আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা নামক দেশটি আসলে কেমন দেশ?

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

[ পূর্বে প্রকাশিতের পরে ] পর্ব - ০১ , পর্ব – ০২ , পর্ব – ০৩ পর্ব – ০৪ [ চলতি পর্বঃ ধর্মের বিবিধ ব্যবহার ] আমাদের স্বাধীনতার পর পরই আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতা এবং উনার ভাই-বেরাদারগণ, মানে সেই অর্থে আমাদের জাতির চাচা’রা, সে সময়ে আমদের জাতিগত চেতনার ভেতর থেকে ধর্মকে বাদ না দিলেও ধর্মের ব্যাপারে একটু যত্নশীল হবার চেষ্টা করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ধর্মকে বশে রাখতে হবে, আর সে জন্য দরকার হবে ধর্মের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান, যা রাষ্ট্রের স্বার্থ আর প্রয়োজন মাফিক ধর্মকে কেটেছেঁটে দেবে। যতখানি ধর্ম ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য দরকারি, ঠিক অতখানি ধর্মের সাপ্লেই দেবে রাষ্ট্রের ধর্ম গুরুরা। কিন্তু তা কাজ করে নাই।

হোমিওপ্যাথির দাওয়াই আজ অজগর সাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। যারা ধর্ম ব্যবহার করে, তারা তো জানেই; আর যারা ব্যবহার করেন না, তারাও ব্যবহারকারীদের ব্যবহার দেখে ধর্মের ব্যবহার শিখে ফেলেছেন। এখন আমাদের দেশ আর ধর্মনিরপেক্ষ নয়। আমাদের দেশের একটা ধর্ম আছে না? একটা দেশের কি ধর্ম থাকতে পারে? কখোনোই না। কিন্তু আমাদের দেশের ধর্ম আছে।

আর সেটা আমাদের জনগোষ্ঠির আচরিত ধর্ম। সেটা শান্তির ধর্ম। কিন্তু শান্তির ধর্ম পালন করা হলেই যে শান্তিতে দেশ ভরে যাবে, এমন কথা এই ধর্মের প্রচলনকারীরাও বলে যান নাই। আর ধর্মকে ইচ্ছামত ব্যবহার করার রেওয়াজ আছে অনেক কাল ধরেই। রাষ্ট্র যদি তার প্রয়োজন মত ধর্মকে ব্যবহার করতে পারেন, তা হলে রাষ্ট্রের মৌলিক যে গাঠনিক কাঠামো, সেই ব্যক্তি কেন তার প্রয়োজন মত ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবে না? এমন কোন নিষেধ দেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কে? তাই আমাদের দেশে ধর্মের চাষ শুরু হলো রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়।

আমাদের দেশ এই ব্যাপারে এগিয়ে থাকলো অনেক দেশের থেকে অনেক বেশি। একটা সময়ে ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি শুরু হলো এখানে, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশে বিস্তারিত হল জঙ্গিবাদ। জঙ্গিরা আর কেউই না, তারা আমাদেরই দেশের সন্তান। তারা এ দেশে কাজে নামার আগে এ দেশ থেকে যেয়ে বিভিন্ন দেশের 'জিহাদে' অংশ নিয়েছিল। তাদের হুংকারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল ভড়কে গেল।

আমাদের ক্ষমতায় যারা যায়, তারা ইসলামকে সার্থক ভাবেই ব্যবহার করে। তাদের চোখে ইসলাম এখন ক্ষমতায় যাবার অনেক প্যারামিটারের ভেতরে একটি। ধর্ম আর রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলে আমরা তৈরি করেছি আমাদের ফ্রাংকেস্টাইন। যে সমাজ আগে ছিল পরমতসহিষ্ণু, সেই সমাজ কি করে এতো অল্প সময়ের ভিতরে এমন বদলে গেল, তা কি সমাজতাত্ত্বিকদের চোখে একটা বড় প্রশ্ন হিসাবে দেখা দেয় না? ১৯৯১ সালের আগে আমাদের দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যারা যেত, তারা সবাই ছিল শ্রমিক শ্রেণিভুক্ত। তারা দুই-তিন বছর পর পর দেশে এসে কয়েকটা মাস কাটিয়ে চলে যেত।

কিন্তু উপসাগরীয় যুদ্ধে আমাদের সৈনিকরা কিছু দিন থেকে এসে যখন এই সমাজে বসবাস করা শুরু করলো, তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আচরিত ধর্মীয় আচরনগুলোকে ‘সত্য ধর্ম’ বিবেচনা করে এ দেশে ব্যবহার করা শুরু করলো। বোরখার ব্যবহার তাই ‘নতুন করে’ শুরু হল – দুঃখজনক হলেও – সেনানিবাসে। সৈনিকরা তাদের দেখে আসা সম্ভ্রান্ত আরবীয় রমণীদের পোষাকে সজ্জিত করতে চাইলো তাদের অল্প বয়েসী স্ত্রীদের। এই সব সেনানীদের অর্জিত যুদ্ধের টাকার কাছে অনেক পিতাই তাদের কন্যাদের ‘বাল্য-বিবাহ’ দেবার লোভা সামলাতে পারেন নাই। এর পরে বোরখা ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে।

নারীর সজ্জার একটা অংশে পরিণত হয়েছে এই বোরখা। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, বোরখা কি আদৌ আমাদের সংস্কৃতির অংগ ছিল স্বাধীনতার আগে বা অব্যাহতি পরে। আজ বোরখা ভালো কাজের চেয়ে খারাপ কাজেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তার জন্য কাকে দায়ী করবো?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।