আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে পাখিরা বাসা বানায় না



যে পাখিরা বাসা বানায় না শুধু অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে- এ কথায় সবাই কোকিলের কথাই ভাববে। কিন্তু পাখি বিজ্ঞানীদের নিবিড় গবেষণায় জানা গেছে শুধু কোকিল নয়, অন্য অনেক প্রজাতির পাখি অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা লালন-পালনের ভার বাসার মালিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় সারে। আবার অনেক কোকিল বাসাও বানায়। কোকিল গোত্রের পঞ্চাশ প্রজাতির পাখি ছাড়াও আফ্রিকার চার প্রজাতির বাবুই এবং আমেরিকার বৃষ ঠোকরা নামে পাখিরাও বাসা বানাতেই জানে না, ডিম পাড়ে অন্যের বাসায়। এ ছাড়াও যারা বাসা বানাতে জানে এমন প্রজাতির পাখিরাও কখনও কখনও অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে।

এ কাজটি অবশ্য তারা করে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে। ডিম পাড়ার মৌসুমে কলোনিতে অনেক পাখির ভিড়ে বাসা বানানোর জায়গা না থাকলে কিংবা ডিম পাড়ার সময় ঝড়ে বা বৃক্ষ নিধনের কারণসহ অন্য কোন কারণে বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যের বাসায় ডিম পাড়তে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা অনেক পাখিকেই। যাযাবর মালাড ও শেলড্রেক নামের হাঁসদের, কাঁদাঘোঁচা পাখিদের অন্যের বাসায় ডিম, পাড়তে দেখা গেছে। তবে অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ার ক্ষেত্রেও কিন্তু দেখে শুনে বাসা নির্বাচন করতে হয়। যারা অন্য পাখির বাচ্চা লালন পালন করতে অন্যথা করেন এবং তাদের ডিমের রং ও সাইজ যে পাখির সঙ্গে মেলে সে বাসাতেই চুপিসারে ডিম পেড়ে আসে।

কানাডার হাডসন উপসাগরের পশ্চিম উপকূলে বাচ্চা দেয়ার মৌসুমে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ নীল রাজহাঁস বাসা করতে আসে। এতে অনেক রাজহাঁস ও জলাভূমির অনেক পাখির বাসা বানানোর তিল ধারনের জায়গা থাকে না। এ সময় পাখি বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যেসব নীল রাজহাঁস জায়গার অভাবে বাসা বানাতে পারছে না তারা স্বজাতিদের বাসায় ডিম পাড়ছে। কারণ এরা অন্যের বাচ্চাকেও নিজের বাচ্চার মতোই লালন পালন করে। হাঁসদের মধ্যে আমেরিকার কালো চুপি হাঁস (শাকহেড ডাক) কখনই বাসা বানায় না।

অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। দক্ষিণ আমেরিকার আনিরা নামের কোকিলরা সাত থেকে দশের ক্ষুদ্র একটি দল মিলে বড় একটা বাসা বানায় এবং সবাই মিলে সে বাসায় ডিম দেয় এবং পুরুষ-স্ত্রী মিলে কয়েকটি পাখি এক সঙ্গে বসে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। এই কোকিলদের একটি বাসায় পঞ্চাশটা পর্যন্ত ডিম দেখা গেছে। সাধারণ কালো কোকিল যেগুলো আমাদের দেশেও দেখা যায় এরা কখনই বাসা বানায় না। এরা শুধু কাকের বাসাতেই নয় বরং মেয়ে কোকিলের ডিম পাড়ার সময় হলে সুযোগ-সুবিধা মোতাবেক যে কোন পাখির বাসাতেই ডিম পাড়ার কাজ সেরে নেয়।

বাচ্চা নিয়ে এদের কোন ভাবনাই নেই, শুধু ডিম পাড়াই যেন এদের একমাত্র কাজ। এ প্রজাতির কোকিল দেড়শ’ জাতের পাখির বাসায় ডিম পাড়ে বলে পাখি বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয়েছে। তেমনি আফ্রিকা ও পশ্চিম ইউরোপের বুটিদার কোকিলরা আবার একটি পাখির বাসায় শুধু একটি ডিম পাড়ে। সেজন্য ডিম পাড়ার জন্য এদের প্রতিদিন নতুন কোন পাখির বাসা খুঁজতে হয়। আবার এক্ষেত্রে সমস্যাও আছে।

সব পাখি কিন্তু তাদের বাসায় অন্য পাখির ডিম পাড়াকে কিছুতেই মেনে নেয় না। ওয়ারবলার ও রেন জাতের পাখির বাসায় অন্য কোন পাখি ডিম পাড়লেই তারা নিজেদের ডিম থাকলেও বাসা ছেড়ে চলে যায় এবং আবার নতুন বাসা বানায়। তবে রেডস্টাট ও রীভওয়ার বলার পাখি তাদের বাসায় অন্য কোন পাখির ডিম দেখলেই সেই ডিমের ওপর আরেক দফা খড়কুটো বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর নতুন করে ডিম পাড়ে। এতে করে সে ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। রাশিয়ার কালো কোকিল এবং আমেরিকার বৃষ ঠোকরা এক্ষেত্রে আরেক ডিগ্রী সরেস।

এরা ডিম পাড়ার জন্য যে বাসাটি নির্বাচন করে সে পাখির সব ডিম নষ্ট করে সে বাসাতে ডিম পাড়ে। ফলে সেসব পাখি নিজ পরিবর্তে শুধু কোকিল আর বৃষ ঠোকরার বাচ্চাদেরই যত্ন করে বড় করে তোলে। বাবা ও মা পাখির ডিম ফুটে বেরুনো সন্তানের প্রতি গভীর-মমতা বাচ্চার পার্থক্য তারা বুঝতে পারে না। প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু অন্যের বাসায় লালিতপালিত হতে হবে সেজন্য কোকিলের ডিম থেকেই বাচ্চা ফুটে বের হয় আগে এবং বাচ্চাও দ্রুত বড় হয়ে বাসা ছেড়ে চলে যায়। তবে কেন কোকিলসহ অনেক প্রজাতির পাখি কখনই নিজেরা বাসা বানায় না তার কারণ এখনও পাখি বিজ্ঞানীরা নিরূপণ করতে পারেন নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।