যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।
সারাদিন ক্যাচাল করতে আর ভাল লাগে না । দিন দিন জড় থেকে জড়তর পদার্থে রুপান্তরিত হচ্ছি । অবশ্য আমাকে এখন পদার্থ না বলে অপদার্থ বলাই ভালো ।
বই খাতার ধারে কাছে যাইনা প্রায় ৮ মাস হল । সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটাই , টিউশনি করাই একটা । আর সারাদিন ক্যাচাল শুনি ।
টিউশনি থেকে বের হলাম মাত্র । সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
হলে যেতে হবে তাড়াতাড়ি । বাসে উঠা দরকার । টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ালাম । একজন অত্যন্ত রূপবতী তরুণীকে দেখা গেলো এদিকে আসছে ,কানে ফোন । যদিও রূপবতী তবু তাকে এখন অগ্নিমূর্তি বলাই চলে ।
ফোন কানে দিয়ে তাহলে অনেকেই এরকম কাই কাই করে ! !কাছে আসতেই কিছু মধুর বানী কানে এলো -
"তুই আমার সাথে এখন শয়তানি *ুদাস হারামজাদা ?? তুই আমারে পাইছস কি ?? আমি কতক্ষন তোরে ফোন করমু ,রাস্তায় খাড়া করাইয়া রাখছস আমারে ,আমি কি তোর বান্দা দাসী ?? "
কি ভাষা !!!!ফোনের ওপাশের ছেলেটার মুখটার অবস্থা চিন্তা করলাম একবার । আচ্ছা , সব মেয়েরাই কি এরকম নাকি ?? ক্যাচাল না করলে এদের পেটের ভাত হজমে গোলমাল হয় হয়তো । বিয়ের আগেই যদি এত ক্যাচাল করে , বিয়ের পর তো কবরে ধুকায়ে গাদাবে । বিবাহিত জীবনে ক্যাচাল নিয়ে একটা কৌতুক মনে পরে গেল হঠাৎ -
একদা এক ভদ্রলোক প্রেমে পড়িলেন এক সুন্দরী রমণীর । প্রেম যে স্বর্গীয় একখানা জিনিস তা সে মনে প্রানে বিশ্বাস করিতেন।
তাহার প্রেমিকাও তাকে যারপরনাই ভালোবাসতো। বিয়ের আগে প্রেমিকার মুখে আধো আধো কথা শুনে তার হৃদয় সর্বদা পুলকিত হত। অবশেষে বাবা মা রা মেনেও নিলেন তাদের প্রেম সম্পর্ক । ফলাফল হইল বিয়ে । বিয়েও হইল ধুমধামের সাথেই।
কিন্তু বিয়ের পর -
কোথায় সেই আধো আধো কথা !!! কোথায় সেই স্বর্গীয় প্রেম ??? আধো আধো মধুর বুলিগুলোর রুপান্তর ঘটিল রাতারাতি । সারাদিন ক্যাট ক্যাট আর অভিযোগের চোটে তার প্রান হইয়া উঠিল ওষ্ঠাগত । টাকা পয়সা তেমন একটা ছিলোনা কোনকালেও। তারপরেও বিয়ের পরে বউ এর খাই ফরমাশ খাটিতে খাটিতে পকেটের অবস্থা হইল গড়ের মাঠ । কথায় আছে - অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢোকে ,ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায় ।
বাসার কাজ , রান্না ,কাপড় ধোয়া , যখন শুরু হয় ,তখন বৌয়ের মুখের মটর টাও আপনা আপনিই চালু হইয়া যায়। এটাতে তেল লাগেনা, তেল ছাড়াই চলে অবিরল ,ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভদ্রলোক পারতপক্ষে বৌয়ের কাছে খাবার ও চায়না । এক সকালে খিদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হইয়া নাস্তা চেয়েই বসলো বেচারা ।
"ইয়ে , রুটি টুটি কিছু হবে ?? হলে দাও , খেয়ে বের হই ।
