আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন নূপুরের সংগ্রামী জীবন



আন্তপ্রত্যয় অধম্য সাহসী ও সংগ্রামী এক নারীর নাম নূপুর। বয়স ১৪ বছর। দেখতে সুন্দর, গোলগাল ফর্সা। শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। নূপুর ছাত্রী হিসেবে ভাল।

কাসে ২ রোল তার। নূপুর সদালাপী ও নম্রভদ্র সভাবের মেয়ে। তার পিতার অবস্থা তত ভাল না হলেও মোটামুটিভাবে সংসার চলে। নূপুরের বাবার নাম রহমান গাজী। রহমান গাজী ছোট একটি মুদির দোকান দিয়ে ব্যবসা করে সংসার চালায়।

নূপুরের দু’মা। নূপুরের মা হল ছোট। নূপুরের বাবা ৮ বছর বিয়ে করার পরও বড় বৌয়ের কোন সন্তান না হওয়ায় নূপুরের মাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘরে আনে। বড় মায়ের বাবার বাড়ী যশোর জেলার সাদকা গ্রামে। আর নূপুরের মায়ের বাবার বাড়ী খুলনা শহরে।

নূপুরের এক ভাই আছে। নাম লতিফ। লতিফ আইএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। সংসারের অভাব অনাটন বুঝতে পেরে লতিফ একদিন চাকরির জন্য বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে যোগ দিতে পরীা দেওয়ার জন্য খুলনায় আসে। এখানে পরীায় উত্তীর্ণ হয় এবং চাকরিতে যোগদান করে।

এর মধ্যে নূপুরের বাবার মুদির দোকানে একদিন চুরি হয়। দোকানের সব মালামাল ও টাকা পয়সা চোরেরা নিয়ে যায়। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নূপুরের বাবা। হতাশাগ্রস্ত হয়ে বন্ধুদের সাথে মিশতে থাকে। এভাবে বন্ধুদের সাথে মিশতে মিশতে সে এখন পুরু নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

নূপুর এবার নবম শ্রেণী হতে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার সামনে বিশাল চাপ। জীবনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সামনে এসএসসি পরীা। রাত জেগে পড়া আর পড়া।

তার ইচ্ছা এসএসসি পরায় ভাল ফল করা। তারপর আইএ ভর্তি হবে। আইএ পাশ করে ভাইয়ের মত একটা চাকরী করবে। তখন আর তাদের সংসারে কোন অভাব থাকবে না। থাকবে না কোন দুঃখ কষ্ট।

বাড়ির সবাই আবার আনন্দ করবে। একসাথে নানার বাড়ি বেড়াতে যাবে। এসব চিন্তা সবসময় নূপুরের কচি মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। এরই মধ্যে নূপুরের জীবনে নেমে আসে মহা বিপদ। নূপুরের বড় মা’য়ের চাচাতো ভাই নাজিম।

সে কলারোয়া কলেজে ডিগ্রী পড়ে। সে নূপুরকে বিয়ে করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছে। নূপুরের সাথে নাজিমের সম্পর্ক মামা ভাগ্নের। নূপুর তাকে মামা হিসেবে সম্মান করে এবং কথাও বলে। নাজিম প্রায় কলেজ শেষে নূপুরদের বাসায় আসে।

কখনও কখনও একদিন দু’দিনও থাকে। নূপুর তার লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে নূপুর মামার কাছ থেকে বিভিন্ন অংক, ইংরেজীসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে নিত। এই সুযোগটা সে গ্রহণ করে এক সময় সুযোগ বুঝে নাজিম নূপুরকে তার মনের কথা বলে ফেলল। নূপুর মামার কাছ থেকে এমন কথা শুনে ভিষণ লজ্জাবোধ করল।

