ঘুমাতে ভালবাসি [img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/107480/small/?token_id=6a4e93401f20ce3751ac6cc8cfcd18cb
১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। মুক্তিপাগল বাঙ্গলি জনতা তখন মুক্তির নেশায় উন্মাদ। পাক বাহিনির নির্মম শোষণ আর অত্যাচরের হাত থেকে মুক্তির চেতনায় মানুষ তখন ঐক্যবদ্ধ। ঠিক সে সময় বাঙ্গালি জাতির কা-ারীরর ভূমিকায় এসে অবতীর্ণ হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বজ্্রকণ্ঠের ৭ মার্চের ভাষণ বাঙ্গালি জাতিকে দেখিয়েছিল মুক্তির আলোর পথ।
লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে জমায়েত হয়েছিল তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। দীর্ঘ ৪২ বছর পর সে ঐতিহাসিক সময় যেন আবার ফিরে এসেছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। আরেকটা সাত মার্চ। আবারো ঐক্যবদ্ধ জাতি। তখন মানুষ একত্র হয়েছিল স্বাধীনতার জন্য আর এখন হয়েছে সে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা কারী পাক-দোসর রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় মানুষ দৃপ্ত শপথ নিল, সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার।
গতকাল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গনজাগরন মঞ্চ আয়োজিত মহাসমাবেশে মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে এ শপথ নেন উপস্থিত হাজারো জনতা।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের তাৎপর্য তুলে ধরে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ৭ মার্চ বাংলার ইতিহাসের এক মাহেন্দ্রক্ষণ। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ ব্যয় করেছেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য।
তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি জাতিকে মুক্তির নতুন আলোর পথ দেখান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে ৭ মার্চ এক অনুপ্রেরণা। ’
তিনি বলেন, ‘আজ স্বাধীনতার ৪২বছর পর ঢাকা, সাতক্ষীরা, বগুড়া গাইবান্ধাসহ সারা বাংলাদেশে আমার ভাইদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত। একাত্তরে শ্বাপদ হায়েনারা যে তা-ব চালিয়েছিল তা তারা এখনো শুরু করেছে আমারা তার বিচার চাই। জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই।
সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তাই আমাদের উত্থাপিত ছয়দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ’
সর্বস্তরের মানুষকে দেশব্যাপী সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী জামাত-শিবিরের সন্ত্রসী বাহিনী কর্তৃক সম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হয়েছেন সে সকল ভাই তাদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। আমরা গণজাগরণ মঞ্চও দাড়াবে এসকল মানুষের পাশে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে লালন করে ৭ মার্চকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা অহিংসভাবে আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো ইনশাল্লাহ।
’
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেন না ছড়াতে পারে তাই আমাদের শপথ নিতে হবে এই মৌলবাদী জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ আন্দোলনকে পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘জাগরণমঞ্চের চলমান আন্দোলন সকলের শ্রেনীপেশার মানুষেকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এ ঐক্য সুদৃঢ় থাকলে কোন অপশক্তি আমাদের দমাতে পারবেনা। সমস্ত রাজাকারের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
’
রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে নানা বিষযে বিভিন্ন মত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আপনারা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আর যদি আরএকটি গুলি চলে তবে আপনারা বাঁশ কেটে রাখুন,গজারির লাঠি তৈরী করুন। যেখানেই জামাত-শিবির পাবেন গণধোলাই দিয়ে বিতারিত করুন। ’
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক শোষনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে চলমান আন্দোলন লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবেই।
’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি এস এম শুভ বলেন, ‘৭মার্চ এ ৪২বছরে অনেকবারই এসেছে। তবে আজকের ৭ই মার্চ ভিন্ন। কেননা আজকের দিনে জনগন একাত্তরের ন্যায় এবারো মুক্তিযদ্ধের চেতনাকে নিয়ে তাদের অধিকার বুঝে নিতে শিখেছে। ’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান আন্দোলন কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনয় নয়।
এটা হলো যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা লালন করেন তাদের আন্দোলন।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকি নাজমুল আলম বলেন, ‘আমরা যারা ৭১এর ৭মার্চ দেখিনি তারা ২০১৩সালের ৭মার্চে এসে তীব্র কণ্ঠে বলতে চাই এবারের সংগ্রাম রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম। ’ বিরোধীদলের উদ্যেশে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রথমদিন থেকেই এটা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন রাজপথে থেকে জামাতের সঙ্গে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন থেকেই তার জন্য গণজাগরণ মঞ্চের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যারাই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন তাদের সঙ্গে কোন আপোষ করা হবেনা। ’
এর আগে দুপুরের প্রচ- রোদকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার লোক ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন মঞ্চের পাদদেশে জমা হতে থাকে ।
রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মিছিলের ক্লান্তিহীন জনস্্েরাতে আসতে থাকে উদ্যানে। সেসঙ্গে শিখাচিরন্তনে মাইকে ভেসে আসা গগণবিদারি স্লোগান, প্রতিবাদি গানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক ময়দান। ফিরে আসতে থাকে একাত্তরের আবহ।
বিকেল চারটায় পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠের মধ্যদিয়েই কর্মসূচি শুরু হয়। বক্তব্য শুরুর আগে উপস্থিত জনতা সমস্বরে গেয়ে ওঠেন জাতীয় সংগীত।
এরআগে গান পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আব্দুল জব্বার। তিনি গান ধরেন ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল’ এরই সঙ্গে সুর মেলায় হাজারো কণ্ঠ। এরপর গান ধরেন বিমান চন্দ্র। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পুরোটা পাঠ করেন নয় বছরের শিশু তাসরীন তাজোয়ান অপূর্ব। তার কচিকণ্ঠে বজ্রভাষণ শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে উপস্থিত জনতা।
স্মৃতিকাতর হয়ে তারা ফিরে যান সেই অগ্নিঝরা একাত্তরে। বক্তব্যের একপর্যায়ে মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার হাতে নির্যাতিত বীরঙ্গনা আনোয়ারাকে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে ১০হাজার টাকা তুলে দেন ইমরান এইচ সরকার।
শিক্ষকরা উপস্থিত জাগরণ মঞ্চে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষক ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে গণজাগরণের মঞ্চের সঙ্গে সংহতি জানান। গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তারা মিছিল নিয়ে মঞ্চে আসেন। এসময় শিক্ষকদের তরফ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দীন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জামাত-শিবির যে দেশব্যাপী তা-ব চালাচ্ছে সেটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এদেরকে সমাজ থেকে বয়কট করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। ’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দুইহাজার ছাত্র-শিক্ষক এসে সংহতি জানান মহাসমাবেশে।
সমাবেশে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর, নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রোকেয়া প্রাচী, ডা.কামরুল হাসান খান, কাদের মোল্লার মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী শহিদুল হক ওরফে মামা, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
২২মার্চ পর্যন্ত চলবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি: গতকাল গণস্বাক্ষর কর্মসূচির শেষ দিন হলেও তা আগামি ২২ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে জাগরণমঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার একথা বলেন।
আজকের কর্মসূচি: জাগরণমঞ্চের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বিকেল তিনটায় নারীজাগরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ডা. ইমরান দেশের সকল শ্রেণী পেশার নারীদের সমাবেশে যোগ দিয়ে সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।