আমার আছে জল
বিঃ দ্রঃ এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা কাহিনীর বেশীরভাগ পরিবর্তন করে নিজের মত করে লিখেছি। এই গল্পে ব্যবহৃত সকল চরিত্র ও স্থান কাল্পনিক। তবুও দূভার্গবশত কারো সাথে মিলে গেলে সব দোষ পাঠকের।
ঘড়ির এ্যালার্মিং রিং এর কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল সাজিদ সাহেবের। কত দিন পর ঘড়িতে এ্যলার্ম দিয়ে রেখেছেন, মনেও নেই ,মনে রাখার প্রয়োজন ও নেই ।
একদিকে অফুরন্ত অবসর অন্যদিকে বার্ধক্যের আলসেমি , ভোরে ওঠার তাড়া কে প্রায় থামিয়ে দিয়েছে। তবে আজকের দিনের কথা আলাদা। আজ ১৯ এপ্রিল তার জন্ম দিন। প্রতি বছরের এই দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ন্সৃতী মন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সে কত কাল আগের কথা! প্রায় ৩০ বছর তো হবেই।
ভার্সিটি চত্বরে দূর থেকে তাকে দেখা, বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে তার পিছে ঘুর ঘুর করা, সন্ধায় তার ফেরার পথে বাড়ীর সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা। তখন সে ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আর সে ছিল মাত্র ফাস্ট ইয়ার। বন্ধু ভগ্নি বলে কেয়ারিংটাও বোধহয় একটু বেশী ছিল। কত শত উপদেশ, নিষেধ, কত বারন তাকে দেয়া হত শুধু বলা হয়নি তা, যা বলার জন্যই এত প্রচেষ্টা এত আকুলতা। বার বার বলতে গিয়েও নিজেকে সংযত করে ফেলেছে একদিকে তাকে হারনোর ভয়ে অন্যদিকে তার পক্ষ্য থেকে কোনরকম সাড়া না পেয়ে।
মনে পড়ে একবার একটা বিয়েতে তিনদিনের জন্য দিনাজপুরে গিয়েছিল সে। তিনদিন তাকে না দেখতে পারার কষ্ট কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি সাজিদ তাই রাতের গড়িতেই দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। কোথায় বিয়ে, কার বিয়ে কিছুই জানে না শুধু জানে, দিনাজপুরের কোথাও হয়ত সে আছে। তিন দিন দিনাজপুরের পথে পথে হেঁটে প্রবল জ্বর নিয়ে ঢাকায় ফেরে। কত দিন যে শফিক কে নোট দেয়ার উদ্দেশ্য কে পুঁজি করে তার বাসায় যেত তাকে একবার দেখার জন্য।
বেশীরভাগ সময়ই তার সাথে দেখা হতনা। বন্ধুর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিয়ে ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরতে হত। যতক্ষন শফিকের সাথে থাকত তার প্রতিটা মুহূর্তে সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ রাখত যদি তার একটু কন্ঠস্বর শোনা যায়, কিনবা তার নূপুরের ধ্বনী একটু কানে বাজে! নাহ কিছুই শোনা যেত না। কখনও কখনও বেড়িয়ে যাবার পথে শফিক তাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেত। যাবার পথে বোনকে ডেকে বলত দরজাটা বন্ধ করে দিতে।
হ্যা সে তো বড়ীতেই ছিল, তবে কেন এক মুহূর্তের জন্যও সামনে এসে দাড়াল না? কেনই বা দাঁড়াবে, সে তো কখনও তার মত করে ভাবে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বড়িতে ফিরে আসতে হত সাজিদকে।
একদিন, শফিকের ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল সাজিদের। শফিকের কন্ঠে সে কি উল্লাস! কারন জিজ্ঞেস করে যা জানা গেল তা শুনে যেন সমস্ত পৃথিবীকে স্তব্ধ মনে হতে লাগল। শফিক প্রায় আধ ঘন্টা ধরে কথা বলে গেল কিন্তু তার একবর্নও শোনা হল না।
আর মাত্র এক সপ্তাহ পর ছায়াকন্যার বিয়ে। হুমম তার নাম সাজিদ দিয়েছিল ছায়াকন্যা । হবেই বা না কেন? যে ৩০ বছর আগে যেমনি করে ছায়ার মত তার মনের গহীনে বিচরন করত আজও যে সে সেখানেই আছে তার প্রতিটি কাজের, প্রতিটি ভাবনার অর্ধাংশ হয়ে। বিয়ের সমস্ত আয়োজন শফিকের সাথে সাজিদকেই করতে হয়। ঘনিস্ট বন্ধু বলে কথা।
বিয়ের দিনটিতে বড্ড বেশী উদাস আর অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিল ছায়া কন্যাকে । যতবার চার চোখ এক হয়েছে ততবারই সাজিদ চমকে উঠেছে। কিন্তু ছায়াকন্যার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা যায় নি।
হঠাৎ আবুল মিয়ার ডাকে সম্বিত ফিরে পায় সাজিদ সাহেব। তাড়াতড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে পরে।
মায়ের মৃত্যুর পর অনেক বছর ধরে আবুল মিয়াই তার দেখা শুনা করে আসছে। রেডী হয়ে বেড়িয়ে পড়েন ফুলের দোকানের উদ্দ্যেশ্যে। বেছে বেছে কিছু ফুল নিয়ে গোলাপের দিকে এগিয়ে যেতেই চোখ আটকে যায় একই দোকানে ফুল কিনতে আসা ১৯-২০ বছরের এক তরুনীর দিকে। বুকের ভেতর সেই পুরোনো হাহাকার উথলে ওঠে সেই সাথে শুনতে পান প্রচন্ড বেগে হাতুড়ী পেটানোর শব্দ। হ্যা, এ যে ছায়াকন্যারই প্রতিচ্ছবি।
সমস্ত অস্বস্তি আর সংকোচ ঠেলে ছুটে যান মেয়েটির কাছে।
চলবে.................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।