এরপর থেকে সে আর নাজিমের কাছে কোন অংক বা সমস্যা দেখিয়ৈ নিতে যেত না। নাজিমকে নূপুর সব সময় এড়িয়ে চলত। নূপুর নাজিমকে এড়িয়ে চললেও কি হবে নাজিম প্রায় নূপুরের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলত। মাঝে মধ্যে নূপুরের পড়ার ঘরে যেয়ে বসত। নূপুর তাকে দেখে কখনও চলে আসত আবার কখনও বসে বসে নিজ মনে লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকত।

নাজিমের বিষয়টি একদিন তার বড় মা রহমান গাজীকে বলল। রহমান গাজী প্রথমে রাজি না হলেও বউ’র বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে শেষমেষ রাজি হল। নাজিম বলেছে সে নূপুরকে বিয়ে করে তাদের বাসায় থাকবে এবং ভোমরা বন্দরে ব্যবসা করবে। আর তখন রহমান গাজীকে সংসার চালানোর জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না। সে শুধু সকালে উঠে নাস্তা করবে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাবে আর বাড়ী এসে খাবে।

একদিন ছুটির দিন, নূপুর তার রুমে পড়ছে। হঠাৎ নূপুরের বাবা তার পাশে এসে বসল। তার মাথায় হাত বুলাতে লাগল। নূপুর কিছু বুঝতে পারল না। সে ভাবতে লাগল যে বাবা মোটেও যার কোন খোজ খবর নেয় না সে আজ এত আদর যতœ করছে।

আনন্দে তার চোখে জল এসে গেল। কিছুণ পরে বাবা নাজিমের সাথে তার বিয়ে কথার প্রসঙ্গ তুলল। তখন নূপুরের ফর্সা মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কান গরম হতে লাগল। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে লাগল।

সে মনে মনে ভাবতে লাগল বাবাও তাহলে এমন একটা প্রস্তাব তার জন্য আনতে পারল। সে সরাসরি নাকোজ না করে বাবাকে পরীা পর্যন্ত তাকে সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল। বাবা তার কোন কথা শুনতে নারাজ। নূপুর নিরুপায় হয়ে মায়ের সরাপন্ন হল। কিন্তু মা ও বাবার কথার অবাধ্য হতে পারছে না।

নাজিমও উঠেপড়ে লেগেছে সে এমাসেই তাকে বিয়ে করবে। অনেক কিছুর ঘটনা ঘটার পরে নূপুরের মনের বিরুদ্ধে তার বিয়ে ঠিক করা হল। এদিকে নূপুর তার মামা বাড়ীর এক ছেলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মন দেয়া নেয়া করে আসছে। ছেলেটার নাম কবির। সে আইএ পড়ে।

সম্পর্কে মামাতো ভাই। সেও নূপুরকে জীবনের চাইতে ভালবাসে। নূপুরও তাকে একইভাবে ভালবাসে। নূপুরের বিয়ের কথা শুনে কবির প্রায় পাগল হয়ে গেছে। নূপুরের বিয়ের দিন কবির নূপুরের সাথে শেষ দেখা করতে আসে, কিন্তু তা হল না।

দেখা করার পরিবর্তে জীবনে জুটল নির্মম প্রহর। নুপুরের বাবার প্রহরে কবিরের কপাল কেটে রক্তে লাল হয়ে গেল নূপুরের বাবার বাড়ী। এর মধ্যে নূপুরের বিয়ে সম্পর্ন হল। নূপুরকে নিয়ে নাজিম সাকদা চলে গেল। নূপুর বাসার ঘরে নাজিমকে স্বামী হিসেবে তার অধিকার আদায় করতে দিলনা।

নাজিমও ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবে তাদের বিবাহীত জীবন কাটতে লাগল প্রায় মাস তিনিক। সামনে নূপুরের এসএসসি পরীা। নূপুর লেখা পড়া নিয়ে মহাব্যস্ত। নূপুরের আচারণের কথা নাজিম তার বড় মাকে বলেছে।

বড় মা নাজিমকে শান্তনা দিয়ে বলেছে সে ছোট তাই সে এমন করছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। নূপুরের এসএসসি পরীা শুরু হলো। সে পরীা দিচ্ছে কিন্তু পরীা ভাল হচ্ছে না। পরীা শেষ।

