আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছায়া কন্যার ছায়া বিলাস (ছোট গল্প-শেষ)

আমার আছে জল

পর্ব-১ সে ছায়াকন্যার ই কন্যা। নিজেকে শফিকের বন্ধু সাজিদ বলে পরিচয় দিতেই মেয়েটা কিছুটা চমকে ওঠে। খুটিয়ে খুটিয়ে মেয়েটি সাজিদকে দেখছে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল। মৌনতা ভেঙ্গে সজিদই জিজ্ঞেস করে তার মায়ের কথা। মেয়েটি তাকে তার মায়ের সাথে দেখা করার প্রস্তাব জানায়।

আগ পিছ না ভেবেই রাজী হয়ে যায় সাজিদ সাহেব। পথে যেতে যেতে হাজার ভাবনা পেয়ে বসে সাজিদ সাহেবকে। সে দেখতে কতটা বুড়ো হয়ে গেছে, তাকে দেখলে চিনতে পারবে কিনা, তার উচ্ছলতা আগের মতই আছে কিনা। গড়ী এসে ব্রেক করে বনানী গোরস্থানে। ছায়া কন্যাকে যতটা চমকে দেবার জন্য সাজিদ সাহেব অপেক্ষা করছিলেন তার চাইতেও ছায়া কন্যা তাকে চমকে দিল না ফেরার দেশে গিয়ে।

ফুলগুলো কবরের উপর ছড়িয়ে রেখে দেয় সে। ৩০ বছর ধরে জন্মদিনের জন্য কেনা ফুল এই প্রথম ছায়াকন্যাকে দেয়া হল। মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফেরার পথে পিছু ডাকে মেয়েটি। এগিয়ে যেতেই বলে ”আপনাকে দেবার জন্য মা একটা ডায়েরী রেখে গেছে আমার কাছে” প্রবোধ শুনতে পান সাজিদ সাহেব। যন্ত্রের মত শুধু বলে ওঠেন ” কোথায় সেটা?” ” এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই তবে আপনার ঠিকানা দিয়ে গেলে আমি ডাকে পাঠিয়ে দিতে পারি” - ঠিকানা দিয়েই দ্রুত বাড়ীতে ফিরে আসলেন তিনি।

বাড়িতে ফেরার পর থেকে অস্থিরতা বাঁধ মানান দায় হয়ে পরে। প্রতিটি বেলের শব্দ মনে করিয়ে দেয়, এই বুঝি ডাকপিয়ন এসে দড়জায় দাড়িয়েছে। পাছে দেরী হয়ে যায় তাই আবুল মিয়ার অপেক্ষা না করে নিজেই ছুটতে থাকেন দরজা খোলার তাগিদে। নাহ!! ডাক পিয়ন নয় সংবাদপত্র। দিন, সপ্তাহ, মাস কেটে যায় কিন্তু ডাকপিয়ণ আর আসেনা।

ধীরে ধীরে আশা ছেড়ে দেন হয়ত আর কোন দিন আসবেনা। নিজের উপরই রাগ চেপে যায় মেয়েটির কোন ঠিকানা চেয়ে না রাখার মত বোকামীর কারনে। ডাক পিয়নের অপেক্ষা করে করে বাইরে যাওয়াও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন ফলে শারীরিক ভাবে দিনে দিনে অসুস্থ্য হয়ে পরেন। কেটে গেল একটি বছর। ১৯ শে এপ্রিল ভোর ৬.০০ টা।

আবার সেই কর্কশ এলার্মের শব্দ। হন্তদন্ত হয়ে ঘুম থেকে ওঠা সেই সাথে øৃতীর পথ হাতড়ে বেড়ান, তার কথা ভাবা; এভাবে কেটে গেল বেশ কিছু সময়। দরজায় বেলের শব্দ ! আবার সেই স্তব্ধতা পেয়ে বসল তাকে; স্বম্বিত ফিরে পেয়েই ছুটলেন দড়জার দিকে। প্রচন্ড বেগে দরজা যখন খুললেন তখন রিতীমত ঘেমে ভিজে গেছেন। দরজা খুলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না।

দরজায় ডাকপিয়ন দড়িয়ে। হাতে সাদা কাগজে মোড়া একটা পার্সেল। দ্রুত নিজের ঘরে এসে পার্সেল টা খুলে দেখতে পেলেন একটি চীরকুট ও খাকী পুরোনো কাগজে মোড়া একটি ডায়েরী। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কাল আগে প্যাকেট করে আর খোলা হয়নি। আগে সে চীরকুট টাই খুললেন: গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছায়াকন্যার মেয়ে দ্বিপ্তীর একটা চিঠি।

তাতে লেখা: প্রিয় সাজিদ সাহেব, আমি খুবই দুঃখিত দেরী করে আপনাকে ডায়েরীটা পাঠানোর জন্য। মা বলেছিলেন, কোন এক ১৯ শে এপ্রিল আপনাকে ডায়েরীটা পৌছে দেবার জন্যে তাই ইচ্ছা করেই এক বছর সময় নিয়ে পাঠালাম। ডায়েরীটা দেখে নিশ্চই বুঝতে পারছেন অনেক আগে প্যকেট করা , দীর্ঘদিন খোলা হয়নি। এটা মা কাগজে মুড়ে রেখেছেন তার বিয়ের দিন। আমি ডায়েরীটা নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছি কিন্তু কোন দিন খুলে দেখিনি।

আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে এতে কি লিখা আছে। নিজের কৌতুহলকে পরাজিত করতে পেরেছি বলে ভাল লাগছে। ভাল থাকবেন। দ্বিপ্তী ১৯/০৪/২০১০ ডায়েরীটা খুলে সাজিদ সাহেব হতবাক হয়ে গেলেন। পুরো ডায়েরী জুড়ে একটা বাক্যও লেখা নেই।

গোটা গোটা হরফে শুধু একটাই শব্দই হাজার বার লেখা ”সাজিদ”। প্রচন্ড কষ্টে কুঁকড়ে গেলেন তিনি। ছায়া কন্যাকে না পাবার বেদনায় নয় , সে আর বেঁচে নেই সে জন্যও নয়। এই জন্য যে ”একটা মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েও তার ভালবাসার কথা জনিয়ে গেল অবলীলায় কিন্তু সে অনন্তকাল বেঁচে থাকলেও নিজের ভালবাসার কথা জানাতে পারবেন না কোন দিন”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।