"বাংলা আমার জন্মভূমি, বাংলা আমার প্রাণ; হবনা পিছপা, রাখতে আমার বাংলা মায়ের মান । " এই দেশে থাকবেন, অথচ হরতালকে বিরক্ত লাগলে তো চলবে না। কারণ আমাদের বুঝতে হবে কুদ্দুস বয়াতির ভাষায়- এই হরতাল হরতাল নয়, আরো হরতাল আছে; এই হরতালেরে নিয়া যাইব লাগাতার হরতালের কাছে। এমনও হতে পারে, যখন রচনায় নদীমাতৃক দেশ না লিখে, বাচ্চাদের লিখতে হবে হরতালমাতৃক দেশ ( আগে যেমন লিখতে হত, পাট আমাদের সোনালী আঁশ এবং প্রধান অর্থকরী ফসল ), বিদেশীরা এত দিন আমাদের চিনত বন্যা-খরার দেশ হিসেবে, আর কিছু দিন পরে চিনবে হরতালের দেশ হিসেবে। তাই হরতালে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
তাই আমাদের জানতে হবে,
- হরতালে পোড়া গাড়ির আগুনে কিভাবে আলু পোড়া দিয়ে খেতে হয়।
- পিকেটারদের ছোড়া ইট পাটকেল দিয়ে কিভাবে বাড়ির মেঝের ঢালাই কাজটা সেরে ফেলা যায়।
- অফিসে যাবার সময় পিকেটার বা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে কিভাবে শরীরের বাড়তি মদ কমিয়ে স্লিম থাকা যায়।
- আর পুলিশের হাতে ধরা খাইলে মাইরটা ফাও, অবশ্য তখন একটু রিকোয়েস্ট করতে পারেন যে, ভাই গিড়ায়-গাড়ায় না মাইরা একটু সিস্টেম মতো লাগান, যেন কাঁটা দাগ বা জমাট রক্ত ট্যাটু হিসেবে চালাইয়া দেওয়া যায়।
আর বিজনেস ভ্যালু্ও কিন্তু হরতালের কোন অংশে কম না; মাথায় সারাক্ষণ বিজনেস প্লেন ধাক্কাধাক্বি করে, যেমন ধরেন:
- পিকেটারদের সুবিধার্থে ইটের টুকরার সাপ্লায়ার হতে পারেন।
- ইটের টুকরার সাথে লোহার রডের টুকরা রাখলে আরো ভাল হয়, যা দিয়ে জামাতি কায়দায় পুলিশের মাথায় ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা যাবে।
-কেরোসিন, পেট্রোল বা দিয়াশলাযের ভ্রাম্যমান সাপ্লায়ার হতে পারেন।
- ভ্রাম্রমান হাসপাতালের ব্যবসাও কিন্তু জমজমাট হবে। শুধু একটু তরকারি বা চানাচুরওয়ালার মত আওয়াজ দিতে হবে...যেমন, এ্যাই লাগব বেন্ডেজ, ফার্স্ট এইড, এ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি ইত্যাদি।
- আমেরিকার সাথে ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ব্যবসা বানিজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে, কারণ এখনতো শুধু হরতালের ক্ষতি পোষাতে ছুটির দিনগুলোতে অফিস খোলার আহ্বান করছে, আর পাঁচ দিনের ক্ষতি তো আর দুই দিনে পোষানো যাবে না, তাই নাইট স্কুলের মতো নাইট কলেজ, নাইট বিশ্ববিদ্যালয়(ভাই এইটা কারো বইলেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বা ছাত্ররা জানলে আমার শুধু কপালে নয়,পিঠেও খারাবি আছে) নাইট অফিস, আদালত ইত্যাদি হবে; আর আমাদের দেশে যখন রাত আমেরিকায় তখন রাত, সো বুঝতেই তো পারছেন বিদ্যুৎ বেগে, দুঃখিত, ঈশ্বর কণার (হিগস-বোসন) বেগে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
আমাদের আর পায় কে।
দেশ ও জাতির উন্নতি কল্পে হরতালের উন্নয়নে আরো ভুরি ভুরি ব্যবস্থা করা যাবে। তখন দেখা যাবে প্রতিবার বিরোধী দলই দেশ চালাবে, কারণ বিরোধী দলের বিক্ষোভের বদলে সরকারী দলও ইদানিং বিক্ষোভ সমাবেশ করছে, কিন্তু সরকারী দলতো আর হরতাল দিতে পারছে না; হরতাল দেবার একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছে বিরোধী দলগুলো। তাই সবাই চাইবে বিরোধী দল হতে, প্রধান বিরোধী দলই হবে সকল ক্ষমতার উৎস, বাকি লেন্জা বিরোধী দলকেও হেলা ফেলা করলে চলবে না,কারণ তাদেরও আছে হরতাল দেবার গণতান্ত্রিক অধিকার। তখন আর কেউ ভোটে পাশ করার জন্য বিরোধী দলের পায়ে পাড়া দিয়ে লাগতে যাবে না, দাঙ্গা হাঙ্গামা বন্ধের বদলে আগুনে তুষ দিয়ে বাড়িয়ে আবার সরকার গঠনের জন্য নতুন কোন ইস্যু খুজবে না, আর বিরোধী দল্ও সংসদ বর্জনের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে।
তাই আসুন আমরা হরতালের উন্নয়নকল্পে একত্রিত হয়ে কাজ করি। কারণ বোঝলেনই তো হরতালের কতো সুফল।
সর্বোপরি বলতে হয়, আমার এই লেখনি শক্তির বর্হিপ্রকাশও এই হরতালের কারণেই। হরতালের কারণে কর্মস্থলে না যাওয়াতেই আমার গোঁবরমন্ডিত এই অনুর্বর মস্তিষ্কের কর্মফল এই জ্ঞানগর্ভ লেখনি। আরো অনেক লেখাই আছে, কিন্তু হরতাল আমাকে প্রাকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
তাই রবী ঠাকুর এ যুগে জন্মিলে, আমার সাথে একাত্নতা ঘোষণা করে গেয়ে উঠত, “ হে হরতাল, তুমি মোরে করেছ মহান”।
ছিঃ, আর নীচে নামতে পারলাম না; একদিনে আর কত নীচ হওয়া যায়!!!
(((এখন থেকে আর প্রতিবাদ নয়, থিঙ্ক পজিটিভ ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। অবশ্য ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের সমস্যা-অভিযোগগুলোকে পজেটিভ বলায় আমার কিছু ছাত্রদের মাঝে যথেষ্ট দুর্নাম আছে। কিন্তু পজেটিভ থিঙ্কিংয়ে আমি আবুলকে গুরু মেনেছি। কারণ সব আবুলে না হলেও কিছু আবুলে মাল আছে; যারা পদ্মা সেতু না হবার পেছনেও বৃহৎ কোন জাতীয় স্বার্থ খুজে পায়।
আর যারা হরতালের পিছনে, মানুষ হত্যার পেছনে, গাড়ি পোঁড়ানোর পেছনে দেশের স্বার্থ এবং এগুলোর সমর্থনে যুক্তি খুজে পায়, সেসকল আবুলরাও আমার গুরু। কারণ আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এগুলোর সমর্থনে কোন ভাল যুক্তি খুজে পাই না; তাই তাদেরকে আমার গুরু মানতেই হবে। )))
(সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ- হরতালের সময় শেষ, তাই আমাকে একটু বের হতে হবে তো) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।