আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগের পক্ষে থাকার দরকার নাই - বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন

একদিন হয়তো তুমি পড়বে এই লেখা, তাই লিখি শাহবাগ নিয়ে দেখছি একটা বেশ বিতর্কের তৈরি হয়েছে। এটাই এই জাতির দুর্ভাগ্য। একাত্তরে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন তা নিয়েও অনেকে বিতর্ক তৈরি করেছিল। তখন্ও অনেকে পক্ষ বিপক্ষ নিয়েছিল। সব দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ই কিছু লোক থাকে, তারা শত্রুদের সাথে হাত মেলায়।

ভিয়েতনামে যুদ্ধের পরই তাদের সবাইকে খতম করে দেয়া হয়েছিল। তাই আজ দেশটা এতটা ঘূরে দাড়াতে পেরেছে। অন্য দেশগুলোতেও তাদের তাক্ষণিক বিচার করে দেয়া হয়েছে। তাই সেই দেশে রাজনীতি নিয়ে যতই মতভিন্নতা থাকুক না কেন, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কার্ও কোন প্রশ্ন নেই। আমরা সেটি করি নাই।

আমাদের ভুলটা হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই দেশ বিরোধীদের শিকড় একটা গভীর হয়ে দাড়িয়েছে। তো, কথা হলো, শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে। কয়েকজন ব্লগারের শুরু করা একটি উদ্যোগ আজ এত বড় হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু মানুষ কি এই ব্লগারদের ডাকে সারা দিতে সেখানে গেছে? না।

আমি অন্তত যাই নি। ইমরান এই সরকারের নাম আমি এর আগে কখনোই শুনি নাই। ব্লগার হিসাব্ওে তার তেমন একটা কর্মকান্ড আমি খুজে পাই নাই। সুতরাং, তার ডাকে আমি শাহবাগে গিয়েছে, তা নয়। আর ব্লগাররা এমন মহান কোন জাতি বা মানুষ্ও নন, যে তারা একটা ডাক দিলেন, আর আমরা সবাই ছুটে গিয়ে তাদের পেছনে দাড়ালাম।

সেটিও নয়। কিন্তু তারপরেও আমি শাহবাগের আন্দোলনে গিয়েছি। কেন গেলাম? কারণ এই দেশেই আমি দেখেছি, যুদ্ধাপরাধীরা, স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মন্ত্রী এমপি হয়েছে। এলাকার মাতব্বর হয়েছে।

কেউ তার প্রতিবাদ করেনি। একজন স্বাধীন নাগরিক হিসাবে, আমি শহীদদের অপমান করেছি। কারণ এই স্বাধীন দেশে রাজাকারদের মেনে নিয়েছিলাম আমরা। শাহবাগের আন্দোলন, এই এতবছর পরে সেটির প্রকাশ্য প্রতিবাদ। মানুষ প্রকাশ্যে দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাদের আঙ্গুল তুলে দাড়িয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছে। আমিও আমার সেই কথা, সেই ক্ষোভের কথা বলতে গিয়েছি। আমার ঘৃণার কথা জানিয়েছি। তো, সেই আন্দোলনটা যেখানে অরাজনৈতিকভাবে শুরু হয়েছিল, এটা ঠিক যে সেটা পরে সেভাবে থাকেনি। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতারা মঞ্চে এসে দাড়িয়েছে।

বাম ঘরানার নেতারা তো আগেই ছিলেন। কিন্তু তাতে কি, যে দাবিতে শাহবাগের আন্দোলন শূরু হয়েছিল, সেটি পাল্টে গেছে? যে চেতনা নিয়ে শাহবাগ শুরু হয়েছিল, সেই চেতনা থেকে কি সেটি সরে এসেছে? আপনি নিজে কি সেই চেতনায় বিশ্বাস করেন? আপনি কি মনে করেন, পাকিস্তানের দালালি না করে স্বাধীন হ্ওয়া ঠিক হয়েছে, নাকি এখনো মার-গুতা খেয়ে পাকিস্তানের সাথেই থাকা উচিত ছিল? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, স্বাধীনতার পক্ষের যেকেউ, সবাই তো এই আন্দোলনে এসে দাড়াবে। গলা মেলাবে। যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে, শুধু সেই এই আন্দোলনের সাথে একমত হবে না। শাহবাগের পক্ষে থাকার দরকার নাই।

বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন। যতদিন এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে, আপনার কাছে ভোট না চাইবে, ততদিন থাকুন। যতদিন আপনার বিশ্বাসের কথা বলবে, ততদিন থাকুন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে? তারা যখন পক্ষের লোক, সেই বিশ্বাসকে ধারণ করেন, তারা তো এখানে আসবেনই। তাকে কি আন্দোলন দলীয় করণ হয়ে যায়।

আপনি আমি, কেউই রাজনীতির বাইরে নয়। এই আন্দোলনও নয়। কিন্তু সেটি ক্ষমতায় যাবার জন্যে নয়। সেই অন্যায়ের বিচার চাওয়ার জন্যে। এখন কথা হলো, বিএনপি কেন আন্দোলনে যাচ্ছে না? জামায়াতে ইসলামী তো যাবেই না, এই দলটি তো স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছিল।

কিন্তু এই আন্দোলন তো বিএনপির বিরুদ্ধে বা আওয়ামী লীগের পক্ষে নয়। এটা যুদ্ধাপরাধীর বিপক্ষে? বিএনপি কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না? বরং এই দলটির তো এসে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত, যে দলের প্রতিষ্ঠাতাই কিনা স্বাধীনতার ঘোঘণা দিয়েছিলেন। অনেকেই দেখছি বলছেন, ১৯৭১ সালে কি হয়েছিল, সেটি জানা নেই। শোনা কথায় কান দেব্নে না। বিয়াল্লিশ বছর পরেও যদি দেশের সঠিক ইতিহাস না জানেন, সেই লজ্জা আপনার।

তবে চাইলেই সেটি কাটাতে পারেন। ৭১ সালে প্রকাশিত পত্রিকা, বিশেষ করে সংগ্রাম এখনো পাবলিক লাইব্রেরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে আছে। সেগুলো একবার দেখে আসুন। এই গোলাম আযম, সাঈদী, কাদের মোল্লার কর্মকান্ড সম্পর্কে, তাদেরই পত্রিকা সংগ্রাম থেকেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। এটাই কিন্তু শেষ সুযোগ।

আপনাকে বেছে নিতে হবে একটি পক্ষ। এখন এই যে দেশে জামায়াত শিবির চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা এখন মরণ কামড় দিতে চাইবে। কিন্তু এইবারেই একটি ফয়সালা হয়ে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই দেশে থাকবে নাকি রাজাকারের চেতনা। হয় তাদের একেবারে নিমুর্ল করতে হবে, না হলে, তারা শক্তিশালী হয়ে জেকে বসবে। আপনি ঘরে বসে টকশো দেখতে পারেন। বিরিয়ানি খেতে পারেন। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করার একটি সুযোগ হারাবেন।

কিন্তু আপনি যদি ঘরে বসে থাকেন, তাদের যদি এইবারেই ঠেকাতে না পারেন, এই দেশ থেকে কখনোই রাজাকারদের সরাতে পারবেন না। তাহলে এই দেশে অন্ধকারের যুগ জেকে বসবে। সেই যুগ থেকে বের হতে শত শত বছর লেগে যাবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।