বিশ্বমানব ও প্রাণীসকলের অঙ্গ-প্রতঙ্গ অশ্লীল নয়। তেমনি লেখনিতে শব্দগত অবস্থানটাও অশ্লীল নয় কখনোই। অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদর্শন অশ্লীল কখনো কখনো। তেমনি লেখনিতে শব্দের ব্যাবহার বা উপস্থাপনটাও অশ্লীল হয়ে উঠতে পারে। পরিবেশগত অবস্থান ঠিক রেখে যৌন অঙ্গ উন্মুক্ত করা, ব্যাবহার করাটাও অশ্লীল নয়।
এভাবেই বলা যায়, শব্দগত অবস্খান ও উপাস্থাপন সঠিক রেখে যৌন অঙ্গকে শব্দের ব্যাবহারে উপস্থাপন করাটা অশ্লীলতাকে ঢেকে দিতে পারে। আধুনিক সৃজনশীল সাহিত্যে বিষয়-ভাবনার প্রয়োজনে যৌনতাকে অনিবার্যভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। শব্দের অবস্থান ন্যায়ত অনিবার্যতা পায়।
আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অনেকক্ষেত্রে শ্লীলতা-অশ্লীলতাকে ভিন্ন দোষ-গুণে পরিমাপ করে। একটা ছেলে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্যান্টের জিপার খুলে লোক-চোখের সামনের হিসি করে, আমাদের চোখের অভ্যস্ততা একে অশ্লীলভাবে দেখে না।
আবার একটা মেয়েকে একইভাবে উন্মুক্তস্থানে হিসি করতে দেখলে আমরা ভিরমি খাবো নিশ্চয়, আমাদের চোখ বিচার করবে অশ্লীল বলে। আমাদের ধর্মীয় বোধ, উচ্চবর্গীয় কৌলিন্যবোধ, বিশেষ শিষ্টাচারের পরিমাপে নারীর কাছে আমরা অনেক বেশি অনুগত, শালীন(?), পুরুষের একান্ত নিজস্ব ভোগ-সম্ভোগের বস্তু বলে খুবই সুরক্ষিত ও নিরাপদ নারীদেহ হিসেবে পেতে চায়। পুরুষ নারীদেহকে কমলার খোসার তল থেকে রসালো তরতাজা কোয়া হিসেবে রসাস্বাদনই করতে চায়। তাইতো সাহসী, স্বতন্ত্র ব্যাক্তিস্বত্বাসম্পন্ন, স্বাধীনচেতা, পুরুষের বাহুবিচ্যূত, অনুগত নয়, সমাজের অন্যায্য শৃঙ্খল ভেঙে বের হয়ে আসা, এমন নারীকে অশালীন নারী হিসেবে দেখি। পুরুষের বহুগামীতা উচ্চবর্গীয় সংস্কৃতির অহমিকা মনে করা হয়।
বহুগামী নারীকে গালি দেয় বেশ্যা বলে। উন্মুক্ত নারীদেহের উচ্চারণগত শব্দগুলোকেও বিচার করছি অশ্লীল হিসেবে। ভাষাকে গ্রহণ ও ত্যাগ করার মধ্যেও একজন মানুষের নিজস্ব সমাজ ভাবনার দৈন্যতা বা প্রাপ্যতা প্রকাশ পায়।
মানুষের আনন্দ-উল্লাসের ভাষা যেমন আলাদা ক্ষোভ-হতাশার ভাষাও তেমনি আলাদা হবে। উচ্চবর্গের জীবনাচরণ-সংস্কৃতি যেমন আলাদা, নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবনাচরণকেন্দ্রীক ভাষা আলাদা।
নিম্নবর্গের মানুষের ক্ষোভ-হতাশার ভাষা তাদের বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা, তাদের ভাষাটাই স্বতন্ত্র শক্তি।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্র নিপীড়ন করে, গণমানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ধনীক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে চলে। শ্রেণীস্বার্ধ রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ প্রভু রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করে, গুম করে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে।
একজন শ্রেণী সচেতন বঞ্চিত মানুষ কোন পক্ষে দাঁড়াবে? দাঁড়াবে তার শ্রেণীর পক্ষে। আমি আমার শ্রেণীর পক্ষে দাঁড়িয়েই কথা বলতে চাই। আমি আমার অত্যাচারী শক্তির বিপক্ষে কথা বলতে চাই। আমার ভাষা ক্ষোভের, বিক্ষোভের। আমার বিক্ষুব্ধ ভাষা দিয়েই আঘাত হানতে চাই।
এই আঘাতে রক্তাক্ত হবে কারা? এই আঘাত পেয়ে পাল্টা আঘাত করতে আসবে কারা? তারা শ্রেণী সচেতন, নিপীড়ক শক্তি।
শব্দনীড় ব্লগে ‘বাল বিড়ম্বনা’ শিরোনামে যে পোস্ট দিয়েছি, সেটাতে আমার শ্রেণীর পক্ষ হয়ে ক্ষোভ-হতাশাকে প্রকাশ করতে চেয়েছি। আবার আঘাত করতে চেয়েছি নিপীড়ক রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহদেরকে। এখানে ভাষাই তো প্রধান। ভাষাই তো অস্ত্র।
এই বক্তব্যগুলো অবশ্যই এই পুলিশী রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহদের স্বস্তির কারণ হতে পারে না। শব্দনীড় ব্লগ আমার কাছে শ্রেণী চরিত্রের জায়গায় স্পষ্ট মনে হয়েছে। শব্দনীড়কে ধন্যবাদ দিই, তারা খোলসে নিজেকে ঢেকে রাখার ভণিতা করেনি। তারা মুক্তবুদ্ধির চর্চার জায়গাতে শুধু তাদের স্বার্থটাই রক্ষা করে চলছে। বাল শব্দটা বিষয়-ভাবনার সাথে মিলিয়ে দেখলে কখনই আপত্তিকর নয়।
বাল ক্ষোভ-হতাশার ভাষা হয়ে উঠেছে এখানে। এখানে বাল শব্দটা আপত্তির হতে পারে না, যদি বিষয়-ভাবনাটা আমি গ্রহন করি। আর না গ্রহন করতে পারাটাই আপত্তির কারণ।
নতুন নতুন ব্লগের জন্ম হচ্ছে। নতুন লেখিয়ে সস্তা জায়গা পেয়ে বন্ধুদের দেখাদেখি দু’এক লাইল লেখার চেষ্টা করছে।
এটা তাদের কাছে নিছক ফূর্তির জায়গা। হয়তো কিছুটা আড্ডার জায়গাও। নতুন চিন্তাকে যারা পাত্তা দিতে চায় না, থাকুক না তার নিছক ফূর্তি, আনন্দ নিয়ে! যাদের কাছে রাজনীতি মানে লুটপাটের সুযোগ নেওয়া। সাহিত্য-সংস্কৃতি মানে ফূর্তি-আনন্দ বিনোদনের মাঝে মত্ত হয়ে থাকতে পারা। যারা বাপের টাকায় সার্টিফিকেট কেনে বলে দেশ-জনসাধারণের প্রতি কোন দায় অনুভব করে না।
থাকুক তারা বাপের স্বার্থ নিয়ে। সমালোচনার ভাষাটা তারা নিজেরা আত্মস্থ করুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।