এখনই, নয়তো কখনই নয়...।
ভদ্রলোক টাকা তুলতে এসেছেন। অনুরোধ করলেন কিউতে না দাড়িয়েই ম্যানেজ করে দেয়া যায় কিনা। আরেকবার ওনার দিকে তাকালাম, ওনার নিস্প্রান চোখে চোখ রেখে বুঝতে চাইলাম কি কারনে উনি কিউতে দাড়াতে চাইছেন না। মনে হলো উনি অসুস্হ।
তারপরও জানতে চাইলাম কেমন আছেন? জানতে পারলাম যে উনি এখন ডায়ালাইলিসের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং সে কারনেই টাকাটা ওনার দরকার। সুতরাং বুঝতে বাকী রইলো না যে কি পরিস্হিতিতে উনি লাইনে না দাড়ানোর অনুরোধটা করেছেন।
ক্যাশকাউন্টারে চীফ টেলারকে চেকটা দিয়ে ওনাকে তাড়া দিলাম কাজটা করে দেয়ার জন্য। কিন্তু উনি আমাকে যা জানালেন তা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ওনার একাউন্টটা ডরম্যান্ট হয়ে আছে অনেকদিন লেনদেন না করার কারনে।
অর্থাৎ উনি টাকা তুলতে পারবেন না। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কি করে ওনাকে এই কথা বলি? “আমার টাকা আমার প্রয়োজনের সময়ে আমি তুলতে পারবো না”----এই আক্ষেপের জবাবে আমি ওনাকে কি উত্তর দিবো? বিষয়টা কল্পনা করতেই খারাপ লাগলো।
আমাদের ব্যাংকে সবকিছুই কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং ওনার ডরম্যান্ট রিঅ্যাকটিভেশন রিকোয়েস্ট ফর্ম, একাউন্ট ওপেনিং ফর্ম এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ আমাকে হেড অফিসে পাঠাতে হবে। কিন্তু সেভাবে পাঠালে সময় লাগবে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা।
ভাবলাম ওনার সব কাগজপত্র স্ক্যান করে হেড অফিসে পাঠাবো যাতে আধা ঘন্টার মধ্যেই কাজটা হয়। যাই হোক শেষ পর্যন্ত আমি বিষয়টা ওনাকে বুঝিয়ে বললাম, ওনাকে আশ্বাস দিলাম এই বলে যে পাসপোর্টটা বা জাতীয় পরিচয় পত্র আনলে আর ডরম্যান্ট রিঅ্যাকটিভেশন ফরমে সই করলেই একাউন্টটা রিঅ্যাকটিভেট করা যাবে। যেহেতু বাসা কাছেই দেরি না করে উনি ওনার বাসায় ফেরত গেলেন আর আমি একাউন্টটার ব্যাপারে হেড অফিসে যোগাযোগ করা শুরু করলাম। ওরা আমাকে বলল একাউন্টটা যে শাখার সেই শাখার ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করতে। ওনাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার পরও গৎ বাধাঁ উত্তর দিলেন।
মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হলো কিন্তু সেই সাথে গো ধরলাম যে ওনার টাকার ব্যবস্হা করবোই। ওনার যে পরিমান টাকা দরকার সেই পরিমান টাকা আমি নিজের একাউন্ট থেকে তুললাম ওনাকে দেয়ার জন্য। উনি ফেরার পর ওনার চেক আর ডরম্যান্ট রিঅ্যাকটিভেশনের যাবতীয় কাগজপত্র রেখে ওনাকে টাকাটা দিলাম। খুব খুশি হলেন উনি। আমার হাত ধরে আমার জন্য দোয়া করলেন।
আবেগটুকু লুকানোর জন্য ওনাকে তাড়াতাড়ি গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানালাম।
ডেস্কে ফিরলাম এই সন্তুষ্টি নিয়ে যে শেষপর্যন্ত মানবিক দিকটা উপেক্ষিত হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।