নূপুর ভাবল এবার একটু মনের শান্তিতে ঘুরে বেড়াব। কিন্তু তা হল না। তার মতলববাজ স্বামী ফন্দি আটল যে, বাবা অসুস্থ্য সে নূপুরকে দেখতে চেয়েছে। নূপুরের যাওয়ার ইচ্ছ না থাকা সত্ত্বেও তার বাবা মায়ের অনুরোধে অসুস্থ শ্বশুরকে দেখতে গেল। এসে দেখতে পেল আসলে শ্বশুর অসুস্থ্য না।

এতে তার মন আরো খারাপ হল। কয়েকদিন সংসার করতে করতে নূপুর নাজিমকে স্বামী হিসেবে মেনে নিল। সে ভাবল জীবনে যা ঘটে গেছে তাকে অবিশ্বাস না করে বরং গ্রহণ করে নেই। এভাবে কাটল প্রায় দু’বছর। নাজিম ভোমরা ইনপোটে ব্যবসা শুরু করল।

আয়ও ভাল হয়। সুখ ও শান্তি তাদের মধ্যে বিরাজ করতে লাগল। এর মধ্যে তাদের ঘর আলো করে জন্ম নিল কনক নামের এক ফুটফুটি পুত্র সন্তান। কনক জন্ম নেয়ার পর নাজিমের ব্যবসায়ে আরও বেশি সাফল্য আসতে শুরু করল। সন্তান আর স্বামী নিয়ে নূপুরের জীবন বেশ সুখ ও শান্তিতে কাটতে থাকে।

কিন্তু সে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নূপুরের বাবা বিভিন্ন সময়ে নাজিমের নিকট থেকে টাকা নিয়ে নেশা করে নষ্ট করেছে। এখন নাজিম টাকার অভাবে নিজের ব্যবসা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার মত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নাজিম নূপুরের বাবাকে টাকার জন্য চাপ দিতে লাগল। আর এতে করে নুপুরের জীবনের সব সুখ শান্তি নষ্ট হতে লাগল।

নাজিমও অনেকের নিকট ঋণদায়িক হয়ে পড়েছে। নাজিম মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। সে এখন আর নূপুরের বাবার বাড়িতে না থেকে বাড়িতে থাকে। হঠাৎ একদিন নাজিম নূপুরকে বলল শোন আমিতো ঋণ হয়ে গেছি। আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই।

আমার একবন্ধু ইতালিতে থাকে সে আমাকে ওখানে যাওয়ার জন্য বলছে। যেতে গেলে প্রায় তিন লাখ টাকা লাগবে। তুমি কোথাও হতে কিছু টাকা জোগাড় কর আর আমি কিছু টাকা জোগাড় করি। আমি বিদেশে যেয়ে টাকা পাঠাব। তখন তুমি সেই টাকা তাদের দিয়ে দিও।

নূপুর প্রথমে রাজি না হলেও স্বামীর পিড়াপিড়িতে এবং সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে পরে রাজি হল। নূপুর তার নামে ক্রয় করা রাজি না হলেও স্বামীর পিড়াপিড়িতে এবং সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে পরে রাজি হল। নূপুর তার নামে ক্রয় করা দশ কাটা জমি বিক্রয় করে দেড় লাখ এবং বিভিন্ন জনের নিকট হতে আরো একলাখ মোট আড়াই লাখ টাকা দিয়ে নাজিমকে ইতালি পাঠাল। নাজিম প্রথম ৩/৪ মাস নূপুরের সাথে ফোনে মাঝে মধ্যে কথা বলত। কনকের খোজ খবর নিত।

প্রায় হাজার বিষেক টাকাও পাঠাল। কিন্তু তার পর হতে সে আর কোন যোগাযোগ করে না। তার ফোনে রিং করলে কেটে দেয় বা বন্ধ করে রাখে। এখন নূপুর নাজিমের কোন খোজ জানেনা। নাজিমও নুপুরের বা সন্তান কনকের কোন খোজ নেয় না।

