শেরউড বন : কি, শেরউড বনের নামটা কি চেনা চেনা লাগছে? এক ডাকাতের কথা কি মনে পড়ছে না? যে ধনীদের কাছ থেকে লুট করে সেই সম্পত্তি গরীবদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিতো? হ্যাঁ, রবিন হুডের সেই বিখ্যাত শেরউড বনেরই কথা হচ্ছে। জানো, এই বনটা ছিলো একসময় সবুজ আর সবুজে ভরা। ঘন সবুজ বন দেখতেই তো কী ভালো লাগে! কিন্তু, এই বনটা এখন আর অতোটা সুন্দর নেই। আগে এই বনটা ছিলো একশ' হাজার একরের। কিন্তু এখন আছে মাত্র ৪৫০ একর।
বছরের পর বছর ধরে এই বনের পুরোনো বিশাল বিশাল ওক গাছগুলো প্রচুর পরিমাণে কেটে ফেলার কারণে আজ এই বনটার এই করুণ হাল। শুনেই কেমন খারাপ লাগছে, তাই না? বনের পাশাপাশি আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি। রবিন হুডকে ডাকাত বলা হলেও, তিনি কিন্তু ছিলেন গরীবের বন্ধু। আগের দিনের ধনী লোকেরা ছিল খুবই অত্যাচারী। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সব ছিনিয়ে নিয়ে রবিন হুড গরীবের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
এটা অবশ্য ভিন্ন গল্প। সে আরেকদিন করা যাবে।
কর্ক বার্ক বন : মেডিটেরেনিয়ান দেশ বলতে কি বোঝায় জানো তো? ভূমধ্যসাগর তো তোমরা সবাই-ই চিনো। একটা মানচিত্র ধরিয়ে দিলে তো সবাই-ই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবে, কোথায় ভূমধ্যসাগর। এবার দেখো তো, এই সাগরের লাগোয়া দেশগুলো কি কি।
ঠিকই ধরেছো, এই ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের দেশগুলোকেই বলা হয় মেডিটেরেনিয়ান দেশ। আর এই দেশগুলোতেই রয়ে
ছে এই অদ্ভূত ওক গাছের বন। জানো, এই অদ্ভূত কর্ক ওক গাছগুলোর না একটা খুব মজার বৈশিষ্ট্য আছে। খুব সহজেই ভেড়ার লোম যেভাবে তুলে ফেলা যায়, তেমনি এই গাছগুলোরও ছাল তুলে ফেলা যায়। গাছগুলোর নাম আসলে ভেড়া গাছ দেয়া উচিত ছিলো, তাই না? কিন্তু এই বনও কিন্তু উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
ঐ অঞ্চলে আবার অনেক মদ তৈরির কারখানা আছে। আর এই গাছটা আবার মদ তৈরিতে তেমন কোনো সাহায্যও করে না। তাই দেদারসে এই কর্ক ওক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। বলো, এটা কি ঠিক?
দি ক্রিসমাস ট্রি : সান্তা ক্লজকে তো তোমরা সবাই-ই চেনো? ঐ যে, লাল জামা পড়া, মাথায় টুপি আর মুখ ভরা সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো দাদুটা, যে দাদু কিনা বড়দিন আসলেই লুকিয়ে লুকিয়ে সবার বাসায় গিয়ে দিয়ে আসে মজার মজার সব উপহার। সান্তা ক্লজের মতো ক্রিসমাস গাছটাও তো আমাদের সবারই খুব চেনা, তাই না? এই ফ্রেজার ফার গাছটাও কিন্তু দেখতে বড়দিনের ঐ ক্রিসমাস ট্রিরই মতো।
আর তাই সবাই এই গাছগুলোকে আদর করে ডাকে ক্রিসমাস ট্রি বলে। কিন্তু এই গাছগুলোও সব একেবারে মড়ক লেগে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
তোমাদের দাঁতে তো প্রায়ই পোকা লাগে। কারণ তোমরা তো আবার বেশি বেশি চকলেট আর আইসক্রিম খাও, কি সত্যি বলছি না? কিন্তু এই ক্রিসমাস গাছ মোটেও চকলেট আর আইসক্রিম খায় না। না খেলে কি হবে, তারপরেও ওদের পেছনে এক ধরনের পোকা লেগেই রয়েছে।
এই পোকাগুলোর নাম ‘এভেলগিড’ পোকা। এই পোকাটা ক্রিসমাস গাছের সব পাতা খেয়ে গাছটাকে একেবারে খালি গা করে দেয়। গাছগুলোর মান-ইজ্জত আর কিছুই অবশিষ্ট রাখে না! আর এই পোকার আক্রমণ কবে থেকে শুরু হয়েছে জানো? সেই ১৯৫০ সাল থেকে। কিছুতেই ওদের ঠেকানো যাচ্ছে না। কি করা যায় বলো তো দেখি!
দি ক্লাউড বন : এই বনটার নামটা কী সুন্দর, না? ঠিক তোমাদের নামের মতোই।
‘মেঘ বন’, কি চমৎকার একটা নাম! এই বনটা কিন্তু আবার পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই আছে, তবে বেশি দেখা যায় এশিয়া আর আমেরিকাতে। এই বন খুব গুরুত্বপূর্ণ কেন জানো? এই বন হলো বিশুদ্ধ পানি আর বাতাসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অন্য বনগুলো তো বাতাসে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। এই বন তার পাশাপাশি খাবার পানিরও যোগান দেয়। ‘গুয়াতেমালা’ নামের মধ্য আমেরিকার দেশটিতে তো মোট খাবার পানির প্রায় ৪০ শতাংশই আসে এই বন থেকে।
কিন্তু গাছ কেটে ফেলার কারণে এই বনটাও আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে কি আর গাছ কেটে কেটে পানির যোগান দেয়া এই বনকে বিলুপ্ত হতে দেয়া উচিত, তোমরাই বলো?
