দ্য ওয়ে আই ফিল ইট...
ভুলভাল বিজ্ঞাপনের যুগে বড় বড় বিলবোর্ড দেখে আমাদের বিবিধ বোধ জাগে। সৈকতের বোনকে দেখেও লম্বা-চুলো বাউলা বন্ধু আমার নানান ঢঙে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। জুতার ফিতা লাগানোর জন্য পেলব মেকাপ কিংবা লাস্যময়ী হাসির জরুরত সন্ধানে ব্যস্ত হই আমরা তখন। জরুরত সন্ধানে কেউ ফোটোগ্রাফি, কেউ স্মার্টনেট, কেউ ফ্রেমিং, কেউ থিমেটিক আইডিয়া, কেউ ড্রেসকোড ইত্যাকার বিবিধ বিষয় আবিষ্কার করে। কেউ নেপথ্য কারিগরের শিল্পচিন্তার মুগ্ধতায় একটানা টেনে চলে অল্পদামী সিগারেট।
বিলবোর্ডে এর মধ্যে রোদ পড়ে, ছায়া পড়ে, বৃষ্টি পড়ে। রাজনৈতিক শ্লোগান, ভুইফোঁড় ব্যান্ডের বাদ্য-বাজনা আর বজ্রপাতের শব্দ প্রতিধ্বণিত হয়। নিয়নের আলোয় মধ্যরাতে হয়তো পরাবাস্তব স্ক্রিন হয়ে ওঠে বিলবোর্ড। তখন কেউ জরুরি প্রশান্তিতে পেচ্ছাব করে, নিষিদ্ধ নর-নারী হাঁটে, টাকা নিয়ে চোটপাট গালাগালির আওয়াজ বাজে, তবু জুতার ফিতা হাতে সৈকতের বোনের হাসি ঠিক বাসি হয়না।
যদিও লম্বাচুলো তারাশঙ্করের কথার গুরুত্ব দেয়ার ব্যপারে আমাদের সর্বসম্মত নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়ে আছে, তবু এসব বিজ্ঞাপন, মেকাপ আর তাবৎ দার্শনিক ব্যখ্যা ও আড্ডার ফোকর গলে ভিন্ন এক গল্পের জন্মশব্দ শুনতে পাওয়া গেলো একদিন।
সে গল্পে সৈকতের বোনের মেকাপ থাকে না। ভীষণ রূক্ষ খটখটে রোদ্রে স্বপ্নভ্রষ্ঠ মেয়ের পাশাপাশি এক টিফিন ক্যারিয়ার হাঁটে হয়তো, ঝাঁকুনিতে হলুদ ডাল গড়ায় অগত্যা। সেসব রৌদ্রকাষ্ঠ দিনে সৈকতের জন্ম পর্যন্ত হয়নি। চাষাভূষা বাবা একদিন মারা গেলে সৈকতের বোন হিসেব করে দুইবেলা আকাশ দেখতে শুরু করে। ক্ষুধা কিংবা গর্ভমতী মায়ের হা-হুতাসনের চাপেই কি না কে জানে- একদিন এনজিওর মতো ভাল ভাল বিল্ডিংগুলোতে যাওয়ার সাহস হয় সৈকতের বোনের।
পরে ব্রোথেলের মতো লম্বা এনজিও-সুরঙ্গের অন্ধকারে পা গলায় সৈকতের বোন। তখন পুরনো এক স্বপ্নচোরা মেয়ের মেকাপ বাড়তে থাকে বৈকি। বাড়তে থাকে কর্কট ব্যস্ততা, শপিং, জৌলুসের মতো শহুরে কেসসা। সৈকতের জন্ম হয় নরম বিছানায়। ইংলিশ ফোনেটিক্স আর জামদানি শাড়িতে কুঁচি দিতে শেখে সৈকতের বোন।
হামাগুড়ি দিতে দিতে স্কুলবয়সী হয়ে ওঠে সৈকত। তারপর একদিন ডাইসেলের ভারি সুন্দর ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাবে বলে জুতা হাতে বোনের দিকে হাঁটতে শুরু করে সৈকত। ততদিনে পুরুষালি পারফিউম আর ডিওডরেন্টে ডুবে ডুবে, শিডিউল ভাঙা কোন এক জোসনায় ভীষণ সুন্দর বিলবোর্ড হয়ে গেছে সৈকতের বোন।
সৈকতের বোন এখন কাস্টমার ম্যানেজার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।