ্গে পড়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।