আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাফল্যে মনের শক্তি, একজন বাবা আম্বেদকর এবং ...

আলোকিত জীবনের একজন সহযাত্রী

অস্পৃশ্য মাহার সম্প্রদায়ের পিতামাতার ১৪ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন আম্বেদকর। পারিবারিক নাম ভীমরাও। বাল্যকাল বা স্কুল জীবন থেকে প্রতি পদেক্ষেপে যেভাবে তিনি সামাজিক বঞ্চনা, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হয়েছিলেন তখন থেকে তাঁর মধ্যে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবার স্বপ্ন জাগ্রত হয়েছিলো। তাঁর জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাগুলো তাঁকে অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে শক্তি যুগিয়েছে। অস্পৃশ্য হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়।

এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চ বর্ণের দপ্তরীটি ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি খাওয়ার অনুমতিটুকুও ছিলো না তার। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গারোয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো অসপৃশ্য হয়ে গাড়িতে ওঠার অপরাধে। একদিকে পারিবারিক অসুবিধা অন্যদিকে স্কুলেও বর্ণহিন্দু সহপাঠি ও শিকদের কাছ থেকে লাঞ্ছনা ও বিষোদ্গার সত্ত্বেও ১৯০৭ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সে সময়কালে একজন অস্পৃশ্য মাহার সম্প্রদায়ের ছেলের প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করা ছিলো অকল্পনীয় ব্যাপার।

বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলফিনস্টোন কলেজে আইএ ক্লাশে আম্বেদকরই হলেন ভারতবর্ষের প্রথম কোন অস্পৃশ্য ছাত্র। পরবর্তীতে অস্পৃশ্য মেধাবী ছাত্র হিসেবে আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য গমন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মানববিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান ও অর্থনীতিকে পাঠের বিষয় করে তিনি কঠোরভাবে পড়াশুনায় নিমগ্ন হলেন। ১৯১৫ সালে ‘Ancient Indian Commerce’ বিষয়ে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ১৯১৬ সালের জুন মাসে ‘National Dividend of India- a Historic and Analytical Study’ বিষয়ে তাঁর লিখিত থিসিসের জন্য ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। ১৯২০ সালের জুলাই মাসে ‘London School of Economics and Political Science’ কলেজে ভর্তি হন এবং তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘Provincial Decentralisation of Imperial Finance in British India’ বিষয়ের উপর M.Sc ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯২৩ সালে ‘The Problem of the Rupee’ নামক প্রবন্ধের উপর গবেষণা কাজ চালিয়ে D.Sc উপাধি লাভ করেন। এরপর লন্ডনে ওকালতি শুরু করেন এবং সেখান থেকে Bar-at-Law ডিগ্রী লাভ করেন। দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সমপ্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যা অর্জন করে সবার সপ্রশংস সমর্থন।

বাবা আম্বেদকর নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম, মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্যে। আপনার অবস্থা নিশ্চয়ই বাবা আম্বেদকরের চেয়ে খারাপ নয়। তাহলে আপনি কেন পারবেন না ? আর পৃথিবীতে শতকরা সফল মানুষ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে নি। আসলে সুবিধা ভোগীদের চেয়ে সুবিধা বঞ্চিতদের লড়াই করে জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলেন, mind is the leader of energy. Where mind goes energy flows. মনের শক্তিকে যে বিশ্বাস করতে পারে, অনুভব করতে পারে এবং বিশ্বাস করতে পারে তার পক্ষে যুক্তিসঙ্গত প্রতিটা কাজ বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.