দ্য টংগাস : টংগাস বনটা পৃথিবীর একমাত্র নাতিশীতোষ্ণ রেইনফরেস্ট, যার পাশেই আবার সাগর! আর সবচেয়ে মজার খবর কি জানো? আমেরিকানরাও এই খবর ঠিকমতো জানতোই না! তারা জানতোই না যে, তাদের দেশই নাতিশীতোষ্ণ রেইনফরেস্টের ঘরবাড়ি। বিশ্বের দুইটি বড়োসড়ো নাতিশীতোষ্ণ রেইনফরেস্টই তাদের দেশে। তারই একটা এই টংগাস। এটাই আবার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড়ো বন, যার আয়তন ১৭ মিলিয়ন, মানে ১৭০ লাখ একর! ভাবা যায়! তবে কষ্টের কথা কি জানো? এই বনের সুন্দর সুন্দর চিরহরিৎ গাছগুলোও কিন্তু দিন দিন কেটে ফেলা হচ্ছে।
আর সেগুলো দিয়ে জিনিসপত্র বানিয়ে পাঠানো হচ্ছে এশিয়ায়। বন বড়ো হলেই কি তাকে কেটে কেটে ছোটো করে ফেলতে হবে?
দ্য গ্রেট বিয়ার বন : তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছো, বিয়ার মানে তো ভাল্লুক। ও আবার বন হয় কিভাবে? আসলে আমিও প্রথমে তোমাদের মতোই অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু এই আজব বনের নামটাও এমনই আজব! এই আজব নামের বনটা কানাডার পশ্চিমে সাগরের তীরে অবস্থিত, যার আয়তন ১৫ মিলিয়ন মানে, ১৫০ লাখ একর। এই বনটাও একসময় হুমকির মুখেই ছিলো।
কিন্তু ২০০৬ সালে এই বনের ৫০ লাখ একর জায়গা বাঁচানোর জন্য রীতিমতো একটা চুক্তি-ই করা হয়েছিলো। আর এখন এই বনের পুরোটাই রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কী, অবশেষে একটা আনন্দের সংবাদ তো দেয়া গেলো? পুরোটা না হোক, বনটার একটা অংশ তো রক্ষা করা গেছে।
মাউ’ বন : বনটার নাম শুনে কি মনে হচ্ছে, যে আমাদের বাঘ মামা হাউমাউ করছে! খুব ভয় পেয়ে গেছো তাই না? না না, ভয়ের কিছু নেই। এটা তো শুধুই একটা নাম, বনের নাম।
এই বনটা আবার পৃথিবীর অনেক পুরোনো একটা বন। এই বনটার কেনিয়ার যেই অংশ, সেই অংশটাই কিন্তু বিশাল, প্রায় ৪০০ হাজার একর! আর এই অংশটাই আবার এখন খুব হুমকির মুখে আছে। কারণ কি জানো? ফসল উৎপাদন আর বাস করার জায়গা বানানোর জন্য। যারা কাজ পায় না, কিংবা যখন কোনো যুদ্ধ হয়, তখন এই বন কেটে জমি তৈরি করে সেই জমি ব্যবহার করা হয়। এটা খুবই একটা খারাপ কথা।
তবে ভালো কথা হলো, অবশেষে এই বনটাকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সবচেয়ে অদ্ভূত বন : পৃথিবীর অদ্ভূত এই বনভূমির বাড়িই বলতে পারো চিলিকে। এই বনে এমন এমন সব গাছপালা হয়, যেগুলো আর কোথাও-ই জন্মায়ই না! যেমন ধরো, একটা গাছ আছে যার নাম ‘এলার্সি’। এই গাছটা নাকি ৩ হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে! একবার চিন্তা করো দেখো তো, ৩ হাজার বছর পরে গাছটা কত্তো বুড়ো হয়ে যায়! আরেকটা মজার গাছ হলো ‘মাংকি পাজল ট্রি’। আর যেহেতু এই গাছগুলো পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না, তাই এই বনটাকে অনেকে গাছের খামার বানিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছে।
তোমরাই বলো, গাছেরা কি গরু-ছাগল, যে বন কেটেকুটে খামার বানাবে? তবে তারা বলছে, খামার বানালে ১২ বছর পর এই বনের আকার ৫০ লাখ থেকে ১০০ লাখ একর বাড়ানো সম্ভব হবে। তাহলে তো এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু, যদি গাছ কেটে ফেলে, কিংবা খামার বানাতে গিয়ে বনের কোনো ক্ষতি হয়, তবে কিন্তু সেটা বেশ চিন্তার বিষয়!
কী, বনগুলোর জন্য, বনের গাছগুলোর জন্য আর বন্য পশু-পাখিগুলোর জন্য খুব খারাপ লাগছে বুঝি? শুধু খারাপ লাগলেই হবে না। বনকে, গাছপালাকে আর বনের পশু-পাখিকে ভালোও বাসতে হবে। প্রকৃতির সবকিছুকেই ভালোবাসতে হবে।
নইলে আমরা যদি প্রকৃতির সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করি, ব্যবসা করার জন্য কিংবা টাকার জন্য গাছ কাটতে থাকি আর পশু-পাখি মারতে থাকি, তবে কিন্তু প্রকৃতি আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করবে। দেখছো না, কয়েক বছরের মধ্যেই কতোগুলো বড়ো বড়ো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে গেলো। সুতরাং, তোমরা সবাই-ই খুব করে গাছের যত্ন নেবে। আর যখন বড়ো হবে, তখন বড়োদের মতো এভাবে কক্ষনো গাছ কাটবে না, কেমন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।