ভাগশেষের অবশিষ্ট / facebook.com/adnan.tapu
মানুষ জন্ম গ্রহন করার পর কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি খোঁজে?? সম্ভবত সুখ ! এএক এমন বায়বীয় জিনিস না তার সংজ্ঞা কেউ ঠিকমতো দিতে পারে, না পারে সেটাকে কেউঠিকঠাক উপভোগ করতে, কেউ তো আবার জন্ম থেকেই জ্বলছে! তবু সুখকে নিয়ে আমাদের আশা,স্বপ্ন, চিন্তা – ভাবনা গবেষণা কিংবা সুখী হওয়ার চেষ্টা কোনওটারই শেষ নেই । এমনকি এই আমিও নানাবিধ সংখ্যা, বিশ্বাস অবিশ্বাস,যুক্তি পাল্টা যুক্তির সময়ে কমপিউটারের সামনে বসে সুখ বিষয়ক আর্টিকেল পড়ছি!
ওয়ার্ল্ড অবজারভার অনলাইনে একটা আর্টিকেল দেখলাম, সুখী হাওয়ার জন্য কি কি বিষয় ত্যাগ করতে হবে! পড়ে যথেষ্টই বিনোদিত হলাম। তাই আমার মতো যারা সুখ খুঁজেখুঁজে হয়রান হচ্ছেন তাদের জন্য অনুবাদ করলাম আর্টিকেলখানা । তবে যেহেতু আমার ইংরেজি ভাষা জ্ঞান খুবই খারাপ আর অনুবাদক হিসেবেও অনভিজ্ঞ তাই মুল আর্টিকেলের বারোটা বাজিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো অনুবাদ করেছি। এতে মনে হয় মুল লেখক কিছু মনে করবেননা , কারন তিনি নিজেই বলেছেন অন্যকারও নয় নিজের ইচ্ছে মতো যা খুশী তাই করো !
তালগাছ সবসময় আপনার নয়
আমারা অনেকেই আছি যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চাইনা ।
এমনকি কোনও সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়ে হলেও বলি, বিচার মানি কিন্তু তাল গাছ আমার । কিন্তু এমন মনোভাব অনেক সময় প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং কষ্টের কারন হয়ে থাকে । এরচেয়ে বরং এমন পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে প্রশ্ন করুন “আপনাকে সঠিক হতেই হবে?? আপনার অহংবোধ কি সত্যিই এতো গুরুত্বপূর্ণ??” হয়তো আপনার ছোট্ট মেনে নেওয়াই পরিবর্তন করতে পারে অনেক কিছু ।
শাসনতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন
সবার উপর, সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রনপ্রতিষ্ঠা করার মানসিকতা দূর করুন । সবারই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে ।
আছে নিজস্ব চিন্তা ভাবনা। সেসব নিজের ইচ্ছে মতো পরিবর্তন করার চেষ্টা না করে বরং তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দিন । এমনকি আশেপাশের ঘটনাগুলোকেও ইচ্ছে মতো ঘটতে দিন । দেখবেন কত সহজে নিজেকে আলাদা আর স্বাধীন মনে হচ্ছে!
দোষারোপ করা বন্ধ করুন
যেকোনো ভুলের জন্য যদি অন্যকে দোষারোপ না করি তাহলে নিজেদের মাতা মেরীর মতো নিস্পাপ প্রমান করবো কিভাবে?? কিন্তু এই দোষারোপের খেলাই প্রবল বিষণ্ণতার জন্ম দেয় । এরচেয়ে অন্যকে দোষারোপ বন্ধ করে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিন।
হৃদয়ের কথা শোনাকে না বলুন
হিন্দি সিনেমাতে সবসময়ই বলা হয়, দিল কি বাত শুনো । সংলাপ হিসেবে কথাটা শুনতে ভালই লাগে । কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ মানুষের মনই দুর্বল এবং সেই দুর্বল মন মানুষকে পিছন দিকে নিয়ে যায় । আপনার মন আপনাকে যতটা খারাপ বলে আপনি অবশ্যই তার চেয়ে ভালো । সুতরাং মনের কথা শোনা বন্ধ করুন যদি তা না বোধক হয়!
