আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিতর্কিত হাবিবুল বাশারকে দায়িত্ব দেয়া হবে কেন?

নিজেকে জান এবং প্রকাশ কর!!

বিশ্বকাপ ব্যর্থতা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজের ব্যর্থতার পর বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। কোচ জেমি সিডন্স ছাড়াও তার সহকারী বোলিং-ফিল্ডিং কোচে পরিবর্তন আনছে বোর্ড। সেই সঙ্গে বোর্ড নির্বাচক কমিটিতেও পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দল নির্বাচক কমিটিতে প্রধান নির্বাচক হিসেবে রয়েছেন রফিকুল আলম। কমিটির অপর দুই সদস্য আকরাম খান ও জাহিদ রাজ্জাক মাসুম।

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করা রফিকুল আলমদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। বোর্ডের গত সভাতেই নতুন নির্বাচক কমিটিতে কারা থাকছেন, তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই হয়তো ক্রিকেট বোর্ড নতুন নির্বাচক কমিটির নাম ঘোষণা করবে। নতুন কমিটিতে কে প্রধান হবেন, তা নিয়ে এরই মধ্যে ক্রিকেটাঙ্গনে আলোচনা চলছে।

এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে বিসিবির পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, জাতীয় দলের সাবেক উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলট ও বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফিজয়ী দলের অধিনায়ক আকরাম খান। দুর্জয় রফিকুল আলমের কমিটিতে সহকারী হিসেবে ছিলেন। চুক্তি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এক পর্যায়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আকরাম খান এখনও নির্বাচক কমিটিতে আছেন। বোর্ডের একটা পক্ষ চাইছে নাইমুর রহমানকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দিতে, অন্যপক্ষ সমর্থন দিচ্ছে হাবিবুল বাশার সুমনকে।

এদিকে নির্বাচক কমিটিতে হাবিবুল বাশার সুমনের নাম উচ্চারিত হওয়ায় ক্রিকেটানুরাগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিবির প্রতি। তাদের মতে, জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে হাবিবুল বাশার ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লীগ (আইসিএলে) নাম লিখিয়েছিলেন বিসিবির নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে। হাবিবুলের নেতৃত্বে দেশের ১৪ জন ক্রিকেটার বিপথগামী হলে দেশের ক্রিকেট সেসময় বড় ধরনের হোঁচট খায়। সে ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লীগকে (আইসিএল) আইসিসি এবং বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ড স্বীকৃতি দেয়নি।

বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে সেখানে খেলতে গেলে জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ হবেন, তা জানা সত্ত্বেও সদ্য জাতীয় দলের দায়িত্ব হারানো হাবিবুল বাশার সুমন জাতীয় দলের আরও ১৩ ক্রিকেটারকে এ নিষিদ্ধ ক্রিকেট লীগে খেলতে প্ররোচিত করেছিলেন। ২০০৭ সালে আইসিএলে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে প্রায় বাংলাদেশ জাতীয় দল ঢাকা ওয়ারিয়র্স নামে খেলে। হাবিবুলকে আইসিএলে খেলতে উদ্বুদ্ধ করেন সেসময় ক্রিকেট বোর্ড থেকে পদচ্যুত হওয়া এক প্রভাবশালী ক্রিকেট কর্মকর্তা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পথভ্রষ্ট করা। বাংলাদেশের টেস্ট পরবর্তী যুগে হাবিবুল বাশার দীর্ঘদিন জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যজনকভাবে।

ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ব্যাট হাতে জাতীয় দলে তিনি ছিলেন সফল। তবে ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে জাতীয় দলে হাবিবুল এক সময় স্বাভাবিকভাবেই বাজে ফর্মের কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব, এটা জেনেই সুযোগ সন্ধানীর মতো হাবিবুল নাম লেখান আইসিএলে। বছরের পর বছর জাতীয় দলে খেলে বোর্ড থেকে বেতন-ভাতা, ম্যাচ ফি থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন হাবিবুল। ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে আরও বেশি অর্থের লোভে হাবিবুল আইসিএলে যোগ দেন।

তিনি একা আইসিএলে যোগ দিলে হয়তোবা তাকে ক্ষমা করা যেত। কিন্তু আফতাব আহমেদ, অলক কাপালি, ধীমান ঘোষ, ফরহাদ রেজা, গোলাম মাবুদ, মাহাবুবুল করিম, মনজুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ শরীফ, মোশারফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন, শাহরিয়ার নাফীস ও তাপস বৈশ্য— প্রায় আরেকটি জাতীয় দল নিয়ে হাবিবুল আইসিএলে যোগ দেন। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলা হাবিবুলের যেখানে উচিত ছিল, অনুজ ক্রিকেটাররা আইসিএলে খেলতে চাইলেও তাদের নিবৃত্ত করা, সেখানে হাবিবুল ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন আইসিএলে খেলতে। জাতীয় দলের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা নেয়ায় সে সময়ের পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের এ অধিনায়কের তীব্র সমালোচনা হয়। আইসিএলে খেলতে যাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হাবিবুলকে দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সে সময় হাবিবুল নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টো আইসিএলে খেলার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন। আইসিএলে হাবিবুলের অনুগামী হওয়া জাতীয় দলের এসব ক্রিকেটার বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ হন জাতীয় দল থেকে। অবশ্য মোহাম্মদ রফিক জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার পরই আইসিএলে যোগ দিয়েছিলেন। মাত্র এক মৌসুম পরেই আইসিএল চিরতরে অন্ধকারে পতিত হলে বিপথগামী ক্রিকেটাররা দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন শাস্তি বহাল রাখার পর এক সময় বিসিবি ক্রিকেদারদের শাস্তি মওকুফ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ দেন।