এদিকে পাওনাদার’রা প্রতিনিয়ত নূপুরের নিকট পাওনা চাইতে আসছে। নূপুর এ মাসে না ওমাসে দিবে বলে বার বার ওয়াদা নিচ্ছে। অথচ নাজিম কোন টাকা পাঠাচ্ছে না। এর মধ্যে নাজিম আবার পাওনাদারদের নিকট ফোন করে বলছে সে তাদের টাকা নূপুরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। পাওনাদাররা নূপুরকে বিভিন্নভাবে অপমান করতে লাগল।

অবশেষে নূপুরের বাবার সামান্য জমি ছিল তাই বিক্রি করে পাওনাদারদের পাওনা মিটাল নূপুর। পাওনাদারদের হাত হতে রা পেল নূপুর ঠিকই কিন্তু সংসার চালাবে কিভাবে। তাছাড়া তার সন্তান কনকের বয়স এখন প্রায় ৪ বছর। তাকেও বা সে কি করে লেখাপড়া শিখাবে। এসব চিন্তা সবসময় তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগে।

কিন্তু নূপুর বিপদে সাহস হারানোর মত মেয়ে নয়। সে বিপদে তার হাল শক্ত হস্তে ধরার মহা চেষ্টা করছে। খুজে বেড়াছে তীর হারানো তীর কিভাবে খুজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে সে অনেক চিন্তা ভাবনা করে শহরের এক প্রান্তে একটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে একটি বিউটি পার্লার ও হস্তশিল্পী’র কাজ শুরু করে। প্রথমে একা একা কাজ শুরু করে।

আর এর মধ্যে নিয়ে নূপুর তার জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তার ল একটাই সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সন্তান কনককে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলা। এই দৃঢ়প্রত্যয় নিযে তার সামনে পথ চলা। প্রথম দিকে তার পার্লারে এবং হস্তশিল্পী’র কাজ করে ঘরভাড়া দিয়ে সামান্য কিছু থাকত। এখন নূপুরের পার্লার ও হস্তশিল্পী’র কাজে ২/৩ জন লোক কাজ করে।

এখান হতে প্রতিমাসে তার সবকিছু বাদ দিয়ে প্রায় ৮/১০ হাজার টাকার মত আয় হয়। এ আয় দিয়ে বাবার হাত খরচ দিয়ে থাকে। নূপুর তার সন্তানের লেখাপড়ার খরচের জন্য প্রতিমাসে একহাজার টাকা করে ১০ বছর মেয়াদি একটি বীমা করেছে। কনকের বয়স এখন প্রায় ৫ বছর। তার স্বপ্ন আগামী বছর হতে কনককে শহরে নামকরা কোন কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ভর্তি করে দেবে।

নুপুর এখন একটাই স্বপ্ন নিজের জীবনে সুখ শান্তি না চিন্তা করে কনককে সে সমাজে মানুষের মত করে গড়ে তুলবে। সে চায় তার সন্তান যেন একদিন সমাজে মাথা উচু করে দাড়াতে পারে এটাই তার প্রত্যাশা। আমাদের সমাজে পারিবারিক কলাহলে এমন হাজারও নূপুরের জীবনে অকালে নেমে আসছে ঘোরআমাবষ্য। নূপুর অন্য সবার চাইতে ভিন্ন। নূপুরের প্রত্যাশা বিপদে যেন কেউ সাহস না হারায়।

সবাই যেন তার মত করে জীবন যুদ্ধে হার না মেনে সংগ্রামী জীবনে ঝাপিয়ে পড়ে নূপুরের কণ্ঠে এই দৃঢ় প্রত্যাশা। Build up your knowledge on information technology. Visit: http://www.netcomm1.blogspot.com A credit card : http://credit-cards-banks.blogspot.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.