ভেঙ্গে ফেলুন সীমাবদ্ধতার শিকল
আমরা বেশিরভাগ সময়ই নিজেদের ব্যস্ত রাখি কি আমরা পারবো আর কি আমরা পারবো না তাই নিয়ে ।
আমরা পারা এবং না পারা নিয়ে নিজেদের একটা বৃত্তের মধ্যে আটকে ফেলি । এখন থেকে ভেঙ্গে ফেলুন এই সীমাবদ্ধতার বৃত্ত । বৃত্তের বাইরে পা রাখুন, উড়িয়ে দিন নিজেকে এবং নতুন করে আবিস্কার করুন নিজের ক্ষমতা ।
অভিযোগ করা বন্ধ করুন
আমাদের আর কিছুর অভাব থাক বা না থাক অভিযোগের অন্তত শেষ নেই । মানুষ, পরিস্থিতি, ঘটনা সব কিছু নিয়েই আমাদের অসংখ্য অভিযোগ ।
অথচ সত্যি কথাটা হলো কেউই বা কোনও কিছুই আমাদের অসুখী করতে পারে না যদি না আমরা তাদের সে সুযোগ দেই । মনে রাখতে হবে পরিস্থিতি আমাদের আঘাত করে না, আঘাত করে তার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি । কখনই নিজের বাস্তব গঠনমূলক এবং হ্যাঁবোধক চিন্তাকে অবহেলা করবেন না ।
সমালোচনা বন্ধ করুন
আমাদের সবচেয়ে পছন্দের অবসর বিনোদন কি?? নিশ্চয়ই সমালোচনা করা । কিন্তু এইবিলাসিতা আমাদের ঈর্ষান্বিত করে কখনও আমাদের জন্য তা হতাশার কারন হয় ।
আমরা সবাইই আলাদা আবার সবাইই ভিতরে ভিতরে এক । আমরা সবাই সুখী হতে চাই । সবাই ভালোবাসা চাই । ভালবাসতে চাই । আমরা সবাইই চাই কেউ আমাদের বুঝুক।
আমাদের সবারই কিছু চাওয়া আছে । তাই সমালোচনা নয় ভালবাসা দিয়ে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করুন ।
অন্যকে মুগ্ধ করার চেষ্টা ছেড়ে দিন –
আমরা অন্য কাউকে মুগ্ধ করার জন্য এমন কিছু করার চেষ্টা করি কিংবা এমন কিছুহতে চাই যা আমরা নই । এই করতে যেয়ে যে ব্যর্থতা আসে তা আমাদের ডুবিয়ে দেয় আরও গভীর হতাশায় । আসলে এভাবে হয়না ।
নিজেকে অন্যকিছুর মতো করে উপস্থাপন করতে যেয়ে নিজেকে হারায়ে খুজি সর্বক্ষণ । এরচেয়ে ছিঁড়ে ফেলুন মুখোশ । যে মুহূর্তে আপনি নিজেকে গ্রহনকরে নিবেন, যখনই নিজেকে প্রকাশ করবেন নিজের মতো করে তখন তারাই আপনাকে খুজে নিবে যারা আসলেই আপনাকে চায় ।
পরিবর্তিত হতে শিখুন
পরিবর্তন একটি চমৎকার বিষয়! পরিবর্তন আমাদের এক পথ থেকে আরেক পথে নিয়ে যায়। সে পরিবর্তন যদি শুভ দিকে হয় তাহলে আমাদের সবারই উচিৎ সে তাকে স্বাগত জানানো।
অনুসরন করুন নিজের সুখকে এবং আলিঙ্গন করুন পরিবর্তনকে ।
তকমা (ট্যাগ) লাগানো বন্ধ করুন
কোনও কিছু বা কারও বিষয়ে পরিপূর্ণ না জেনেই তাতে তকমা দেওয়া বন্ধ করুন । যদি তা বিদঘুটে হয় কিংবা আপনার বোঝার বাহিরে তাহলে তা জানার চেষ্টা করুন, আপনার চিন্তা ভাবনাকে মুক্ত করে দিন । খুব অল্প করেও হলেও । মানুষের মন তখনই কাজ করে যখনতা মুক্ত থাকে!