-তোমার লজ্জা করেনা নাস্তা চাও ,হ্যা ?? রাক্ষস হইছ ?? সারাদিন খাই খাই । ভাত খাই , চাল খাই ,কলা খাই । দুই পয়সা কামানোর ও তো যোগ্যতা নাই , আবার খাইতে চায় । বিয়ের পরে কি দিছ আমারে ,হ্যা ?? দিছটা কি ?? কইছিলি তো গাড়ি কিনবি , বাড়ি বানাবি । আর এখন নাস্তা চাস ?? তোর সংসারে যে বইয়া আছি এইটাই তো বেশি ।
"
শুরু হইল মটর । ভদ্রলোক মনে মনে ভাবিলেন , এই মটরের সাথে একখানা ডায়নামো লাগাইয়া দিলেও ঘরে বিদ্যুতের অভাব থাকিত না । উদাস হইয়া জানালা ,যেখান থেকে ভালবাসা পলায়ন করিয়াছিল , ওইদিকে তাকাইয়া ভদ্রলোক একখান দীর্ঘশ্বাস ফেলিলেন । তাহার পরই একখানা অদ্ভুত জিনিস তার দৃষ্টিগোচর হইল -
চারজন লোক একটা লাশ বইছে । লাশ এর খাটিয়ার ঠিক পেছনে একজন ভদ্রলোক , তার হাতে একটা দড়ি , দড়িতে একটা কুকুর বাধা ।
আর তাহার পিছনেই বেশ বড়সড় একটা লম্বা লাইন । ভদ্রলোক অনেক লাশ বহনকারী দল দেখিয়াছেন আগে , কিন্তু এইরকম অদ্ভুত জিনিস আগে কখনো দেখেন নাই । দৌড়াইয়া বাসা থেকিয়া বের হইয়া লাইনের একদম শেষ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন ,
- ভাই , ঘটনা কি ?? লাশটা কার ?? আর আপনারা কেনই বা এভাবে বিশাল লাইন করে যাইতেছেন ??
লোকটি বলিল - সামনে জিজ্ঞাসা করেন , জানতে পারবেন ।
সামনের লোকটিকে জিজ্ঞাসা করা হইল । সেও একই উত্তর দিল।
তার সামনের জনও একই কথা বলিল ।
এইভাবে জিজ্ঞাসা করিতে করিতে লাইনের একদম সামনে আসিয়া কুকুরের মালিকের সাথে দেখা হইল ।
ভাই , কে মারা গেছেন ?? ঘটনা কি ??
-আজ্ঞে , আমার স্ত্রী মারা গেছেন ।
ওহ ,আপনি তো সৌভাগ্যবান দেখছি, তা উনি কিভাবে মারা গেলেন ??
লোকটা বলিলেন - ভাই , আমার বউ অসম্ভব রকম দজ্জাল মহিলা ছিল । সারাদিন আমার সাথে খ্যাচ খ্যাচ করত ।
আমি অনেক শান্ত মানুষ দেখেই হজম করতাম সব । গত ২৪ টা বছর আমার এভাবেই গেছে ।
আরে ভাই , কন কি ?? আমারও তো একই কেস । তয় আমারটা এখনো মরে নাই । আচ্ছা ,তারপর ??
তারপর গত তিন দিন আগে আমি এই কুকুরটা কিনে আনি ।
হম , তারপর ??
বউ এর চিৎকার শুনে আমি তো অভ্যস্ত। কিন্তু বেচারা এই কুকুরটা ৩ দিনেই পাগল হয়ে গেল । পাগল হয়ে বউ কে একটা কামড় দিল । আর ওই এক কামড়েই বউ পরপার ।
আরে ভাই কি কন ?!!! এই কুত্তার পাগল হইতে ৩ দিন লাগছে ?? আমারে ১০ মিনিটের জন্য কুত্তাডা একটু দ্যান ।
আমার বৌয়ের কথা হুনলে ১০ মিনিটেই কাহিনী হইয়া যাইব । এট্টূ উপকার করেন ভাই ।
আরে ভাই , যেই লোকেরা এ ঘটনা শুনছে সবাই তো কুত্তা টারে নিতে চায় । ওই যে পিছে লাইন দেখতাছেন না , ওইটা কুকুর নেওয়ার লাইন । যান , যেয়ে লাইনে দাঁড়ান ।
পৃথিবী কণ্টকময় তা জানতাম । এখন জানি পৃথিবী ক্যাচালময় ও বটে !!! কথায় আছে , উঠন্ত মুলো পত্তনেই চেনা যায় । কিন্তু যে পত্তন দেখতেছি ,তাতে ভবিষ্যতে যে কি অপেক্ষা করতেছে আমার জন্য ,আল্লাহ মালুম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।