তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু; তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে; তুমি যেই এসে দাঁড়ালে - কেউ চিনলো না, কেউ দেখলো না; সবাই সবার অচেনা।
উপরের টাইটেল দেখে ভড়কাবেন না প্লীজ। একদমই নিরেট খাঁটি, যুক্তিযুক্ত একটি শিরোনাম যা আপনার জীবনে এনে দেবে শান্তি। কোন কিছুকেই তখন আর আপনার কিছু মনে হবে না। কারণ, এই ব্যবস্থায় আপনি পার পেয়ে যাবেন অতি সহজেই।
সরকারি দল, বিরোধী দল, উপরন্তু যারা কোন দলই না, সবাই আপনাকে নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। নিজেকে ধার্মিক হিসেবে প্রচার করতে, ধর্মের মোহে জনতাকে আচ্ছন্ন করতে। (পরেরবার ভোট বেশি পাওয়া লাগবে না !!!) এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করতে আপত্তি নাই যে, পৃথিবীতে ভণ্ড ধার্মিকের তুলনায় সুস্থ, স্বাভাবিক, মানবিক ধার্মিকের সংখ্যা নিতান্তই কম।
গত কয়েকদিনের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ নিচে তুলে ধরলাম, যদি এ অধমের ভুল হয়ে থাকে, তবে কোনভাবেই ক্ষমা করবেন না আশা রাখছি ::
৫ এপ্রিল, ২০১১। রাজবাড়ীর পাংশা থানার অন্তর্গত হাসাবপুর গ্রামে বাউল নির্যাতন।
বাউল সন্ধ্যা ঘোর ইসলাম বিরোধী বলে ইসলামের বর্তমান রক্ষকেরা ঝাঁপিয়ে পড়েন ইসলাম রক্ষার্থে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতাম মাত্রা বাউল হয় নির্যাতনের শিকার। মসজিদে নিয়ে সকলকে তওবা পড়িয়ে চুল দাড়ি কেটে দেয়া হয় মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। এহেন নির্যাতনের পাঁচদিন পর ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এরই মধ্যে ইসলামের একজন রক্ষাকারী মুফতি রিয়াজুল, শুক্রবার ১৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন।
লিঙ্ক :: রিয়াজুল ইসলাম গ্রেপ্তার
এই খবরে দেশের বেবাকতে পুলকিত বোধ করার সাথে সাথে আরও খুশির খবর বয়ে আনে নিচের লিঙ্ক ::
বাউলদের নিরাপত্তা কেন নয় : হাইকোর্ট
ধর্ম ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহা-পরিদর্শক, উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ঢাকা রেঞ্জ, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১০ জনের কাছে হাইকোর্ট জানতে চায়, বাউলদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তার করে কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না, উপরন্তু, বাউলদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, বাউল সম্প্রদায়ের মুক্ত বাক চিন্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা কেন নিশ্চিত করা হবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নির্যাতনকারীরা ছিল আওয়ামী নেতৃবর্গ ও কর্মীবর্গ। তাই ধর্ম রক্ষাকারী মুফতি আমিনী ও আওয়ামী-র মাঝে তেমন কোন ফারাক নেই। এই ঘটনা প্রসঙ্গে আমিনীও কিন্তু চুপ, যদিও নারীনীতির ব্যাপারে তার যৌনানুভূতি একদম খাড়া।
যাই হোক, উপরের খবর পড়ে যখন অনেকে আনন্দে উদ্বেল, ঠিক তখন, গ্রেপ্তারের একদিন পর, মুফতী রিয়াজ জামিনে বেরিয়ে আসেন।
সেইসাথে হাইকোর্টকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনপূর্বক স্থানীয় সংসদ সদস্য এক শান্তিপূর্ণ সালিশী বৈঠকের ডাক দেন। যেখানে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত আলোচনায় মামলার বাদী ও আসামির সাক্ষর গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণ মীমাঙসা করা হয়। বৈঠক শেষে সকলকে মিষ্টিমুখও করানো হয়! বিস্তারিত নিচে::
শান্তি শান্তি শান্তি !!!
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই সাংসদ বলেন, "এতে করে শান্তি রক্ষা হবে। " !
বাহ রে বাহ !!! কি সরকার আমাদের ... কি তার বিচার !!!! কাইলই এক হুজুরের দাড়ি কাইট্টা টুপি নিচে ফেলায় দিমু। তখন আমার বিচার না হইয়া যেন শান্তিপূর্ণ মিষ্টি বিতরণ হয় .... ।
কি, আপনারা নিশ্চয়ই রাজি ??? কিন্তু আমি জানি, তখন আওয়ামী বা বিএনপি বা জামাত, বা মুফতি আমিনী "নারায়ে তা'কবীর" বলে ইসলাম অবমাননার দায়ে আমার শিরোচ্ছেদে একটুও পিছপা হবে না। এই হল আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের ধর্ম, আর সাধারণ জনতা ধর্মের অপব্যবহারের বলির পাঠা।
ধর্ম রক্ষার আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিচে-
মসজিদে যৌন নির্যাতন !
অবশেষে ধর্মপালনের চূড়ান্ত বহি:প্রকাশ। মসজিদের ভিতর সাত বছরের শিশু যৌন হয়রানির শিকার। মসজিদের খাদেম অবশেষে নরখাদক ! এই ঘটনা না হয় flashed. কিন্তু ধর্মীয় যাতাকলে বাংলাদেশের কোন মন্দিরে বা মসজিদে বা গির্জায় ... কোন মধ্যযুগীয় চর্চা হচ্ছে - তা কে জানে ? নরপশুগুলোর বিচার যে কি হওয়া উচিত তা ঈশ্বরের (!) হাতেই ছেড়ে দিলাম ..... কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বিচার নাই।
তার উপর, গণমাধ্যমেও খুব একটা প্রকাশিত হয় নাই এই খবর। শুধুমাত্র একুশে নিউজ ছাড়া। (যতদূর আমি জানতে পেরেছি)। ।
হয়তোবা এরাও ধর্মীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় পিছলে বেরিয়ে যাবে।
পিছলে বেরিয়ে যেতে পারব না, ওই শিশু, ওই বাউল আর আমজনতা, যারা ছাতার নিচে নাই। আর সমগ্র আবোল তাবোল এই বক্তব্যের সারাংশে সমাপ্তি হয়তোবা এরকমই :: বাউলদের উপর নির্যাতনের ব্যাপারে আমিনী হারামি চুপ থাকতে পারে অথচ নারী নীতির ব্যাপারে তার সস্তা যৌনানুভূতি সুড়সুড়ি দেয়। এরপর মসজিদে খাদেমের অন্যায় প্রকাশ্যে আনতে গণমাধ্যমের রাখঢাক। তার উপর বিচারের পরিবর্তে "বাউল নির্যাতন ঘটনা"-র শান্তিচুক্তিই বলে দেয় আমরা কোন দেশে বসবাস করছি। এ যেন ঠিক সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ "বিসমিল্লাহ" এর জ্বলজ্বলে প্রতিকৃতি।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।