ভয়কে উড়িয়ে দিন
ভয় একধরনের বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয় ।
এই বিভ্রম মানুষের নিজেরই তৈরি । এটা মনে ভিতরে পুষে রাখা একটা পশু । মনের এই বিভ্রমিত পশুকে হত্যা করুন দেখবেন বাহিরটা হয়েছে মুক্ত আর স্বাধীন ।
অজুহাত দেওয়া বন্ধ করুন
অজুহাত আমাদের প্রিয় একটা বিষয় । আমরা আমাদের সব অকাজের পিছনেই অজুহাত দাঁড়করায় যেখানে ৯৯ % ভাগ সময়েই দেখা যায় যেটা সত্য নয় ।
আমরা নিজেদের উন্নতি করার চেয়ে অজুহাতেই সময় দেই বেশি কারন তা সহজ । তাই এখুনি আপনার সব অজুহাতকে বস্তাবন্দী করুন এবং ছুঁড়ে ফেলুন আস্তাকুরে । কেননা আস্তাকুরই অজুহাতের প্রকৃত অবস্থান।
অতীতের সঙ্গ ত্যাগ করুন
সম্ভবত সবগুলো কাজের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কঠিন । এটিই কঠিন যখন আপনার অতীত আপনার বর্তমানের চেয়ে সুন্দর দেখায় এবং ভবিষ্যৎ হাজির হয় আতংক নিয়ে ।
কিন্তু এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে আপনি অতিতে আর ফিরতে পারবেন না । এও স্বীকার করতে হবে যে, মানুষের বাস বর্তমানে এবং এখন যে আতঙ্কজনক ভবিষ্যৎ তা বর্তমানেরই অবহেলার ফল । এইভাবেও বলা যায়, আমাদের বর্তমান দুর্দশাও অতীতের কর্মফল । সুতরাং নিজেকে ধোঁকাদেওয়া বন্ধ করুন। বর্তমানকে নিয়ে থাকুন এবং উপভোগ করুন ।
শেষপর্যন্ত জীবন কোনও লক্ষ্যহীন যাত্রা নয় । তাই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিস্কার চিন্তা করুন, সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করুন ।
ত্যাগ করুন অপরের ইচ্ছানুসারে জীবনযাপন
অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা প্রকৃত পক্ষে সেই জীবন যাপন করে যাঅন্যান্যরা তার জন্য নির্ধারণ করে দেয় । মানুষ সেই জীবন যাপন করে যে জীবন তার পিতামাতা পরিবার শিক্ষক তার বন্ধুরা মিডিয়া সরকার তার জন্য ভেবে রাখে। সুতরাং সে নিজের মনের কথা শুনতে ভুলে যায় , ভুলে যায় নিজের কি চাওয়া ।
সে সবসময় ব্যস্ত থাকে কিভাবে সবাইকে খুশী রাখা যায় । তারা ভুলে যায় কিসে তারা সুখী হয় কি তাদের চাহিদা কি তাদের প্রয়োজন। মনে রাখবেন, আপনার একটাই জীবন । নিজে তা যাপন করুন । অন্যদের নির্ধারণ করে দেওয়া জীবন নয় নিজের যেটা ভালো লাগবে তাই করুন ।
মুল আর্টিকেল শেষ । এইবার আমার কথা। যারা সবকটা পয়েন্ট পরেছেন তাদের কি আদৌ মনে আছে কি কি পড়েছেন?? কিংবা কথাগুলো কি আপনাদের একেবারে অজানা?? কিংবা একবারও কি ভেবেছেন "এই কাজগুলো আজ থেকেই করবো "?? সবপ্রশ্নের উত্তর না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি । কারন আমরা সারাক্ষণ সুখ খুঁজে বেরালেও সুখের চেয়ে দুখেই আমাদের থাকতে ইচ্ছে করে । সারাক্ষণ সুখ সুখ করলেও সবাইই আসলে দুঃখ বিলাসী ।
সেটাও কিন্তু খারাপ না । মনীষীরা তো বলেই গেছেন, সকল মহৎ সৃষ্টির পিছনেই রয়েছে গভীর বেদনাবোধ । এমনকি এই আর্টিকেল লেখকও নিশ্চয়ই বেদনাতে ছিলেন বলেই এমনএকটা আর্টিকেল লিখেছেন । তাই আসুন আমরা দুঃখে থাকি আর জন্ম দেই নিত্য নতুন মহত্ত্বের ।
ওহে ভুত তুমি কিলাতেই থাকো ।
লং লিভ স্যাডনেস !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।