কিন্তু দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকায় হতাশ ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই ফিটনেস ও পারফরম্যান্সের ঘাটতি মেটাতে না পারায় আর জাতীয় দলে ফিরে আসতে পারেননি। আফতাব আহমেদ, নাজিমুদ্দিনের মতো হার্ড হিটার, ধীমান ঘোষের মতো উইকেটকিপার, মোহাম্মদ শরীফ, তাপস বৈশ্য, মনজুরুল ইসলামের মতো পেসারের অভাব বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনও পূরণ করতে পারেনি। শাহরিয়ার নাফীস, অলক কাপালি আইসিএলের কলঙ্ক মুছে জাতীয় দলে ফিরলেও আগের ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১১ মাত্র ৩/৪ বছর আগের ইতিহাস ভুলে বিসিবি হাবিবুল বাশারকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দিতে চাইছে! জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন এখন যতই ভেক পাল্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে মায়াকান্না করুন, তার খলনায়কের ভূমিকা ভোলার নয়। পত্রিকায় কলাম লিখে, টিভিতে টক শোতে ক্রিকেট উন্নয়নের ফেনা তুলে হাবিবুল তার অতীত মুছে ফেলায় ক্রিকেট বোর্ড তাকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দিতে চাইছে।

দেশের ক্রিকেট যার দ্বারা এতটা ক্ষতিগ্রস্ত, তাকে যেন নির্বাচক কমিটিতে মনোনীত না করে বিসিবি— এমন দাবি ক্রিকেটানুরাগীদের। এই বিশ্বকাপেই দেশের মাটিতে ৫৮ ও ৭৮ রানে অলআউট হয়েছে যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। এমন শোচনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম নিয়ে দেশবাসী কোন প্রশ্ন তোলেনি। ক্রমাগত ম্যাচ ফিক্সিংয়ে অংশ নেয়া পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে হাবিবুল বাশার নিজেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কাতারে ফেলে দিলেন।

ক্রিকেটারদের দেশপ্রেমের একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ’৯৬ বিশ্বকাপ। সেমিফাইনাল ম্যাচ। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা ভারতের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫১ রান সংগ্রহ করে। পরে ব্যাট করা স্বাগতিক ভারত এক পর্যায়ে ৩৪.১ ওভারে ১২০ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে।

পরাজয় নিশ্চিত জেনে ইডেনের উগ্র সমর্থকরা গ্যালারিতে আগুন জ্বালিয়ে ম্যাচ পণ্ড করে দেয়। একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে বিনোদ কাম্বলি বোলার অনিল কুম্বলের সঙ্গে জুটি বেঁধে যথাসাধ্য অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১০ রানে অপরাজিত থাকা কাম্বলি খেলা পণ্ড হওয়ায় বিশ্বকাপ থেকে নিজ দেশের বিদায় নিশ্চিত হওয়ায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় শোকে শিশুর মতো অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন। বর্ণিল চরিত্রের কাম্বলির দেশপ্রেম যে কতটা তীব্র, সেদিন ক্রিকেট বিশ্বের সবাই টিভির পর্দার মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। জাতীয় দলে ফিরে আসায় সংগ্রামরত এক ক্রিকেটারের মা, তার ছেলের এমন পরিণতির জন্য দায়ী করেন হাবিবুলকে, ‘হাবিবুলের উচিত হয়নি, আমার ছেলেসহ এতগুলো ক্রিকেটারের ভবিষ্যত্ নষ্ট করা।

আইসিএলে খেলতে গিয়েই সবার সর্বনাশ হয়েছে। অবশ্য আমার ছেলেও এজন্য কম দায়ী নয়। অর্থলোভে কেন হাবিবুলের প্ররোচনায় সে আইসিএলে খেলতে গেল। সে তো আর কচি খোকা নয়। অন্যের পরামর্শে সে আইসিএলে খেলতে গেল কেন?’ জাতীয় দলের নির্বাচক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ।

এ পদের দায়িত্ব পেতে ক্রিকেটপ্রজ্ঞার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচকের দেশপ্রেম, সততা ও নৈতিকতা। আইসিএলে সুযোগ সন্ধানীর মতো খেলতে গিয়ে হাবিবুল বাশার নিজেই তার দেশপ্রেমের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। অতীতে অনেক নির্বাচকই সিনিয়র খেদাও নীতি রাখতে গিয়ে দ্রুত আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আল শাহরিয়ার রোকনের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের দল থেকে বাদ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাদের সহযোগী ছিল বিদেশি কোচরা। এ বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ ও অনভিজ্ঞ দলটি বাংলাদেশ।

ফলে নিজের মাটিতে দুটো ম্যাচে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছে। তাই বিসিবির উচিত, যাকেই প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেয়া হোক, তিনি যেন যোগ্য, সত্, সাহসী, ক্রিকেটবোধসম্পন্ন এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমিক হন। থেকে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.