সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই
মশাটা বসে আছে ঠিক গালের উপরে। কামড়টি দিল। টের পেয়ে সাথে সাথে হাত দিয়ে গালে মারল অনু। তাতে কপোকাত মশাটা গালের উপর যেন পিষে গেল। হঠাৎ অনু মাথায় চিন্তা হল আমি এত দ্রুত মশাটাকে মারলাম কিভাবে?
এই ঘটনার ব্যাখ্যা দুই ভাবেই দিতে পারে অনু একটি সহজ ভাবে একটি কঠিন ভাবে।
সহজ ভাবে এই ঘটনার ব্যাখ্যাটা হল মশা কামড় মারেছে আর ব্রেন তা সহ্য করতে না পেড়ে দ্রুত হাতকে নির্দেশ যে ওরে মেরে ফেল। ব্যাস। আর কঠিন ভাবে বলতে গেলে.........।
যাক এবার মূল আলোচনায় আসি। উপরে ঘটনাটা যদি একটা রোবেটের জন্য ঘটত তাহলে কি হত।
আমি নিশ্চিত তাকে আমরা মশা মারার রোবট বলতাম। এই মশা মারা রোবট তৈরী করতে হলে আমাদের কি করতে হবে?(আমারে বেকুব ভাইবেন না, আমি জানি কয়েল বা স্প্রে দিলেই মশারা ভাগে। মশা মারতে কামান আই মিন রোবটের কি দরকার? প্রশ্নটা মনেই রাইখেন আপাতত। )
মানুষের চিন্তা বা কাজ আর কিছুই না আপনার আমার মস্তিকের কাজের ফলাফলই। আর এই মস্তিক নামের প্রসেসর কে কাজ দেয় মানে ইনপুন দেয় আমাদের রানার বা নিওরন গুলো।
নিওরন গুলো যে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত তার আমার বলি নিউরাল নেটওয়ার্ক। নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ওই মশাটা যে কামড় দিয়েছে সেই তথ্য আমাদের প্রসেসরে চলে যায়। আর উনি হাতের সব গুলো হাড়কে নিদের্শ দেন গালে এই মশাটার অবস্থানে থাপ্পড় মারতে। (অনুর গালে মনে হয় পাচঁ আঙ্গুলের দাগ বসেছে। )
নিউরনে গঠন আমাদের কেন জানা দরকার?
(হে হে ভাল প্রশ্ন ) রোবট বানাই আর যে কোন সেন্সরিং ডিভাইস বানাই আমাদের ভবিষৎতে কিন্তু এই নিউরন পদ্ধতিটাই ধার করতে হবে।
অর্থাৎত নিউরন কিভাবে কাজ করে তা কিভাবে প্রসেস হয় ব্রেইনে আবার তার থেকে কিভাবে আউটপুট বের হয় তা সঠিক এবং বিষদ ভাবে জানতে পারলে এই টেকনিক টা আমরা রোবোটিকস এর কাজে আর সুন্দর ভাবে কাজে লাগাতে পারব।
নিউরনের গঠনটা আমাদের ক্লাস নাইন-টেনএর বিজ্ঞান বইয়ে থাকার কথা। তাই এইখানে আর বেশি কথা বাড়াইলাম না। (শুধু একখান ফোটু দিলাম)
নিউরন কিভাবে ডাটা ট্রাসফার করে?
হ্যাঁ এইটি হল আমার আজকের টপিক। একটা নিউরন সেল তার আশেপাশের ১০০০ বা ১০০০০টি নিউরনের সাথে সংযোগ থাকতে পারে।
এই সংযোগ স্থলটিকে বলা হয় সাইনেপস(Synapse)। কোন নিউরনে সিগনাল উৎপাদন হলে সব গুলো তার সাথে সংযোগ থাকা সব নিউরনে সে সিগনাল পাঠায় না (যদি পাঠাইতো তো বুঝতেন ব্যাথ্যা কারে কয়)। এই সিগন্যাল টি কিছু বাহকের মধ্যামে এক্সন এর শেষমাথা পর্যন্ত পৌছাঁয়। এই বাহকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার(Neurotransmitter), এই নিউরোট্রান্সমিটার গুলো আবার ভেসিকল(Vesicles) নামের এক আবরনের ভিতর থাকে । নিউরোট্রান্সমিটার এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে যায় ডেনড্রাইটের মাধ্যমে।
সাইনেপসের সংযোগ যত ভাল হবে সিগন্যাল তত তাড়াতাড়ি ট্রান্সমিট হবে।
এই ভাবে সিগনাল বা তথ্য মস্তিকে পৌছায়। আর মস্তিকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সে্ন্টার গুলো বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। বিষয়টি কিন্তু আর জটিল।
তো ভেবে দেখুন আপনার এই রানার গুলো আপনার তথ্য গুলো কত দ্রুত আদান প্রদান করে।
এই মস্তিককেই আমরা আবার গালি দেই কিছু পারে না বলে।
নিউরন ফ্যাক্ট:
ফ্যাক্ট মানেই মজা তাই দিলাম:
১. মানুষের ব্রেইনে নিউরনের সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন
২. একটি নিউরন আকারে ৪ থেকে ১০০ মাইক্রোন হতে পারে
৩. নিউরনের সিগন্যাল ট্রান্সফারের গতি প্রায় ১.২ থেকে ২৫০ মাইল পার আওয়ার হতে পারে।
মস্তিক সম্পর্ক আমাদের বিজ্ঞানীরা সাধারন যে প্রশ্ন গুলো করে থাকেন:
১. কিভাবে মানুষের এই নিউরাল নেটওয়ার্কের এবং ব্রেন এর ডিজাইন করা হয়েছে?
২. ব্রেন কিভাবে ডাটা প্রসেস করে ইনফরমেশন প্রস্তুত করে?
৩. কি এলগরিদম ব্যবহার করা হয় ক্যালকুলেট বা ডাটা প্রসেসের কাজে?
৪. ব্রেন কিভাবে কল্পনা করে?
৫. ব্রেন কিভাবে নতুন কিছু আবিষ্কার করে?
৬. চিন্তা কি?
৭. অনুভুতি কি?
আপাত দৃষ্টিতে সহজ প্রশ্ন মনে হলেও এই জটিল প্রশ্নের উওর গুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
থাক আজ আর পেচাইলাম না। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
তথ্যসূএ: প্যার্টান রিকগনিশন বই
http://serendip.brynmawr.edu
আরও কিছু ওয়েব সাইট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।